বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ও পূর্ণিমার প্রভাবে বৃষ্টিপাত এবং জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে গোটা সুন্দরবন। স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট উঁচু জোয়ারে চার দিন ধরে প্রতিদিন দুবার ডুবছে সুন্দরবনের অধিকাংশ এলাকা।
আজ শুক্রবার দুপুরে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ পরিস্থিতির কথা জানা গেছে। জোয়ারের পানিতে বন বিভাগের স্থাপনার কোনো ক্ষতি না হলেও বন্য প্রাণীর কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত জানাতে পারেনি বন বিভাগ।
জোয়ারে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে তিন থেকে পাঁচ ফুট পর্যন্ত পানি বেড়েছে সুন্দরবনের নদ-নদীগুলোতে। পানির চাপে বনের করমজল, দুবলার চর, জামতলা, হিরণপয়েন্টসহ অধিকাংশ এলাকা ডুবে যাচ্ছে। তবে ভাটার সময় বনের ওই সব এলাকার পানি আবারও নেমে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন।
বেলায়েত হোসেন বলেন, জোয়ারে বনের অধিকাংশ এলাকা পানিতে ডুবে গেলেও সুন্দরবনের জীবজন্তুর তেমন কোনো ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। প্রকৃতিগতভাবেই সুন্দরবনের বড় এলাকা জোয়ারে কিছু প্লাবিত হয়। এখানকার বন্য প্রাণীগুলোর এই প্রকৃতির সঙ্গে অভ্যস্ত। অতি–উঁচু জোয়ারে বনের মধ্যে পানি বাড়ায় বন্য প্রাণীদের কিছু সমস্যা হলেও বড় ধরনের ক্ষতি হবে না বলেই ধারণা তাঁর।
আজ দুপুরের জোয়ারে সুন্দরবনের দুবলা এলাকায় পাঁচ–ছয় ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়ে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলা জেলেপল্লির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ বলেন, স্বাভাবিকের তুলনায় সাগরে জোয়ারের পানি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সুন্দরবনের ভেতরে জোয়ারে কোথাও তিন ফুট, কোথাও এর কম-বেশি তলিয়ে গেছে। ভাটা হলে আবার পানি নেমে যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতি নজরে আসেনি।
ক্যাপশন ২: জোয়ারে ডুবে সুন্দরবনের অধিকাংশ এলাকা। শুক্রবার দুপুরে সুন্দরবনের করমজল এলাকায়
ক্যাপশন ২: জোয়ারে ডুবে সুন্দরবনের অধিকাংশ এলাকা। শুক্রবার দুপুরে সুন্দরবনের করমজল এলাকায়ছবি: প্রথম আলো
বনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল পর্যটন ও বন্য প্রাণী প্রজননকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজাদ কবির বলেন, চার দিন ধরে অস্বাভাবিক জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে করমজল। এ এলাকা বনের অন্য অনেক এলাকা থেকে অপেক্ষাকৃত উঁচু। এর পরও করমজলের রাস্তার ওপর দেড় ফুট পানি উঠেছে আজ। বনের অভ্যন্তর তিন-চার ফুট উচ্চতার জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে। পূর্ণিমায় সাধারণত জোয়ারের পানি বাড়ে উপকূলী এলাকার নদ-নদীতে। এর সঙ্গে একই সময় সাগরে নিম্নচাপ-লঘুচাপের প্রভাবে পানির চাপ আরও বেড়েছে। ফলে সুন্দরবন ছাড়াও উপকূলের সব নদ নদীর পানির চাপ বেশি।
বনের অভ্যন্তরে অস্বাভাবিক পানি বাড়ায় বন্য প্রাণীর আবাসস্থল তলিয়ে ক্ষতির শঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে বন কর্মকর্তারা বলেন, এখন পর্যন্ত বনের কোথাও কোনো প্রাণী ভেসে যাওয়া বা ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
আজাদ কবির বলেন, পানি বাড়লেও বন ও বন্য প্রাণীর ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এখনো পর্যন্ত করমজলে কুমির, কচ্ছপ, হরিণ, বানরসহ অন্যান্য প্রাণী নিরাপদে রয়েছে।
ডিএফও বেলায়েত হোসেন বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়টি মাথায় রেখে বনের অভ্যন্তরের বিভিন্ন জায়গায় উঁচু টিলা তৈরি করার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যাতে বনে পানি বাড়লে বন্য প্রাণীগুলো ওই সময়ে উঁচু টিলায় আশ্রয় নিতে পারে। পুরো সুন্দরবনে এ ধরনের ১২টি টিলা তৈরি করা হবে চলতি অর্থবছরে।
এদিকে চার দিন ধরে স্থানীয় নদ-নদী ও খালের পানি বাড়ায় প্রতিদিন দুবার জোয়ারের সময় প্লাবিত হচ্ছে জেলার অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল। জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে দীর্ঘ সময় ডুবে থাকছে জেলার মোরেলগঞ্জ পৌর বাজারসহ উপজেলার নদীর তীরবর্তী বেশির ভাগ এলাকায়। এ ছাড়া জেলা সদর, মোংলা, রামপাল, শরণখোলা ও কচুয়া উপজেলার বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে জোয়ারের সময়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাগেরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, সাগরের নিম্নচাপ-লঘুচাপের প্রভাবে বৃষ্টিপাত ও পূর্ণিমার উঁচু জোয়ারে পশুর, বলেশ্বর, পানগুছি, ভৈরবসহ জেলার প্রায় সব নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়েছে। জোয়ারের সময় দুই থেকে তিন ফুটের অধিক উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হলেও কোথাও বেড়িবাঁধ ঝুঁকিতে নেই। বৃষ্টি কমলে এবং পূর্ণিমার উচি জোয়ার শেষ হলে আগামী তিন–চার দিনের মধ্যেই পানির চাপ কমে আসবে।