শ্রম অধিকার নিয়ে বাংলাদেশে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ। তিনি বলেছেন, ‘মার্কিনিদের নতুন শ্রমনীতির আলোকে বাংলাদেশ কাজ করে যাচ্ছে। এর অগ্রগতি শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তুলে ধরা হবে। তাই নতুন মার্কিন শ্রমনীতি নিয়ে কোনো চাপ অনুভব করছি না।’
শ্রম অধিকার সংক্রান্ত জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যলোচনায় বিশেষ আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তপন কান্তি ঘোষ।
শ্রম অধিকার রক্ষায় হোয়াইট হাউজের নতুন ‘মেমোরেন্ডামে’র মাধ্যমে গোটা বিশ্বেই শ্রম পরিবেশ আরও উন্নত হবে আশাবাদ ব্যক্ত করে তপন কান্তি ঘোষ বলেন, কারও দয়ায় নয়। পণ্যের গুণগত মান, আন্তর্জাতিক চাহিদা ও শ্রমিক অধিকার রক্ষা করেই তৈরি পোশাক রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বিবার্ষিক মূল্যায়ন রিপোর্টে অনুসারে দেশে শ্রম আইন ও শ্রম অধিকারের বিষয়ও মেনে চলা হচ্ছে।
‘তবে এই অগ্রগতি এখানেই না থেমে আরও এগিয়ে যেতে হবে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় পররাষ্ট্র, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধিরা যোগ দিয়েছেন।
সম্প্রতি পোশাক খাতে ন্যূনতম মজুরি যে ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারিত হয়েছে তা আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে পাবেন শ্রমিকরা। এছাড়া আরও কীভাবে শ্রমিক কল্যাণ বাড়ানো যায় সে লক্ষ্যে সরকার ওয়াকিবহাল আছে বলেও জানান বাণিজ্যসচিব।
বাণিজ্যসচিব আরও জানান, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোনো সুযোগ-সুবিধা পায় না। তাই মার্কিন শ্রমনীতি নিয়ে কোনো চাপ নেই। তিনি বলেন, ‘আমাদের মোট রপ্তানির মাত্র ১৭ শতাংশ হয় যুক্তরাষ্ট্রে। আর ইউরোপে রপ্তানি হয় ৫৫ থেকে ৬০ ভাগ। যথেষ্ট শুল্ক দিয়েই আমেরিকায় পোশাক পাঠানো হয়। আমার যতটুকু জ্ঞান আছে-বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিধান ডব্লিউটিও’র (বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা) আইনে নেই। তবে তারা যদি অগ্রাধিকারমূলক কোনো সুবিধা দেয়, সেই সুবিধা বাতিল করতে পারে। তবে সেটা আন্তর্জাতিক আইন মেনে করতে হবে। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’
বিশ্বব্যাপী শ্রম অধিকার রক্ষায় গত ১৬ নভেম্বর নতুন মেমোরেন্ডাম ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন সেসময় ঘোষণা দেন, যেসব দেশে এবং যারা শ্রমিক অধিকার ক্ষুণ্ন করবেন বা শ্রমিকদের আক্রমণ করবেন তাদের বাণিজ্যবিষয়ক জরিমানা, নিষেধাজ্ঞা কিংবা ভিসা নিষেধাজ্ঞার মতো পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এরইমধ্যে শ্রমমান ও শ্রমিক অধিকার বিষয়ে মার্কিন নতুন শ্রমনীতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সতর্ক করেছে ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাস। এরই ধারাবাহিকতায় শ্রম অধিকার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সরকারের আলোচনা চলমান আছে বলেও জানান বাণিজ্যসচিব।