জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় চট্টগ্রামের তিনটি উপজেলায় ছাত্রলীগের ৭ নেতাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া সাঈদীর মৃত্যুর সংবাদ শেয়ার করায় একটি আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হয়।
অব্যাহতি প্রাপ্তরা হলেন- লোহাগাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি গাজী আমজাদ, সহ সভাপতি মো. তাউসিফ, উপ-দপ্তর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুম, সাতকানিয়ার সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাম্মদ তারেক, সন্দ্বীপ উপজেলা শাখার সহ-সম্পাদক মো. রুস্তম, কার্যনির্বাহী সদস্য নুরুল আফছার, পৌরসভা সেক্রেটারি মেহেদী হাসান। আর চাকরি থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত শিক্ষকের নাম ছালেহ মু. যোবায়ের। তিনি জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসার গণিত শিক্ষক।
জানা যায়, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর দিন উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি গাজী আমজাদ হোসেন সাঈদীর ছবি পোস্ট দিয়ে লিখেন, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। রাজনীতির বাইরে, দলের বাইরে উনি আমার প্রিয় একজন ইসলামিক বক্তা। যাঁর ওয়াজ শুনে আমরা বড় হয়েছি।” অন্য দুজনও সাঈদীর ছবি পোস্ট করে শোক প্রকাশ করেন। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে উপজেলা ছাত্রলীগ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাদেরকে অব্যাহতি দেন।
বুধবার (১৬ আগস্ট) উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এ. কে. এম আসিফুর রহমান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এরশাদুর রহমান রিয়াদের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া অসাম্প্রদায়িক চেতনা বহন করা একটি সংগঠন। এই সংগঠনের নীতি-আদর্শ ভুলে নৈতিক অবক্ষয় হওয়া কারো স্থান নেই। সাম্প্রতিক সময়ে নীতি-আদর্শ ও সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে উপজেলার তিনজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।”
এই বিষয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এ কে এম আসিফুর রহমান চৌধুরী বলেন, সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে উপজেলা ছাত্রলীগের ওই তিনজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাঁদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।
এদিকে হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে ইন্না-লিল্লাহ লিখে স্ট্যাটাস দেয়ায় সাতকানিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাম্মদ তারেককে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নানের সাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া অসাম্প্রদায়িক চেতনা বহন করা একটি সংগঠন। এই সংগঠনের নীতি-আদর্শ ভুলে, নৈতিক অবক্ষয় হওয়ায় কারো স্থান নেই। সম্প্রতি সময়ে নীতি-আদর্শ ও সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে সাতকানিয়া সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাম্মদ তারেক কে সাতকানিয়া সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সকল কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। এই প্রেস বিজ্ঞপ্তির পর হতে তাহার কোন প্রকার কার্যক্রমের দায়ভার সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের উপর বর্তাবে না। সেই সাথে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের নিকট তাকে স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য সুপারিশ করা হলো।”
এদিকে গতকাল বুধবার সন্দ্বীপ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহফুজুর রহমান সুমন ও সেক্রেটারি সামিউদ্দৌলা সীমান্ত স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিন নেতাকে অব্যাহতি দেয়ার বিষয়টি জানানো হয়। অব্যাহতি প্রাপ্তরা হলেন উপজেলা ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক মোঃ রুস্তম, কার্যনির্বাহী সদস্য নুরুল আফছার, পৌরসভা সেক্রেটারি মেহেদী হাসান। এদের মধ্যে মোহাম্মদ রুস্তম সাঈদী মৃত্যুর আগের দিনের একটি ছবি পোস্ট করে লিখেন,” হাসিটা সুন্দর ছিলো। আল্লাহ আপনাকে জান্নাতবাসী করুক।”
সাঈদীর মৃত্যুর সংবাদ ফেসবুকে শেয়ার করায় চট্টগ্রামের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক ছালেহ মোহাম্মদ যোবায়েরকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। তবে এই বিজ্ঞপ্তিতে সালেহ মোহাম্মদ যোবায়েরকে জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকায় এই অব্যাহতি বলে জানানো হয়। অব্যাহতি দেয়া প্রতিষ্ঠানটি তরিকত ভিত্তিক রাজনৈতিক দল ইসলামী ফ্রন্টে অধ্যুষিত।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা জসিম উদ্দিন আল আজহারী স্বাক্ষরিত এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আপনি অত্র মাদরাসায় ইবতেদায়ী শিক্ষক (গণিত) হিসাবে ১২-৩-২০২৩ খ্রি. হতে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসায় অস্থায়ীভাবে কর্মরত। অত্র মাদরাসার কোন শিক্ষক-কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থী রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারবেন না। আপনি নিয়োগপত্রের ০৪ ও ৬নং শর্ত ভঙ্গ করেছেন এবং আপনি জামাতে ইসলামির রাজনৈতিক দলের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত রয়েছেন বিধায় আপনাকে ইবতেদায়ী শিক্ষক (গণিত) পদ হতে ১৬.০৮.২০২৩ খ্রি. থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হল।”
এদিকে চাকরিচ্যুতির বিষয়ে ছালেহ মোহাম্মদ জোবায়ের মানবজমিনকে বলেন, সাঈদী সাহেব একজন আলেম বলে উনার প্রতি ভালোবাসা ছিলো। তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় আরটিভির করা একটা নিউজ শেয়ার করেছিলাম মাত্র। শুধু এটার কারণে তারা আমাকে জামায়াত ট্যাগ দিয়ে অব্যাহতি দিয়েছে। আমাকে অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে মাদ্রাসায় আর না যাওয়ার হুমকিও দিয়েছে। অথচ আমি কখনও জামায়াত শিবির করিনি। আর করলে তারা এটার প্রমাণ দিতে বলুক। তারা মাদ্রাসার শিক্ষক হওয়ার পরও আমার সাথে জুলুম করেছে। আল্লাহ অবশ্যই এই অন্যায়ের বিচার করবেন।