রাত পোহালেই রাজধানীতে এক কিলোমিটারের মধ্যে বিএনপির মহাসমাবেশের বিপরীতে আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ। শনিবার (২৮ অক্টোবর) বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে এ সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। কর্মসূচি সফল করতে এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে, মঞ্চ তৈরির কাজও শেষ। এ অবস্থায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে রাতে নেতাকর্মীদের তেমন একটা দেখা না গেলেও সমাবেশের মঞ্চের সামনে অনেককে খোশগল্প করতে দেখা গেছে।
রাত ১১টার দিকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কয়েকজন নেতাকর্মী ও কর্মচারী রয়েছেন। কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় চেয়ার দিয়ে কয়েকজন নেতাকর্মী বসে চা পান করছেন আর গল্প করছেন। তবে চায়ের দোকানগুলো খোলা থাকলেও রাত ৮টার পর থেকে অন্যান্য দিনের চেয়ে ভিড় কম ছিল বলে দোকানিরা জানিয়েছেন।
কথা বলতে চাইলে একাধিক নেতাকর্মী বলেন, ‘কালকের সমাবেশ সকাল থেকে শুরু হবে। তাই রাতে নেতাকর্মীরা সারাদিন প্রস্তুতিমূলক কাজে ব্যস্ত সময় কাটিয়ে দ্রুত বাসায় ফিরে গেছেন। অনেকে এলাকায় গিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছেন কালকের সমাবেশের। এসব কারণে কার্যালয়ের সামনে আজ রাতে নেতাকর্মীদের তেমন একটা উপস্থিতি নেই।’
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কাছেই সমাবেশস্থল বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে শনিবার বিকালে মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু হলেও পুলিশের অনুমতির আগে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার রাতে সমাবেশের অনুমতি মেলার পর থেকে বাকি কাজ শুরু হয়, যা রাত ১টায় শেষ হয়েছে। একই সঙ্গে চলে আশপাশের এলাকায় মাইক লাগানোর কাজ, যা শেষ হয় ১২টার মধ্যেই।
মঞ্চ তৈরি ও মাইক লাগানোর কাজ দেখভাল করতে দেখা যায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজকে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ৬ ফুট উচ্চতা, ৫৬ দৈর্ঘ্য আর ২৪ ফুট প্রস্থের সমাবেশের মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। ১৫০টির মতো মাইক লাগানো হয়েছে আশপাশের এলাকায়। সকাল থেকেই শুরু হবে সমাবেশের আয়োজন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্দেশনা অনুযায়ী নগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়েছেন। বৃহস্পতি ও শুক্রবার বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটের নেতারা সতর্ক অবস্থানে থেকে বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মিছিল করেছেন। সকাল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেবেন দলটির নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, ঢাকা মহানগরের পাশাপাশি আশপাশের পাঁচ জেলা থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দেবেন। সকাল থেকে তারা দলে দলে আসতে শুরু করবেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা ঢাকায় অবস্থান করবেন। সব মিলিয়ে কয়েক লাখ লোকের জমায়েত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে, সে অনুযায়ী যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) বিকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ঢাকা মহানগর ও আশপাশের নেতাকর্মীরা দলে দলে আসবেন বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে। সকাল ১১টা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হবে। আড়াইটায় মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে। শনিবার স্মরণকালের সর্ববৃহৎ শান্তি সমাবেশ হবে।’
বিএনপির মহাসমাবেশ নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘সতর্ক পাহারায় থাকতে হবে। তাদের দুরভিসন্ধি আছে। সাম্প্রদায়িক আরও দু-একটি শক্তিকে নিয়ে তারা অশুভ খেলার পরিকল্পনা নিচ্ছে। সার্বক্ষণিক সতর্ক পাহারায় থাকতে হবে। মিটিং শেষে চলে গেলেই হবে না। কাল একটু দেখেশুনে যাবেন। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। সবাই নিজে নিজে দায়িত্ব নেবেন, সবার দায়িত্ব আছে। এই যুদ্ধ আমাদের সবার। এটা বাংলাদেশের আরেক মুক্তিযুদ্ধ। এটা মনে করেই মাঠে থাকতে হবে, ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নগর নেতারা জানিয়েছেন, সমাবেশ সফল করতে ব্যাপক লোকসমাগমের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সমাবেশের আগে-পরে রাজপথে সতর্ক অবস্থানে থাকতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতি-শুক্রবার নেতাকর্মীদের রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে সরব উপস্থিতি ছিল।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দলের হাইকমান্ডের নির্দেশমতো বৃহস্পতি ও শুক্রবার আমাদের নেতাকর্মীরা রাজপথ পাহারা দিয়েছেন। কেন্দ্র থেকে দেওয়া নির্দেশনা সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছে গেছে। সে অনুযায়ী নেতাকর্মীরা শনিবারের সমাবেশে আসবেন। নেতাকর্মীরা অলিগলি থেকে প্রধান সড়ক ধরে মিছিল সহকারে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থেকে সমাবেশস্থলে আসবেন। আগ বাড়িয়ে আক্রমণ না করার বিষয়ে কড়া বার্তা দেওয়া হলেও যেকোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।’