দুবাইয়ের রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে দেশে ফিরেছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি। এরই মধ্যে ওই বৈঠক নিয়ে নানা রকম কানাকানি চলছে। বলা হচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে দেশে ফেরানোর জন্যই ওই রুদ্ধদ্বার বৈঠক। কেউ কেউ একে গোপন বৈঠক হিসেবেও অভিহিত করছেন। তবে সবচেয়ে বড় শব্দবোমা ব্যবহার করেছেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং পাকিস্তান মুসলিম লীগ নওয়াজের নেতা মিয়া জাভেদ। তিনি বলেছেন চতুর্থ মেয়াদের জন্য প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন নওয়াজ। এজন্য আসন্ন নির্বাচনে পাকিস্তান মুসলিম লীগের জোট থেকে তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বুধবার মডেল টাউন অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, এর আগে পাকিস্তান থেকে ৮ ঘণ্টার দূরত্বে ছিলেন নওয়াজ শরীফ। কিন্তু এখন তিনি অবস্থান করছেন আড়াই ঘন্টার দূরত্বে। তিনি আরো বলেছেন, নওয়াজ শরীফ দেশে ফিরলে দেশ সমৃদ্ধ হবে । তিনি আরো জানান নওয়াজ শরীফের অনুরোধে বিদেশীরা বিশেষ করে বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো পাকিস্তানে বিনিয়োগ করছে।
বিজ্ঞাপন
কারণ নওয়াজ শরীফ চতুর্থ মেয়াদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন এই আস্থায়। সময়মতো পাকিস্তানে অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ। এজন্য তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
ইমরান খানকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে গত ৯ই মে পাকিস্তানে যে সহিংসতা দেখা দিয়েছে সে বিষয়ে তিনি বলেন, দেশের ইতিহাসে এমন ঘটনা আর কখনো দেখা যায়নি। ওই সময় সহিংসতায় পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ সমর্থকরা সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। ভাঙচুর করেছে এবং অগ্নিসংযোগ করেছে। এই ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের শাস্তি দাবি করেন মিয়া জাভেদ ।
কয়েকদিন আগে পাকিস্তানে আইন সংশোধন করে একজন পার্লামেন্টারিনের শাস্তির মেয়াদ অর্থাৎ তাকে অযোগ্য ঘোষণার মেয়াদ সর্বোচ্চ পাঁচ বছর নির্ধারণ করা হয়। এর ফলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ এবং জাহাঙ্গীর খান তারিনের রাজনীতিতে ফেরার পথ সুগম হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। এই আইন পাস হওয়ার পরেই গুঞ্জন উঠেছে নওয়াজ শরীফ দেশে ফিরছেন। একটি দুর্নীতির মামলায় নওয়াজ শরীফকে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট যাবজ্জীবনের জন্য রাজনীতিতে অযোগ্য ঘোষণা করেছে। সংশোধিত আইনটি পাস হওয়ার পরই পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির বিশেষ বৈঠক হলো দুবাইয়ে।
বিশ্লেষকরা বলেন এই বৈঠকের উদ্দেশ্য নওয়াজ শরীফকে দেশে ফেরানো এবং তাকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশগ্রহণ করানো। এর মধ্য দিয়ে তাকে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চলছে। তবে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে ওই বৈঠক হয়েছে ইমরান খান পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের কৌশল নির্ধারণ নিয়ে। বৈঠক শেষে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে বুধবার করাচি পৌঁছেছেন আসিফ আলি জালদারি। তিনি একই সাথে পাকিস্তান পিপলস পার্টির সহ-সভাপতিও। একটি বেসরকারি বিমানে করে তিনি এদিন জিন্না আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
সেখান থেকে চলে যান নওয়াবশাহতে। দুবাইয়ে তিনি তিন দিন অবস্থান করেন। বলা হয় বর্তমান সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার পরে জাতীয় পরিষদের ভেঙে দেয়ার বিষয়ে তাদের আলোচনা হয়েছে। এরপরে দেশে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করা নিয়েও তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সাধারণ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ এবং রাজনৈতিক বিষয়ে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিও।