বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ বলেছেন, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ ও শাশ্বত জীবন বিধান। ইসলামের সঠিক রূপ মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। কারণ ইসলামই পারে মানুষের জীবনের সকল সমস্যার সমাধান দিতে। মূলত, ইসলামের প্রকৃত জ্ঞানের অভাব এবং দেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা চালু না থাকার কারণে আজকে দেশের নাগরিকরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে সংগঠনের সকল শ্রেনির জনশক্তিকে ময়দানে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান। গতকাল সোমবার বিকেলে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে ওয়ার্ড সভাপতি ও সেক্রেটারি সম্মেলন প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এস কথা বলেন।
কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও সাতক্ষীরা জেলা শাখার আমীর হাফেজ মুহাদ্দিস রবিউল বাশারের সভাপতিত্বে এবং জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আজিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্টিত সদস্য সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারী ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক ও কর্মপরিষদ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। সদস্য সম্মেলনে সাতক্ষীরা জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম মুকুল ও শেখ নুরুল হুদা, সাবেক এমপি গাজী নজরুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারী প্রভাষক ওবায়দুল্লাহ, প্রভাষক ওমরফারুক, অফিস সেক্রেটারী রুহুল আমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিকাল ২টা থেকে শুরু হয়ে বিষয় ভিত্তিক আলোচনার মধ্য দিয়ে চলা সম্মেলন শেষ হয় বিকাল সাড়ে ৪টায়।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ আরো বলেন, ইসলামী আন্দোলনের ওপর জুলুম-নির্যাতন ইতিহাসের ধারাবাহিকতা। নবী-রাসূল (সা.) গণও তা থেকে রেহাই পাননি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হযরত ইউসুফ (আ.)কে অবর্ণনীয় জুলুম-নির্যাতনের মধ্য দিয়েছে মিশরের রাজা ও প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিলেন। ইতিহাসের সে ধারাবাহিকতায় আমাদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ফাঁসির মঞ্চকে জয় করে ফেলেছেন। জুলুম-নির্যাতন আমাদের গা সওয়া হয়ে গেছে। তাই ইসলামী আন্দোলকে বিজয়ী করতে হলে সকল প্রকার জুলুম-নির্যাতন ও মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালাতে হবে। তিনি শাহাদাতের তামান্না নিয়ে দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে সকলকে ময়দানে আপোষহীন থাকার আহবান জানান।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারী ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক বলেন, সরকার অবৈধ ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবেই জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করে দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা ২০১৪ সালে তামাশা ও ভাঁওতাবাজীর নির্বাচনের মাধ্যমে ১৫৪ জন দলীয় প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করে দেশের গণতন্ত্রের ললাটে কলঙ্কতিলক লেপন করেছে। ২০১৮ সালের নৈশ্যভোটের নির্বাচন শুধু দেশ ও জাতি নয় বরং প্রযুক্তির কল্যাণে গোটা বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে। যা ক্ষমতাসীনদের নির্লজ্জতা ও বেহাপনার নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। তারা সর্বশেষ ২০২৪ সালে একদলীয় ড্যামী সাজানো ও পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেয়ে দেশটাকে স্বৈরাচারীর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের মানুষের অধিকার নেই। স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছে না। আমরা যে সমাজে বসবাস করছি, এই সমাজে যদি ঈমান এবং আমলের সঙ্গে বেঁচে থাকতে হয়, তাহলে আমাদের এই সমাজ পরিবর্তন করতে হবে। প্রতিটি অলিতে-গলিতে মানুষের দ্বারে দ্বারে দাওয়াত ও সেবার কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে মানুষের কোনো অধিকার নেই। আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ এখন কালো অন্ধকারে ঢাকা। পাঠ্যপুস্তকে ইসলাম বিদ্বেষ ছড়িয়ে শিশুদের ধর্মহীনতার দিকে নেয়ার চেষ্টা চলছে। দেশের এই ক্রান্তিকালে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমাদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি আরো বলেন,বাংলাদেশ এটি হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়নি। স্বাধীনতার পূর্ব এবং এরও শত শত বছর আগে মুসলিম জাতি সত্তার বিচরণ ক্ষেত্র হিসেবে আমরা দেখতে পাই। এখানে হাজী শরীয়তুল্লাহ, তিতুমীর, শাহ্ জালাল র. আন্দোলন করেছেন। তাদের ঐতিহ্য ধারণ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
সম্মেলনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও সাতক্ষীরা জেলা শাখার আমীর হাফেজ মুহাদ্দিস রবিউল বাশার বলেন,জান্নাতে যেতে হলে ঈমান হতে হবে পূর্ণ। ঈমানের উপর দাঁড়িয়ে যেতে হবে। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্র ব্যাপকতা অনেক গভীর। আমাদের পরিপূর্ণ মুমিন হতে হবে। আমাদের আখেরাতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা টাকার গোলাম না হয়ে আল্লাহ্র গোলাম হবো। আমরা আল্লাহ্র গোলামী করার জন্য জীবনটা ব্যয় করে দেবো।
সম্মেলনে জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আজিজুর রহমান বলেন, আল্লাহ্র আইন ও হুকুম অনুযায়ী সমাজ এবং রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দরকার। ক্ষমতার বাইরে থেকে এটা কখনোই পূর্ণাঙ্গভাবে করা যাবে না।