Breaking News

ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে পানিবদ্ধতা মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা সাতক্ষীরা পৌরএলাকায়

আবু সাইদ বিশ্বাস, সাতক্ষীরাঃ টানা বৃষ্টি, খনন প্রকল্পে অনিয়ম, নদী—খালের প্রশস্ততা কমিয়ে ফেলা, তলদেশ খনন না করে পাড় উঁচু করে গভীরতা দেখানো, পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে ও সরকারি খাল দখল করে মৎস্য ঘের গড়ে তোলা, অবৈধভাবে খালে দেওয়া নেট—পাটাসহ পরিবেশ বির্পয়ের কারণে সাতক্ষীরায় পানিবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বাড়ি—ঘরে পানি। রান্নার ঘরে পানি। ভেসে গেছে পায়খানা। ছড়িয়ে পড়েছে পানিবাহিত রোগ। এতে মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে গোটা এলাকায়। পানি নিষ্কাশিত না হয়ে বিভিন্ন এলাকা পানিবদ্ধ হয়ে থাকছে মাসের পর মাস। বাধ্য হয়ে এলাকা ছাড়ছেন অনেকেই।
এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সাতক্ষীরা পৌরসভার কামালনগর, ইটাগাছা, মেহেদীবাগ, রসুলপুর, বদ্দীপুর কলোনি, রইচপুর, মধ্য কাটিয়া, রথখোলা, রাজার বাগান, মুনজিতপুর, গদাইবিল ও পুরাতন সাতক্ষীরার নিম্ন এলাকায় ভয়াবহ পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এ সংকট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ মন্তব্য করে ৭নং ওয়ার্ড এলাকার মাওলানা আব্দুর রহিম বলেন, কর্মকর্তাদের গাফিলতি ও অনিয়মের খেসারত দিতে হচ্ছে সাতক্ষীরাবাসীকে। কোটি কোটি টাকার নদী খনন প্রকল্পে অনিয়মের কারণে খননের প্রকৃত উদ্দেশ্য হাসিল হচ্ছে না। নদী—খালের প্রশস্ততা কমিয়ে ফেলা হয়। তলদেশ খনন না করে পাড় উঁচু করে গভীরতা দেখানো হয়। ফলে স্থলভাগের পানি নদীতে যায় না। উপরন্তু নদীর পানি বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্রবেশ করে।
ইটাগাছা আয়েনউদ্দীন মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকার ফারুক হোসেন জানান, তাদের বাড়িঘরে পানি উঠেছে। টিউবওয়েলগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। ঘর থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় নেই। অনেকে পার্শ্ববর্তী এলাকায় ভাড়া বাসায় দিন কাটাচ্ছেন। দ্রুততম সময়ে পানিবদ্ধতা দূরীকরণের উদ্যোগ না নিলে এলাকায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে শঙ্কা তার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় সাতক্ষীরা পৌরসভা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা বছরের চার থেকে ছয় মাস পানিবদ্ধ থাকে। এর নেপথ্য কারণ অনুসন্ধান করে জানা গেছে, পৌরসভার মধ্যে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে ও সরকারি খালগুলো দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে শত শত মৎস্য ঘের। ফলে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত না হয়ে সাতক্ষীরা পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা পানিবদ্ধ হয়ে থাকে মাসের পর মাস।
পৌর এলাকার সাবিনা বেগম জানান, একদিন ভাত না খেয়ে বেঁচে থাকা যায়। কিন্তু পানি না খেয়ে থাকা যায় না। এখন কোথাও খাওয়ার পানি নেই। ভেলায় করে দূও দূরান্ত থেকে পানি আনতে হচ্ছে। একই এলাকার আব্দুল হামিদ নামের এক ব্যক্তি বলেন, বর্তমানে এলাকায় কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে তার দাফন করার মতো উচু জায়গা নেই। সব পানিতে প্লাবিত। গত কয়েক বছর ধরে এলাকা প্লাবিত হলেও এবার সম্পূর্ন ব্যতিক্রম।

পানিবদ্ধতা এলাকায় ঘুরে ভুক্তভোগীদের সাতে কথা বলে সাতক্ষীরা শহর জামায়াতের আমীর জাহিদুল ইসলাম বলেন, পানিবদ্ধতা নিরসনে সরকার নদী খননের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়, কিন্তু অপরিকল্পিত খননের কারণে তা যায় পানিতে। কাজের কাজ কিছুই হয় না। রাস্তাঘাট, মসজিদ, মন্দির, স্কুল—কলেজ সব পানিতে ডুবে জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। তিনি আরো বলেন, গোয়াল ঘরে পানি ওঠায় গরু ছাগল নিয়ে চরম বিপাকে সাধারণ মানুষ। সেই সাথে গো খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। তিনি অপরিকল্পিত মৎস্য ঘের ও অপরিকল্পিত নদী খননই এর জন্য দায়ী বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সাতক্ষীরায় পানিবদ্ধতার সমস্যার স্থায়ী সমাধানের নিম্নক্ত পরামর্শ গুলোর কার্যকরী বাস্তবায়ন দেখতে চায় স্থানীয়রা। নদী—খাল খননে যথাযথ প্রকল্প গ্রহণ করে কার্যকর পদ্ধতিতে সময়মত শেষ করা। চলমান প্রকল্পসমূহে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করা। খাল বা জলমহালের ইজারা পুনরায় বাতিল করা। অবৈধ ভোগ—দখল ও নেট—পাটা উচ্ছেদ করা। নদী ও খালের প্রবাহ বিঘ্নিত হয়, এমন উন্নয়ন প্রকল্প না নেওয়া। নদী—খাল খননের সঙ্গে সংলগ্ন বেড়িবাঁধগুলো টেকসই করা। বেড়িবাঁধে বনায়নের উদ্যোগ নেওয়া। সাতক্ষীরা শহরকে পুরোপুরি ড্রেনেজ নেটওয়ার্কের আওতায় আনা। পৌরসভা এলাকাসহ যেখানে—সেখানে মাছের ঘের নিষিদ্ধে ‘জোনিং’ করা। অন্যান্য জায়গায় পানি নিষ্কাশনের ড্রেন রেখে মাছের ঘের করা। প্রতিবছর বর্ষা মওসুমের আগেই পানি নিষ্কাশনের পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়া। অকেজো স্লুইস গেটগুলো সংস্কার করা। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের মাধ্যমে জলবায়ু ফান্ডের অর্থ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া।
পানিবদ্ধতা এলাকা পরিদর্শনে যেয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোয়াইব আহমাদ বলেন, শহরের পানিবদ্ধতা নিরসনে ঘের মালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে দফায় দফায় কথা বলেছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে পানিবদ্ধতা হ্রাস পাবে।

 

About news-admin

Check Also

জুলাই শহীদ দিবসে সাতক্ষীরার বাইপাস জিরো পয়েন্টে মোটরযানের উপর মোবাইল কোর্ট

জুলাই শহীদ দিবসে সাতক্ষীরার বাইপাস জিরো পয়েন্টে মোটরযানের উপর মোবাইল কোর্ট শেখ আমিনুর হোসেন, সাতক্ষীরা: …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *