সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে না দেওয়ার প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ করেছে জামায়াতে ইসলামী। শুক্রবার বিকালে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি রাজধানীর মতিঝিল থেকে শুরু হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে কমলাপুর রেলস্টেশনের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
সমাবেশে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জামায়াতকে রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে না দিয়ে সরকার বারবার সাংবিধানিক অধিকার হরণ করছে। তিনি বলেন, আজ ৪ আগস্ট সোহরাওয়াদী উদ্যোনে আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ছিল। সভা সমাবেশ করা সংবিধান স্বীকৃতি অধিকার। অথচ সরকার জামায়াতকে তার রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে না দিয়ে বারবার আমাদের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করছে। বিগত ১৫ বছর যাবত জামায়াতকে নির্মূল করার জন্য সরকার সব ধরনের অপচেষ্টা চালিয়েছে।
বুলবুল বলেন, আমরা বলে আসছি, আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কোনো ধরনের সংঘাত, সংঘর্ষে বিশ্বাসী নয়। তারপরেও পুলিশ প্রশাসন সমাবেশে সহযোগিতার পরিবর্তে সংঘাতমুখর পরিবেশের অবতারনা করেছে। এ ধরনের আচরণ অগণতান্ত্রিক, অন্যায় ও অনৈতিক। আমরা তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
জামায়াতের এই নেতা বলেন, আমাদের সঙ্গে বার বার অন্যায় করা হচ্ছে। দেশের সংবিধান বলেছে আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। সরকারি দল যখন তখন অনুমতি ছাড়া সভা সমাবেশ করবে, আর আমাদের বেলায় অনুমতি লাগবে? এই দ্বৈত নীতি কেন? প্রশাসনের এই অগণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার বিরোধী কর্মকান্ড বন্ধ করতে হবে। একইসাথে রাষ্ট্রের আইন শৃংখলা বাহিনীকে কোন দল বিশেষ নয়, দেশের পক্ষে, জনগনের পক্ষে এবং নিরপেক্ষভাবে তাদের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ। কিন্তু সরকার জনগণের দাবি অগ্রাহ্য করে একতরফা নির্বাচনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মুলত সরকার দলন, পীড়ণ, গ্রেফতার, জুলুম, নির্যাতন চালিয়ে আবারো নির্বাচনের নামে প্রহসন করে যেনতেনভাবে আবারো ক্ষমতায় আসতে চায়। দেশের জনগন সরকারের এই ষড়যন্ত্র মেনে নিবে না। আমরা দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলতে চাই অবিলম্বে পদত্যাগ করুন এবং সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে তত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন।
জামায়াতের এই মহানগরী আমির বলেন, বর্তমান সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে দোষী সাব্যস্ত করে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার ষড়যন্ত্রে বিভোর। সরকার জামায়াতকে আগামী নির্বাচনে বাইরে রাখার অপকৌশলের অংশ হিসেবে আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান, নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীকে দীর্ঘ দিন যাবত কারাগারে আটক রেখেছে। উচ্চ আদালত থেকে বারবার জামিন পাওয়া সত্ত্বেও সরকার তাদেরকে মুক্তি দিচ্ছে না।
বুলবুল বলেন, সরকার তাদেরকে মুক্তি না দিয়ে মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। আমরা অবিলম্বে শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ আলেম ওলামাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধার এবং কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি আদায়ে রাজপথে ছিলাম, আছি এবং থাকবো ইনশাআল্লাহ। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই গণআন্দোলন শরিক হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানান।
বিক্ষোভ মিছিলে আরও ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিনের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে দেলওয়ার হোসাইন, কামাল হোসাইন, ড. আব্দুল মান্নান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন, মাওলানা আবু ফাহিম, আবু সাদিক, আব্দুস সালাম, মোবারক হোসাইন, শেখ শরিফ উদ্দিন, আব্দুর রহমান, কামরুল আহসান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম, ঢাকা মহানগরী পূর্বের সভাপতি তাকরিম হাসান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের বিভিন্ন থানা আমির ও সেক্রেটারিবৃন্দ।