সাতক্ষীরা থেকে হারি যেতে বসেছে গ্রামীণ ঐতিহ্য মাদুর শিল্প

তালার নগরঘাটা ইউনিয়ন থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে হাতের তৈরি গ্রামীণ ঐতিহ্য মাদুর শিল্প। নিপুন হস্তে তৈরিকৃত বৈচিত্র্যময় এই শিল্পটি এক সময়ে গ্রামাঞ্চলে – এর প্রচুর কদর ছিল। কিন্তু বর্তমান বাজারে আধুনিক শিল্প এবং প্লাস্টিক তৈরি মাদুর বাজারজাত করার কারণে এ শিল্পটি আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে বাপ-দাদার রেখে যাওয়া এ পেশাকে এখনো পর্যন্ত ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর কাপাসডাঙ্গা গ্রামের বাবু রাখাল মন্ডল (৮৩)। অনেক কষ্ট, সংগ্রাম ও প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে বাপ – দাদার এ পেশাকে এখনো পর্যন্ত আঁকড়ে ধরে রেখেছেন তিনি । একান্ত আলাপচারিতায় রাখাল মন্ডল দৈনিক দৃষ্টিপাতকে জানান প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এক সময় হাতের তৈরি মেলে মাদুরের কদর ছিল খুব বেশি। তবে বর্তমানে বাড়িতে বাড়িতে তেমন একটা হাতের তৈরি মেলে মাদুরের দেখা না মিললেও পূর্বে এ শিল্পটি ছিলো বাড়ির একটি ঐতিহ্য। তাই গ্রামের বাড়িতে কোন আত্মীয় স্বজন এলেই সর্বপ্রথমে খাটের উপর মেলের মাদুর বিছানোই ছিল আত্মীয়তার প্রথম আপ্যায়ন। তিনি জানান,এই হস্তশিল্পটির কদর এতই বেশি ছিলো যে, সকাল হলেই গ্রামে গ্রামে বেরিয়ে যেতে হতো মাদুর বিক্রির কাজে। দিনশেষ মাদুর বিক্রির টাকা দিয়ে সংসার পরিচালনাসহ সব খরচ বহন করে এসেছেন রাখাল মন্ডল। পাশাপাশি ছেলে মেয়েদের পড়া লেখার খরচও জুগিয়েছেন তিনি এই মাদুর বিক্রি করে । তিনি জানান জন্মের পর থেকে দেখেছি এই গ্রামে অনেক ব্যক্তিকে মাদুর বুনতে। কিন্তু এখন আর সেইভাবে চোখে পড়ে না। তবে বর্তমানে বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্লাস্টিক মাদুর বাজারজাত করার কারণে এ শিল্পের কদর একেবারে কমে গেছে। ফলে আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে বসেছে এ শিল্পটি। এদিকে এ শিল্পের সাথে এতদিন যারা জুিড়য়ে জীবিকা নির্বাহ করেছে তারা এখন এ পেশা ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়েছে। তবে তিনি জানান বোরো ধান এলাকায় আসার পর থেকে এ শিল্পের বিশেষ ধস নেমেছে। কারণ হিসেবে তিনি জানান আগে যে সমস্ত জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ মেলের আবাদ হতো এখন সেই সকল জমিতে বোরো ধান উৎপাদিত হচ্ছে। এছাড়া কপোতাক্ষ এবং বেদনা নদীর দুই চরে প্রচুর পরিমাণ মেলে উৎপাদন হতো। কিন্তু নদী ২টি ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে চরে আর তেমন একটা মেলে উৎপাদন হয় না। যার ফলশ্রুতিতে মেলের উৎপাদন কমে গেছে। তিনি জানান নদীর চরে উন্মুক্ত মেলে কেটে এনে সেই মেলে দিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের মাদুর তৈরি করতে দেখা যেতো। তবে বোরো ধান উৎপাদনে বেশি লাভজনক হওয়ায় মেলে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে কৃষকরা । আর এ কারণে দেখা দেয় মেলে উৎপাদনের তীব্র সংকট ।

Please follow and like us:

Check Also

কালিগঞ্জের এস.এস.সি পরিক্ষা ২০২৪ এর ফলাফলের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট বরেয়া মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের

সাদী হাসান, নিজস্ব প্রতিনিধি: ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার আওতাধীন বরেয়া মিলনী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।