সাতক্ষীরায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে হেনস্তা

রেজাউল ইসলাম(বাবলু): সন্ত্রাসী কায়দায় জনসম্মুখে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম সাইফকে শারীরিক ভাবে প্রহার ও হেনস্তা করেছে এক যুবক। বুধবার (২৩ জুলাই) রাত ১০ টার দিকে শহরের নিউ মার্কেট মোড়স্থ সাতক্ষীরা ফার্মেসির সামনে এই নেক্কারজনক ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে শহর জুড়ে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে অভিযুক্ত ঐ যুবকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। অভিযুক্ত যুবকের নাম মোঃ জিল্লুর রহমান সে শহরের মেহেদীবাগ টিভি টাওয়ার এলাকার বাসিন্দা ও জেলা শ্রমিকলীগের যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক টিটুর ছোট ভাই। সে “মা মোটরস” নামক একটি রিকন্ডিশন মোটরসাইকেল শো-রুমের মালিক ও জেলা বাস মালিক সমিতির সহ-সভাপতি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম সাইফ ঔষধ কেনার জন্য নিউ মার্কেট মোড়ের প্রধান সড়ক থেকে মোটরসাইকেল যোগে সাতক্ষীরা ফার্মেসির দিকে টার্ন নিলে বিপরীত দিক থেকে আসা লাল রঙের একটি প্রাইভেট কারের সাথে মুখোমুখি হয়। এ সময় প্রাইভেটকার থেকে ঐ যুবক নেমে এসে কোন কথা বার্তা ছাড়াই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলামকে শারীরিক ভাবে প্রহার করে জনসম্মুখে হেনস্থা করতে থাকে এবং ওখান থেকে টেনে হেচড়ে কৃষ্ণচূড়া গাছের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। এসময় উপস্থিত সাধারণ পথচারীরা এগিয়ে এসে ভুক্তভোগী ঐ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে রক্ষা করেন। এসময় অভিযুক্ত জিল্লুর রহমান তড়িঘড়ি করে প্রাইভেটকার যোগে নিউমার্কেটের দিকে চলে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শী আখের রসের দোকানদার মোঃ মনজুর রহমান জানান, অভিযুক্ত জিল্লুর রহমানের প্রাইভেট গাড়িতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মোটরসাইকেল ধাক্কা দিয়েছে এমন অভিযোগ এনে তাকে হেনস্থা করতে থাকে, ওখানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কোন দোষ ছিল না গায়ের জোরে ছেলেটি এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।

তথ্য অনুসন্ধানে অভিযুক্ত জিল্লুর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি সময়ে তার শো-রুমের এক ক্রেতাকে মারপিট করে আলোচনায় আসে এই জিল্লু। তার বিরুদ্ধে হুন্ডি, মাদক, স্বর্ণচোরাচালান ও সুদ ব্যবসা সহ নানা অভিযোগ উঠেছে।

সূত্র জানায়, বাগেরহাট জেলা থেকে আসা জিল্লু ২০১০ সালের শুরুতে জেলা টার্মিনালে তার মায়ের চায়ের দোকানের চা দোকানী হিসেবে পরিচিতি পায় টার্মিনাল এলাকায়। এর কিছুদিন পর জড়িয়ে পরে মাদক ব্যবসায়।

ধাপে ধাপে বাড়তে থাকে তার মাদক ব্যবসার পরিধি, স্বীকৃতি পায় আন্তঃজেলা চোরাকারবারীর। এর কিছুদিন পর নজরে আসেন জেলার শীর্ষ এক স্বর্ণ চোরাকারবারীর, তার হাত ধরে নাম লেখান স্বর্ণ চোরাচালান ও হুন্ডি ব্যবসায়। সেসময় সীমান্ত এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে মাদক, স্বর্ণ ও হুন্ডি ব্যবসা পরিচালিত করতো জেলার যুবলীগ নেতা শীর্ষ সন্ত্রাসী কুচপুকুরের বুনো কবীরের বন্ধু পরিচয়ে। এরপরে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি জিল্লুর, কালো টাকায় বনে যায় কোটিপতি। শুরু করেন রিকন্ডিশন মোটর সাইকেল ব্যবসার নামে সুদের ব্যবসা।

কালো টাকায় একে একে কিনে নেয় ৮ থেকে ১০ টি অভ্যান্তরিন রুটের বাস, হয়ে যায় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্য। পরিচয় দিতে শুরু করে আবু আহম্মেদলীগের, করেন পৌর কাউন্সিলর নির্বাচনও। জিল্লুর আছে নিজস্ব বাহিনী, তাদের মাধ্যমেই পরিচালিত হয় তার সকল অপকর্ম।

এদিকে জেলা প্রশাসনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, তার বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে, তাকে আইনের আওতায় আনতে তার বাসাসহ বিভিন্ন জায়গায় টাস্কফোর্সের অভিযান অব্যহত আছে এবং উর্ধত্বন কর্তৃপক্ষ এবিষয়ে অবগত আছেন।

জানাগেছে, অভিযুক্ত জিল্লুকে রক্ষা করতে মাঠে নেমেছে একটি চক্র। চক্রটির বিরুদ্ধে তার অবৈধ ব্যবসার প্রশাসন ম্যনেজের দায়িত্ব আছে বলে নিশ্চত করেছেন জিল্লু বাহিনীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সক্রিয় সদস্য।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত জিল্লুর রহমানের বক্তব্য জানতে, তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বন্ধ পাওয়া যায় এবং কয়েকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। সূত্র:dainikshomoybarta

About news-admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *