সাতক্ষীরায় শহীদ আবুল কালামের পিতার মৃত: জামায়াতের শোক

সাতক্ষীরার দেবহাটায় পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ মোঃ আবুল কালামের পিতা আকবর আলী গাজী ইন্তেকাল করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত হয়। সন্ধা ৬টার দিকে দক্ষিন কুলিয়া এলাকার সখিপুরে জানাজা শেষে পারিবারিক কবর স্থানে তাকে দাফন করা হয়। মরহুম আকবর আলী গাজীর ছেলে তৎকালিন দেবহাটা শিবিরের সেক্রেটারী সংগঠনের সদস্য শহীদ মোঃ আবুল কালাম। শহীদ মোঃ আবুল কালামের   মৃত ছিল খুবই মর্মান্তিক। দীর্ঘদিন বাড়ির বাইরে অবস্থান করার পর ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারী দুপুরে মায়ের সাথে দেখা করতে বাড়িতে যায় কালাম ।  মায়ের অনুরোধে দুপুরে খেতে বসে কালাম। খাওয়া অবস্থায় যৌথ বাহিনীর সদস্যরা তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায় । ২৫.১.১৪ সকালে তার মা এবং বোন দেবহাটা থানায় যেয়ে কালামকে সকালের নাস্তাা দেয় । তার গ্রেফতারের বিষয়টি নিয়ে ২৪ জানুয়ারী বিভিন্ন ইলেক্টনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াতে নিউজ প্রকাশ পাই ।

এর পরের ঘটনা ঐ দিনের বিবিসি বাংলার রিপোর্ট পাঠকের উদ্দেশ্যে হুবহু তুলে ধরা হল। শাহনাজ পারভীনের লেখা ২৪ জানুয়ারী ২০১৪, বিবিসি বাংলা, ঢাকা:  বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা সাতক্ষীরার দেবহাটায় যৌথ বাহিনীর অভিযানের সময় দু’জন এবং ঝিনাইদহে একজন জামায়াত ও শিবির কর্মীসহ মোট তিনজন নিহত হয়েছে। পুলিশ বলছে, এরা বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। তবে দেবহাটার জামায়াতের নেতারা বলছেন, জামায়াতকে দমন করতে তাদের কর্মীদের ধরে নিয়ে হত্যা করছে আইন শৃংখলারক্ষাকারী বাহিনী। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করছে স্থানীয় পুলিশ। অন্যদিকে মানবাধিকার কর্মীরা এ ধরনের ঘটনাকে উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেছেন। দেবহাটার পুলিশ বলছে রোববার সকালে সেখানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দু’জন নিহত হয়। দেবহাটা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারক বিশ্বাস জানিয়েছেন, “নিহত ঐ দুজন নানা অভিযোগে আগে থেকেই গ্রেফতার ছিলেন। তাদের নিয়ে সকালে যৌথ বাহিনী এক অভিযানে গেলে জামায়ত শিবিরের কর্মীরা তাদের ছিনিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা চালায় এবং যৌথবাহিনীর উপর বোমা হামলা চালায়।”সে সময় সেই বোমার স্প্লিনটারে ঐ দু’জন নিহত হন বলে মি: বিশ্বাস দাবি করেন। দেবহাটার জামায়াত নেতারা অবশ্য কোন ধরনের বন্দুকযুদ্ধের কথা অস্বীকার করেছেন। দেবহাটা জামায়াতের সেক্রেটারি নুর মোহাম্মদ বলেন, তাদের কর্মীদের ধরে নিয়ে পরে হত্যা করা হচ্ছে। তিনি জানান, “আমরা প্রথমে শুনেছিলাম তাদের নিয়ে অভিযানে যাবে যৌথ বাহিনী কিন্তু পরে শুনি ফজরের আজানের সময় একজনের বাড়ির সামনে তাদের গুলি করে মেরে রেখে গেছে।”বন্দুক যুদ্ধের ব্যাপারে পুলিশের বক্তব্যকে তিনি মিথ্যা বলে মন্তব্য করেন। তিনি আরও দাবি করেন, “ইদানীং যাদের ধরা হচ্ছে তাদের মেরে ফেলার পর পুলিশ বন্দুকযুদ্ধ বলে চালিয়ে দিচ্ছে।”

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে মানবতা-বিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাইদির বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণার পর থেকে সহিংস ঘটনার মধ্যে দিয়ে দিন পার করছে সাতক্ষীরা জেলার অধিবাসীরা। গত মাসের ১৫ তারিখ থেকে সাতক্ষীরার সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে সেখানে অভিযান শুরু করে যৌথবাহিনী। তার পর থেকে এ পর্যন্ত আট জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলাগুলোতে বন্দুকযুদ্ধ বা ধরে নিয়ে হত্যার অভিযোগ সম্পর্কে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক নুর খান লিটন বলেন, “সাম্প্রতিক কালে সাতক্ষীরা বা অন্যান্য অঞ্চলে বন্দুকযুদ্ধ বা ধরে নিয়ে যাওয়ার যেসব কথা আমরা শুনতে পাচ্ছি, সেটা খুবই উদ্বেগজনক এবং এ ধরনের ঘটনা যখন ঘটে বা মানুষ এ বিষয়ে নিয়ে যখন আলাপ করে তা গণতন্ত্রের জন্য খুবই ক্ষতিকর।”

একই দিন দ্যা রির্পোট২৪ ডটকমের রিপোর্টে বলা হয় সাতক্ষীরার দেবহাটায় যৌথবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দুই শিবিরকর্মী নিহত হয়েছেন। রবিবার ভোর সোয়া ৫টায় দেবহাটা উপজেলার নারকেল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- মারুফ হোসেন (২৪) ও আবুল কালাম (২২)। মারুফ দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া গ্রামের মৃত আশরাফুল ইসলামের ছেলে। কালাম একই গ্রামের আকবর আলীর ছেলে।  সাতক্ষীরা পুলিশের মুখপাত্র উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামাল হোসেন জানান, দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু রায়হান হত্যা মামলার আসামি ও শিবিরকর্মী মারুফ হোসেনকে শুক্রবার রাতে গ্রেফতার করে যৌথবাহিনী। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী দেবহাটার কুলিয়া এলাকা থেকে শনিবার সকালে রায়হান হত্যায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী দেবহাটা উপজেলা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি আবুল কালামকেও গ্রেফতার করা হয়। রবিবার ভোরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিজাউল করিমের নেতৃত্বে র‌্যাব, বিজিবি ও পুলিশের সমন্বয়ে যৌথবাহিনী দেবহাটা উপজেলার নারকেল গ্রামে আফগান জিয়ার বাড়ির পাশে অস্ত্র উদ্ধারে যায়। সেখানে আগে থেকে ওতপেতে থাকা শিবিরকর্মীরা যৌথবাহিনীকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ও গুলিবর্ষণ করতে থাকে। যৌথবাহিনী আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি করলে ঘটনাস্থলে ওই দুই শিবিরকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়। সেখান থেকে তাদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। এখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. তৌহিদুজ্জামান তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

শহীদ আবুল কালাম বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ২০৮ তম শহীদ।  গতকাল শহীদ আবুল কালামের পিতার মৃত্যুর খবর সোসাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়লে শোকের ছায়া নেমে আসে গোটা এলাকাতে।  মরহুমের জানাজায় ইমামতি করেন সাতক্ষীরা জামায়াতের আমীর মুহাদ্দিস রবিউল বাশার, ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও খুলনা মহানগর সভাপতি তৌহিদুর রহমান, শিবিরের জেলা সভাপতি ইমামুল ইসলাম, শহর সভাপতি শিমুল হোসেন, জেলা জামায়াতের কর্ম পরিষদ সদস্য মাওলানা রুহুল আমিন, জেলা জামায়াতের কর্ম পরিষদ সদস্য  মোস্তফা আসাদুজ্জামান মুকুল, দেবহাটা উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা অলিউল ইসলাম, উপজেলা সেক্রেটারি মাওলানা এমদাদুল হক, সাতক্ষীরা শহর  জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি  হাবিবুর রহমান, শহর সরকারি সেক্রেটারি আবু তালেব, কুলিয়া ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর মাওলানা আনোয়ারুল ইসলাম প্রমুখ।

মরহুম আকবর আলী গাজীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সাতক্ষীরা জেলা শাখার আমীর মুহাদ্দীস রবিউল বাশার, জেলা সেক্রেটারী মাওলানা আজিজুর রহমান । মঙ্গলবার এক যৌথ শোকবাণীতে তারা  মরহুম আকবর আলী গাজীর আতœার মাগফিরাত কামনা করেন। তারা বলেন মরহুম আকবর আলী গাজী একজন ভাল মানুষ ছিলেন। তার প্রমাণ জানাযাতে শতশত মানুষের অংশ গ্রহণ।  আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাকে ক্ষমা ও রহম করুন এবং তার কবরকে প্রশস্ত করুন। তার গুণাহখাতাগুলোকে ক্ষমা করে দিয়ে নেকিতে পরিণত করুন। তার জীবনের নেক আমলসমূহ কবুল করে তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসে স্থান দান করুন। শোকবাণীতে তার শোক-সন্তপ্ত পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে বলেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাদেরকে এ শোকে ধৈর্য ধারণ করার তাওফিক দান করুন।

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।