ঝড় ও বজ্রপাতে মা-ছেলেসহ ৭ জনের মৃত্যু

সারা দেশে কালবৈশাখীর আশঙ্কায় তিন দিনের সতর্কবার্তা দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে বলা হয়েছে, ঝড় হতে পারে, সঙ্গে বজ্রপাত ও বিচ্ছিন্নভাবে শিলাবৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রোববার এ সতর্কবার্তা জারি করে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এর আগে শনিবার রাত এবং রোববারও কোথাও কোথাও ঝড়-বৃষ্টি ও বজ্রপাত হয়েছে। ঝড়ে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে ঘরের ওপর গাছচাপায় ৫ বছরের শিশু সন্তানসহ অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু হয়েছে।

এছাড়া বজ্রপাতে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটির কাউখালী ও জামালপুরের ইসলামপুরে মা-ছেলে ও এক শিক্ষার্থীসহ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন আরও ৪ জন।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৬০-৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে দুই নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আমরা আপাতত তিন দিনের কালবৈশাখীর সতর্কবার্তা দিয়েছি। বৃষ্টির কারণে দেশে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। আগামী তিন দিনের পরও বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে রোববার হবিগঞ্জে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। ময়মনসিংহে সর্বোচ্চ ৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এদিন নেত্রকোনা, সিলেট, কুমিল্লা ও কক্সবাজারেও বৃষ্টি হয়েছে। একইদিন ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ ৪০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। রাজশাহী ও যশোরেও ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি তাপমাত্রা ছিল।

এ বিষয়ে বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিমের প্রধান আবহাওয়াবিদ মো. খালিদ হোসাইন জানান, বর্তমানে ময়মনসিংহ, সিলেট বিভাগসহ দেশের পূর্বাংশের ওপর দিয়ে ব্যাপক পরিমাণ জলীয়বাষ্পের জোগান অব্যাহত আছে। সেখানে নিয়মিত ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়েছে, যা আজ দেশের অন্যত্র বিস্তার লাভ করতে পারে। অন্যদিকে রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ এলাকায় বৃষ্টি হওয়ার পরিবেশ অনুপস্থিত। এতে সেখানে তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকছে। এর মধ্যে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কম থাকলেও তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকছে। বাকি এলাকায় তাপমাত্রা কম থাকলেও জলীয়বাষ্পের কারণে ওয়েট বাল্ব টেম্পারেচার অনেক বেশি থাকছে। এতে প্রচণ্ড গরমের অনুভ‚তি হচ্ছে এবং ঘাম শুকাতে দিচ্ছে না,  যা অস্বস্তি বাড়িয়েছে।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আরেক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। দেশের তাপমাত্রা কমতে পারে।

প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

খাগড়াছড়ি ও রামগড় : দীঘিনালা ও রামগড়ে রোববার ভোরে বজ্রপাতে মা-ছেলেসহ ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। মেরুং ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাহমুদা বেগম লাকি জানান, বেতছড়ির গোরস্থান এলাকায় বজ্রপাতে ছাদেক মিয়ার বসতঘরে আগুন ধরে যায়। এতে হাসিনা বেগম (৩০) ও তার ৮ বছরের ছেলে হানিফ মিয়া (৮) অঙ্গার হয়ে যায়।

এ সময় আরেক ছেলে হাবিজ (১১) ঘরের বাইরে থাকায় প্রাণে বাঁচে। দীঘিনালা ফায়ার সার্ভিস আগুন নিভিয়ে দুই লাশ উদ্ধার করে। এছাড়া রামগড় উপজেলার হাজাপাড়ায় বজ্রপাতে গনজ মারমা নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

কাউখালী (রাঙামাটি) : উপজেলার দুর্গম বার্মাছড়ি এলাকায় রোববার ভোরে বজ্রপাতে এক স্কুল শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আরও অন্তত ৪ জন আহত হয়েছেন। তার নাম আর্ষা চাকমা। সে ৫নং ওয়ার্ডের মানিকছড়ি পাড়া এলাকার অরুন চাকমার মেয়ে। আর্ষা বর্মাছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণিতে পড়ত।

ইসলামপুর (জামালপুর) : বজ্রপাতে আব্দুল মজিদ নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের কাটমা গ্রামে শনিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। মজিদ ওই গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।

কিশোরগঞ্জ : করিমগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নের হাজিপাড়া গ্রামের ঘোনার হাটিতে শনিবার রাতে টিনের দোচালা ঘরের ওপর গাছ পড়ে। এতে ৫ বছরের শিশুসন্তানসহ ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আরও এক বৃদ্ধা আহত হয়েছেন। মৃতরা হলেন- ঘোনার হাটির আব্দুল কাইয়ুমের স্ত্রী মোছা. রূপাতারা (৪৫) ও ছেলে তাইজুল ইসলাম।

কাউখালী (পিরোজপুর) : উপজেলার শিয়ালকাঠি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের হাজি বাড়িতে শনিবার দুপুরে হিট স্ট্রোকে মোহাম্মদ মতিউল হাসান মতির (৬৫) মৃত্যু হয়েছে।

দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) : শনিবার রাতে ঝড়ে উপজেলার অনেক জায়গায় গাছপালা ও কাঁচা ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়। এছাড়া বাতাসে উঠতি ফসল নুয়ে পড়ে।

রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) : রোববার সকালে ঝড়ে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইছামতিতে অন্তত ১০টি বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেঙে গেছে গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি। অনেক এলাকায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। ক্ষতিগ্রস্ত পিন্টু বড়ুয়া বলেন, তার একমাত্র অবলম্বন ঘরটি বড় গাছ পড়ে বিধ্বস্ত হয়ে যায়।

হবিগঞ্জ : সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রোববার দুপুরে শিলাবৃষ্টি ও কালবৈশাখী বয়ে গেছে। প্রায় আধাঘণ্টা স্থায়ী শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে গাছপালা ও ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।