নানান সংকটে ধুঁকছে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

স্টাফ রিপোর্টার: ডাক্তার সংকট এক্সরে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাম, টেকনিশিয়ান, ডেন্টাল যন্ত্রপাতিসহ নানান সংকট অব্যবস্থাপনার মধ্যে ধুকে ধুকে চলছে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

দু’টি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে একটি অকেজো হয়ে গ্যারেজের মধ্যে পড়ে আছে বাকি একটি দিয়ে কাজ চালাতে যে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যুগ যুগ পেরিয়ে গেলেও গাইনি, সার্জারি, ডেন্টাল, অর্থোপেডিক, মেডিসিন, শিশু, চক্ষু, কার্ডিওলজিস্ট চিকিৎসক সহ আজ পর্যন্ত কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদায়ন না হওয়ায় দারুন ভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। গর্ভবতী নারী, শিশু সহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্তদের দুর্ভোগ চরম ভাবে বেড়েই চলেছে। অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার থাকার পরও সেটা ব্যবহার না করায় অকেজো হয়ে পড়ে আছে কোটি টাকার যন্ত্রপাতি।

উপজেলার প্রায় ৩ লক্ষ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবায় ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। প্রথমে ২০ শয্যায় হাসপাতালটি নানা সংকটে থাকার পর নতুন ভবন নির্মাণের ফলে ২০১০ সালের ২৪ ডিসেম্বর ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও হাসপাতাল টিতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক সহ আধুনিক যন্ত্রপাতির সংকট এবং নানা অব্যবস্থাপনার মধ্যে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে উপজেলা বাসির। প্রতিদিন ২ থেকে ৪শ রোগী সেবা নেন এই হাসপাতলে। এই সমস্ত ব্যবস্থাপনা ও সংকটের কারণে সুফল পাচ্ছে না উপজেলা বাসী।

হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা এবং কমিশন বাণিজ্যের কারণে সরকারি নির্দেশনা কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিদিন সকাল ৮টা হতে ২টা পর্যন্ত বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির অর্ধশত রিপ্রেজেনটিভদের অত্যাচারে রোগীরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তারা হাসপাতালে ভিতরে প্রবেশ করে ডাক্তারের চেম্বার এবং ওষুধ বিতরণ কক্ষের সামনে ভিড় করে রোগীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক ব্যবস্থাপত্র ছিনিয়ে নিয়ে মোবাইলে ছবি তোলার জন্য টানাটানি করতে থাকে।

রোগীদের কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র ছিনিয়ে নিয়ে মোবাইলে ছবি উঠানো এবং ধরে টানা হ্যাছড়া করতে গেলে রোগীরা অনেক সময় মার মুখী হয়ে ওঠে বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা কে বলে কোন লাভ হয়নি।

কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র মিলে মোট ৩৩ জন ডাক্তারের চাহিদাপত্রে উল্লেখ আছে। এরমধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২১ জন এবং বিভিন্ন ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১২ জন। সরকারি নিয়ম-নীতি অনুযায়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১জন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা, ১জন জুনিয়র কন্সালটেড সার্জারি, ১জন জুনিয়র কনসালটেন্ট মেডিসিন, ১জন জুনিয়র কনসালটেড এনাস্তেসিয়া, ১জন জুনিয়র কনসালটেন্ড গাইনি, ১জন জুনিয়রকনসালটেড শিশু, ১জন জুনিয়র কনসালটেন্ট অর্থোপেডিক, ১জন জুনিয়র কনসালটেড চর্ম ও যৌন, ১জন জুনিয়র কনসালটেন্ট চক্ষু, ১জন জুনিয়র কনসালটেড ই, এন, টি,( নাক কান গলা), ১জন জুনিয়র কনসালটেড কার্ডিওলজি, ১জন (আর এম ও) অর্থাৎ আবাসিক মেডিকেল অফিসার এবং সহকারি সার্জন হিসাবে ৫জন মেডিকেলে অফিসার ২জন ডেন্টাল সার্জন, ১জন হোমিও ইউনানী আয়ুর্বেদিক, ১জন মিলিয়ে মোট ২১ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থাকার কথা। বাকিরা ইউনিয়নে প্রথম শ্রেণীর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ৪জনএবং ইউনিয়ন সহকারী সার্জন হিসেবে ৮ জন মোট ১২ জনসহ সর্বমোট ৩৩ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে পদায়নের কথা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে সব মিলিয়ে ১২জন ডাক্তার দায়িত্ব পালন করছে।

এর মধ্যে ডা: বুলবুল কবির উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে আছেন। হাসপাতালে জুনিয়র কনসালটেন্ট অর্থোপেডিকে ডা: গৌতম কুমার মুখার্জি, চর্ম ও যৌন বিষয়ে ডা: এ,এম মোসাদ্দেক কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পদায়ন থাকলেও তিনি সপ্তাহে ৪ দিন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ২দিন কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দায়িত্ব পালন করেন। সহকারী সার্জন হিসেবে ডা:এস, এম মোস্তাফিজুর, ডা:মোহাম্মদ আশিকুর, ডা:তনুশ্রী মল্লিক, এবং হোমিওপ্যাথি মেডিকেল অফিসার ডা: মারুফ দায়িত্ব পালন করছেন বাকি ৫জন ডা: ফাতেমা খাতুন সুমি কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে, ডা:রুপা রানী পাল বিষ্ণুপুরইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে, ডা: হাসান জাফরী চম্পাফুল ইউনিয়ন১০ শয্যা হাসপাতাল সহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া ডঃ মোহাম্মদ ইয়াসিন আলী তারালি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ডা:আইরিশ মেহেরা রতনপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।

রবিবার সকাল সাড়ে ৯টার সময় কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গেলে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী বরকতউল্লাহ,মশিউর, দিপালী রানী, ছকিনা, কামরুল, আব্দুর জরব্বার, শাহাদাত হোসেন, মিজানুর রহমান, ভাদুড়ী বিবি সহ একাধিক সেবা নিতে আসা ব্যক্তিরা সাংবাদিক দেখে এগিয়ে এসে বলেন আমাদের কপাল পোড়া ডা: রুহুল হক সাহেব স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকতে এই হাসপাতাল ৫০ বেড হলেও কোন উন্নতি হয়নি। আক্ষেপ করে তারা বলেন ডাক্তার নাই, নামমাত্র ঔষধ, এক্সরে মেশিন নষ্ট, আল্টাসনা গ্রাম মেশিন নষ্ট, সন্তান প্রসবের জন্য সিজার করতে বাইরে যেতে হয়, চোখ, কান, নাক, গলা, দাঁত, হাড় ভাঙ্গা, হার্টের অসুখের কোন ডাক্তার নাই সেবা নিতে ঢাকা, খুলনা, ভারতে দৌড়াতে হয়। এখানে জোর জবরদস্তি করে ডাক্তারদের বদলি করে দিলেও তারা আবার তদবির করে মফস্বল রেখে ঢাকায় চলে যায়। এখানে মাত্র ৩/৪ জন ডাক্তার আছে তারা ৩/৪শ রোগী দেখতে হিমশিম খেতে হয়। হাসপাতালে নামমাত্র ঔষধ পাওয়া গেলেও প্রায় সব ঔষধ বাইরে থেকে কিনতে হয়। হাসপাতালের বড় স্যারের সঙ্গে দেখা করতে গেলে সব সময় দরজা বন্ধ রেখে বাইরে দারোয়ান দিয়ে পাহারা বসায়েে রাখে। আমাদের সুবিধা অসুবিধা তাকে জানানোর কোন উপায় নাই। তিনি অধিকাংশ সময় ফিল্ড ওয়ার্কের নামে বাইরে ক্লিনিক এর কাজে ব্যস্ত থাকেন। হাসপাতালে রোগীদের খাওয়ার মান খুবই খারাপ বলে ভুক্তভোগীরা জানান। এইভাবে তাদের অভিব্যক্তিগুলো সংবাদ কর্মীদের মাঝে তুলে ধরেন।

হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায় একদিকে হাসপাতালের ভিতরে কুকুর ঘুমাচ্ছে অন্যদিকে শত শত রোগীদের সেবা দিতে গুটি কয়েক ডাক্তার হিমশিম খাচ্ছে।

ওই সময় খোঁজ নিতে অফিস সহকারীর নিকট জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা স্যার বাহিরে ক্লিনিক ভিজিট করতে গেছেন। পরে তার মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি আধা ঘন্টা পরে কথা বলবেন বলে অপেক্ষা করতে বলেন। ১ঘন্টা পরে তিনি ফিরে আসলে তার অফিস কক্ষে ঢুকতে গেলে দারোয়ান বাধা দেয়। পরে তার নিকট ফোন করলে তিনি তার অফিস কক্ষে যাওয়ার অনুমতি দেন। অফিসে ঢুকতেই সাংবাদিক পরিচয়ে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে। হাসপাতালের ভিতরে অফিস টাইমে ঔষধ কোম্পানির রিপারজেনটিভদের প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলে তিনি কি করতে হবে বিষয়টি পাল্টা প্রশ্ন করেন।

হাসপাতালের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও ডাক্তার ঔষধ চিকিৎসা সেবা সংকটের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু করার নাই। বিষয়টি নিয়ে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চিন্তা ভাবনা করবেন। তিনি হাসপাতালের জলবদ্ধতার বিষয়টি পত্রিকায় তুলে ধরার জন্য অনুরোধ জানান।

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।