ইউক্রেন-রাশিয়া রেশ কাটতে না কাটতেই ফিলিস্তিনের গাজায় শুরু হয় ইসরাইলি আগ্রাসন। এরপর থেকে অশান্ত হতে থাকে মধ্যপ্রাচ্য। বদলে যেতে থাকে দৃশ্যপট। চারদিকে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যের পুরোনো ক্ষতকে আবারও দগ্ধ করে তোলে ইসরাইল।
এ নিয়ে কূলকিনারাও পাচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। হাঁপিয়ে উঠেছেন বড় বড় দেশের প্রধান নেতারাও। এমনই এক অনিশ্চয়তার নতুন যুগে প্রবেশ করেছে মধ্যপ্রাচ্য। যেখান থেকে তৈরি হতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি। এমন ধারণাও পোষণ করছেন বিশেষজ্ঞরা। সিএনএন।
ছয় মাস ধরে চলছে ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ। এরই মধ্যে ইরান ও ইসরাইলের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক উত্তেজনা তীব্র হতে শুরু করেছে। চলছে হামলা-পালটা হামলা। ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেট ভবনে হামলা চালায় ইসরাইল। এই হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর অভিজাত শাখা কুদস ফোর্সের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদিসহ কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা নিহত হন। যার জেরে ১৩ এপ্রিল ইসরাইলের মূল ভূখণ্ডে নজিরবিহীন হামলা চালায় ইরান। সেই হামলারই আবার প্রতিশোধ নিতে পালটা হামলা চালায় ইসরাইল। তবে ইরানের ইস্পাহান শহরে ইসরাইলের পালটা আঘাত খুবই নগণ্য ছিল।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হামলায় এ অঞ্চলে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি। তাদের (ইসরাইল-ইরান) কার প্রতিক্রিয়া কতটা কঠিন হতে পারে, তা সঠিকভাবে কেউই মূল্যায়ন করতে সক্ষম নয়। বর্তমানে ইসরাইলে বড় ধরনের সামরিক শক্তি থাকলেও দেশটি গভীরভাবে দুর্বল অবস্থানে রয়েছে।
এটি এখন কার্যকরভাবে তিনটি ফ্রন্টে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে, লেবানন সীমান্তে ইরানের মিত্র হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে এবং সরাসরি ইরানের বিরুদ্ধে। হিজবুল্লাহর হুমকি ভয়াবহ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, সশস্ত্র সংগঠনটির কাছে হাজার হাজার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। যা ইসরাইলি শহরগুলোতে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে। এতে ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়াদের আবাসস্থল লেবাননেও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে।
গত কয়েক দিনের সংঘর্ষের ঘটনাবলির অর্থ হলো, এ অঞ্চলটি অবিলম্বে বড় আকারের যুদ্ধের দিকে যাচ্ছে না। তবে আগে যেমনটা মনে করা হতো ইরান কখনোই প্রকাশ্যে ইসরাইলে আক্রমণ করবে না এবং ইসরাইলও একইভাবে ইরানের মাটিতে হামলা চালাবে না। সেই অনুমান ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় প্রেসিডেন্টের অধীনে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আলোচনাকারী অ্যারন ডেভিড মিলার সিএনএনকে বলেছেন, ‘আপনি ইরানের কোনো প্রতিশোধ ছাড়াই এই ধাপটি অতিক্রম করলেও বাস্তবতা হলো ইসরাইল ও ইরান এই প্রতিযোগিতামূলক লড়াইয়ে আটকে যাবে। ইরানি ছায়াশক্তির সমস্যার কোনো সমাধান নেই। এই সম্পর্কটি এই অঞ্চলে এবং সম্ভবত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর ডিমোক্লেসের তরবারির মতো ঝুলতে থাকবে।
ভূরাজনীতির খেলায় মধ্যপ্রাচ্যে ইরান সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। কিছু বিশেষজ্ঞ ধারণা করছেন, ইসরাইলের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতের নতুন বাস্তবতা ইরানকে তার নিজস্ব পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে প্ররোচিত করতে পারে। মনে করা হচ্ছে, মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হতে পারে। সাম্প্রতিক দিনগুলোর ক্রমবর্ধমান বিপদ সামনের দিনগুলোকে আরও ভয়াবহ করে তুলতে পারে।