সৌন্দর্য, শালীনতা ও সভ্যতায় হিজাব

বিলাল হোসেন মাহিনী:
নারীরা প্রকৃতিগতভাবেই দুর্বল। কিছু কিছু  পুরুষের পাশবিক আচরণের মুখে তারা অসহায় হয়ে পড়ে। সভ্যতা-সংস্কৃতি, শিক্ষা, প্রগতি আধুনিকতা কোনো কিছুর দোহাই দিয়ে পুরুষের এসব পাশবিকতা দমন করা যায় না। এ জন্যই আল্লাহ পর্দার বিধান দিয়েছেন, যাতে নারীদের ইজ্জত-আব্রু রক্ষা হয়।  কেননা, একজন বখাটে পুরুষ চাইলে জোরজবদস্তি করে একটা মেয়েকে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্থা করতে পারে। তবে, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা-প্রযুক্তি, ব্যবসায়, রাজনীতি ও প্রশাসনসহ নানা ক্ষেত্রে নারী অনেক সময় পুরুষকেও ছাপিয়ে যায়। সেটা বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে। তবুও কর্মক্ষেত্রসহ বিভিন্ন জায়গায় নারীকে অপদস্ত হতে দেখা যায়। বিশেষতঃ যে সকল নারী আল্লাহর ফরজ বিধান হিজাবকে অবজ্ঞা করে সর্বক্ষেত্রে পুরুষের সমান অধিকার দাবি করে তারাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লাঞ্চনার শিকার হন। এমনকি ধর্ষণের ঘটনাও ঘটে।
 মুসলিম নর-নারী সকলের জন্যই হিজাব ফরজ। নারীসমাজের পবিত্রতা রক্ষায় এবং তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে নারীদের পুরো শরীর আবৃত রাখা ফরজ। তবে যা স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ পায় (যেমন : হাতের কবজি থেকে আঙুল পর্যন্ত ও মুখম-ল ইত্যাদি) বিশেষ প্রয়োজনের অনাবৃত রাখা যায়েজ আছে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ঈমানদার নারীকে হিজাব পরতে নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না তাদের দেহের (বুকের) ওপর ফেলে রাখে (সূরা নূর: ৩১)
হিজাব বা পর্দা কোনো প্রথা নয়, যেমনটি অনেক নামধারী প্রগতিশীল নারীবাদীরা মনে করেন। তারা মনে করেন, পর্দা নিজের কাছে বা নিজের মনে। পর্দার বিশেষ কোনো বিধান বা পোশাক নেই। আলেমদের পর্দাবিষয়ক নির্দেশনাকে তারা ধর্মান্ধতা ও বাড়াবাড়ি মনে করেন। যা নিতান্তই অজ্ঞতা ও জ্ঞানপাপ। মানুষ যতো জ্ঞানী হয়, ততোই তার পোশাক-পরিচ্ছদ ভারি হতে থাকে। বাড়তে থাকে শালীনতা ও লজ্জাবোধ। শিক্ষার্থীরা যখন স্নাতক হয়, শিক্ষার একটি পর্যায়ে উপনীত হয়; তখন সেটা উদযাপন করা হয় গায়ে অতিরিক্ত একটি কাপড় (গাউন) চাপিয়ে। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষার্থীদের শরীর থেকে কিছু কাপড় কমিয়ে এটিকে উদযাপন করে না। তাছাড়া যে মেয়েটা ছাত্র জীবনে আঁটসাট পোশাক পরতো, সেই মেয়েটাই যখন শিক্ষক হন বা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেন, তখন তার পোশাকে শালীনতা দেখা যায়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, বিশেষ ক্ষেত্রে পোশাকই মানুষের মর্যাদা ও সম্মানের নির্ণয়ক।
দুনিয়ার যতো উৎসব উদযাপন-আয়োজন দেখা যায়, সেখানে কাপড়ের আধিক্যই চোখে পড়ে; কাপড়ের সংকট নয়। এটি পৃথিবীতে টিকে থাকা রাজ-রাজাদের নানা আয়োজন থেকে নিয়ে সমাজের বিত্তশালী, সম্মানিত, গণ্যমান্য, নেতৃস্থানীয় ও সাধারণ সবার ক্ষেত্রেই। কিন্তু বিনা প্রয়োজনে কাপড়ের বাহুল্য কাম্য নয়। বাহুল্যও কখনো কখনো জীবনকে বিষিয়ে তুলে। জীবনের স্বাছন্দ্যকে সংকীর্ণ গ-িতে আবদ্ধ করে। মানুষের প্রবণতা হলো, তারা বরাবরই বাড়াবাড়িতে কিংবা ছাড়াছাড়িতে লিপ্ত হয়ে জীবনকে বিষাদময় ও বিষাক্ত করে ফেলে। এমনকি আল্লাহ প্রদত্ত ইসলামের সাম্য ও সুন্দর মধ্যপন্থি জীবনব্যবস্থা সামনে থাকার পরও। আমাদের নৈতিক অবক্ষয় এবং পতন-পঁচনের সমাজেও আমরা দেখছি, যেসব নারী পর্দার মধ্যে বেড়ে ওঠে তারা বখাটেদের অত্যাচার-নির্যাতন থেকে বেঁচে থাকে। সাধারণত পর্দানশীন নারীদের উত্ত্যক্ত করতে দুষ্ট-বখাটেরা দ্বিধাবোধ করে, তাদের প্রতি কিছুটা হলেও সম্ভ্রম বোধ বজায় রাখে। কোনো মুসলিম নারীরই উচিত নয়, আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে নিজের জীবনের কল্যাণের উৎস নষ্ট করে দেওয়া।
হিজাবের এ নির্দেশ নবী (সা.) ও তাঁর অনুসারী সকলের জন্য। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে নবী, আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা ও মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের জিলবাবের (চাদরের) কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে, ফলে তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল করুণাময়।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৫৯) আল্লাহ বলেছেন, দৃষ্টিসংযম, পর্দাপালন ও লজ্জাস্থানের হেফাজত দুনিয়া ও আখেরাতের পবিত্রতা-সফলতা অর্জনের উপায়। এ থেকে দূরে সরে গেলে ধ্বংস ও শাস্তি অনিবার্য। আল্লাহ আমাদের সফলতার পথে চলার তৌফিক দান করুন এবং ধ্বংসের পথ থেকে দূরে রাখুন।বিলাল হোসেন মাহিনী
পরীক্ষক : ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ও প্রভাষক : গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদরাসা, অভয়নগর, যশোর।
০১৮৪৩-৯০৪৭৯০

Please follow and like us:

Check Also

ঢাকায় প্রথম মহিলাদের ঈদের জামাত

বাংলায় মুসলমান সমাজে নারীদের প্রতিকূলতার ইতিহাস অনস্বীকার্য। নারীদের শিক্ষা, চিকিৎসা, বিবাহ ও অন্যান্য ব্যাপারে ইসলামের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।