সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৯ ডায়ালাইসিস যন্ত্রের ১৭টিই নষ্ট

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কিডনি রোগীদের চিকিৎসায় থাকা ১৯টি ডায়ালাইসিস যন্ত্রের মধ্যে ১৭টিই নষ্ট হয়ে গেছে। গত মঙ্গলবার হঠাৎ করে হাসপাতাল থেকে ডায়ালাইসিস যন্ত্র বিকল হওয়ার বিষয়টি রোগীদের জানানো হয়। এতে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন কয়েক শ রোগী।

রোগীদের অভিযোগ, এক বছর আগে নতুন পরিচালক আসার পর বিকল হওয়া যন্ত্র মেরামতের উদ্যোগ নেননি। এ জন্য একে একে প্রায় সব যন্ত্র নষ্ট হয়ে যায়। তবে হাসপাতালের পরিচালক বলছেন, যন্ত্রগুলো মেরামতের জন্য তিনি বারবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে তাগাদা দিয়েছেন। ইতিমধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠানকে যন্ত্রগুলো মেরামতের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।

হাসপাতালের পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে দুটি ডায়ালাইসিস যন্ত্র দিয়ে হাসপাতালে কিডনি রোগীদের সেবা দেওয়া শুরু হয়। এরপরের কয়েক বছরে আরও কয়েকটি যন্ত্র যুক্ত হয়। ২০১৯ সাল থেকে ১৯টি যন্ত্র দিয়ে রোগীদের ডায়ালাইসিস করা হচ্ছিল। মাঝেমধ্যে দুই-তিনটি যন্ত্র বিকল থাকলেও অন্যগুলো দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়া হতো। কিন্তু গত এক বছরে একে একে ১৭টি যন্ত্র নষ্ট হয়ে যায়।

হাসপাতালের ডায়ালাইসিস ইউনিটের প্রধান নমিতা সরকার প্রথম আলোকে বলেন, অনেক দিন ধরে বিকল পড়ে থাকায় ধীরে ধীরে ১৭টি যন্ত্র নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, প্রতি সপ্তাহে কোনো কোনো রোগীকে এক, দুই কিংবা তিনবার পর্যন্ত ডায়ালাইসিস করতে হয়। প্রতি মাসে ৭০০ থেকে ৮০০ রোগী হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেবা নেন। প্রতিবার ডায়ালাইসিসের জন্য প্রত্যেক রোগীকে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে ৪০০ টাকা অনুদান দেওয়ায় বিনা খরচে ডায়ালাইসিস সেবা নিতে পারেন রোগীরা। বাইরে থেকে ডায়ালাইসিস করতে রোগীকে অন্তত ৪ হাজার টাকা খরচ হয়। এমন পরিস্থিতিতে গরিব রোগীরা অনিশ্চয়তায় পড়বেন।

শুধু সাতক্ষীরা নয়, খুলনা-যশোরসহ আশপাশের জেলা থেকে অনেক কিডনি রোগী হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেবা নিতে আসেন। ডায়ালাইসিস যন্ত্র বিকল থাকায় গরিব রোগীরা বেশি বিপদে পড়েছেন। তাঁদের অনেকে এখন চোখে অন্ধকার দেখছেন। শহরের সবুজবাগ এলাকার বাসিন্দা জহুরুল কবীর বলেন, সহায়-সম্বল বিক্রি করে কিডনি রোগে আক্রান্ত স্ত্রীর চিকিৎসা করাচ্ছিলেন। বেসরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করানোর সামর্থ্য নেই। এর মধ্যে হাসপাতাল থেকে জানাল, নতুন যন্ত্র না এলে বা পুরোনো যন্ত্র ঠিক না হলে সপ্তাহে একবারের বেশি ডায়ালাইসিস করানো যাবে না।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক শীতল চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এক বছর আগে তিনি যোগদান করেন। তার আগেই কয়েকটি যন্ত্র নষ্ট ছিল। গত বছরের ৭ মার্চ ও ১১ সেপ্টেম্বর দুইবার তিনি যন্ত্র মেরামতের তাগিদ দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়েছেন। ইতিমধ্যে তাঁদের পক্ষ থেকে দরপত্র করে ৩ মার্চ ঢাকার পুরানা পল্টন এলাকার একটি প্রতিষ্ঠানকে ১২টি ও ২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে ৩টি যন্ত্র মেরামতের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রধান কারিগরি ব্যবস্থাপক জয়ন্ত কুমার মুখোপাধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। ডায়ালাইসিসের যন্ত্রাংশ সুইজারল্যান্ড থেকে আনতে দুই-তিন মাস লেগে যায়। সাতক্ষীরার বিষয়টি জানার পর দ্রুত পাঁচ-সাতটি যন্ত্র মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে কয়েকটি যন্ত্র চালু হয়ে যাবে।

Please follow and like us:

Check Also

২৮শে এপ্রিল খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শনিবারেও ক্লাসের পরিকল্পনা

আগামী ২৮শে এপ্রিল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য সব রকমের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।