বিশ্ব বাঘ দিব

উপলক্ষে
উপসম্পদকীয়
বাঘ
বাঘ বিশ্ব দরবারে আমাদের আলোকিত করে, তবে এই প্রাণি অরণ্যের বাসিন্দা বাংলাদেশে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দর বনে বাঘ বসবাস করে। বাঘ পৃথিবীর মহা বিপন্ন প্রাণির মধ্যে অন্যতম। সাহসিকতা, দৃষ্টিনন্দর, দৈহিক গঠিন, শক্তিমক্তা ও অন্যান্য বৈশিষ্টের কারণে বাংলার বাঘের ক্ষ্যাতি পৃথিবী জুড়ে। এই রাজোসিক প্রাণি বাংলাদেশের জাতীয় পশু হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
প্রতি বছর ২৯শে জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস হিসাবে পালিত হয়। ২০১০ সালে রাশিয়ায় সেন্ট পিটার বার্গে পৃথিবীর বহুদেশের রাষ্ট্র প্রধান এর উপস্থিতিতে প্রথম বাঘ দিবস পালিত হয়। সম্ভব্য বিলুপ্তির হাত থেকে এই প্রাণিটিকে রক্ষার্থে বিশ্ববাসীকে, সচেতন করা এ দিবস পালনের উদ্দেশ্য। বাঘ সংরক্ষণ কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া ও ্রয়োজনীয় সমর্থন আদায়ে বিশ্ব সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করা ও দিবসটির লক্ষ্য। ১৯৩০ সালের দিকে ও বাংলাপদেশের ১৭টি জেলার মধ্যে ১১ট জেলায় বাঘ বসবাস করতো। ১৯৬২ সালে পঞ্চগড়ের বাংলা বান্দায় শেষ বাঘটি গুলি করার পর গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী বেঙ্গল টাইগার সম্পূর্ণ রুপে অদৃশ্য হয়ে যায়। বর্তমানে এই প্রজাতিটি আছে শুধু মাত্র সুন্দর বনে। পৃথিবীতে বাঘের যে সমস্ত আবাস রয়েছে সুন্দরবন তার অন্যতম। বর্তমানে বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর ১৩টি দেশে বাঘ রয়েছে। চোরাশিকারী, খাদ্যের অভাব ও জলবায়ু পরিবগুন জনিত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে গত ১০০ বছরে বাঘের সংখ্যা প্রায় ৯৫ শতাংশ হ্যাস পেয়েছে। বন বিভাগের ২০০৪ সালের জরিপ অনুযায়ী সুন্দর বনে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪১৯টি ১৯০০ সালের দিকে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর ৩৩টি দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশে বাঘ বিচরন করতো তখন বাঘের সংখ্যা ছিল প্রায় ১ লক্ষ। বর্তমানে বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর ১৩টি দেশের বাঘের সংখ্যা ৩৫০০টি। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালে সুন্দর বনে বাঘের সংখ্যা ছিল ৩৫০টি ১৯৮২ সালে এই সংখ্যা বেড়ে ৪২৫। ১৯৯২ সালে সুন্দর বনে বাঘ পাওয়া যায় ৩৫৯ পরবর্তীতে ২০০৪ সালে বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায় ৪৪০টি। ক্যামেরা ট্রাপিং এ ২০১৫ সালে সুন্দর বনে বাঘ পাওয়া যায় ১০৬ টি এবং একই পদ্ধতি ২০১৮ সালে সুন্দরবনে বাঘ পাওয়া যায় ১১৪টি। ২০০১ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সুন্দরবনে বাঘ মারা গেছে ৫০টি। তার মধ্যে স্বাভাবিক মৃত্যু ১০টি, সুপায় সাইক্লোন/সিডর এর মৃত্যু হয়েছে ১টি ১৪টি বাঘ পিটিয়ে মারা হয়েছে। চোরা সকারী কতৃর্ক বাঘ মারা গেছে ২৫টি। কিন্তু বর্তমানে সুন্দরবনে কর্মরত জেলে বাউয়ালী ও পর্যাটকদের মতে সুন্দর বনে প্রায়স বাঘ দেখা যাচ্ছে।
সুন্দরবনের মোট আয়তন ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এর ৬০ শতাংশ আমাদের দেশে আর বাকী ৪০ শতাংশ ভারতের মধ্যে। আমাদের দেশে রয়েছে ৬০১৭ বর্গ কিলোমিটার বনাঞ্চল, বাঘের প্রজাতি ১টি। উপ—প্রজাতি ৮টি, ইতিমধ্যে ৩টি উপ—প্রজাতি পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সুন্দরবনে যে বাঘ রয়েছে সেটি প্যানথেরা টাইগ্রিস উপ—প্রজাতি হিসাবে চিহ্নিত। বিশ্ব জুড়ে বাঘের যে ৫টি উপ—প্রজাতি টিকে রয়েছে তার মধ্যে প্যানথেরা টাইগ্রিস প্রজাতির সদস্য সবচেয়ে বেশি।
সুমুদ্র সমতল থেকে সুন্দরবনের বেশীর ভাগ এলাকায় গড় উচ্চত ১মিটারের ও কম। সুন্দরবনের ভিতর ছোট ছোট নদীর আয়তন প্রায় ২০ শতাংশ। এই বিশাল জলরাশি সুন্দরবনের গুরুত্ব পূর্ণ জলজ ইকোসিস্টেম গঠন করেছে। এখানে রয়েছে এই ইকোসিস্টেমের সর্বোচ্চ খাদক প্রাণি লোনা পানির কুমির। রয়েছে বৈচিত্র ময় প্রজাতির মাছ, শামুক, কাঁকড়া আর উল্লেখযোগ্য জলজ সন্তন্যপায়ী। যেমন গাঙ্গেয় ও ইরাবতি শুশক এবং দৃষ্টিনন্দন নখর বিহীন ভোদড়।
২০০৮ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে পশ্চিম সুন্দরবনের কলাগাছি রেঞ্জে পরপর ৩টি বাঘের পোষ্ট মটেম করার সুযোগ আমায় হয়েছিল। বাঘের চামড়া, দাঁত, হাড়, ও অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যাঙ্গ এমনকি পশম অতি মুল্যবান হেতু পোষ্ট মটেম করার সময় প্রত্যেক বারই মানুষ ভিড় করে অনেকেই বাঘের পশম নেওয়ার জন্য বস্ত থাকে। কারণ কুসংস্কার আছে বাঘের পশম দিয়ে কবিরাজরা মাদুলী বানায়।
বাংলাদেশ সরকার সুন্দরবনে এই মহামূল্যবান বিপন্ন প্রাণিটিকে টিকিয়ে রাখা এবং এর সংখ্যা বৃদ্ধি করে সুন্দরবনকে টিকিয়ে রাখার বেশ কিচু প্রকল্প হাতে নিয়েছে তৎমধ্যে ৩টি বনাঞ্চল অভয়ারন্ন হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। এই সমস্ত বনাঞ্চলে সম্পদ আহরণ সীমিত করণ, আধুনিক টহল ব্যবস্থা, ডাকাত, চোরা শিকারির বিরুদ্ধের জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণ। যত অপকর্ম শুধু মাত্র সুন্দরবনের ডাকাত কতৃর্ক হয়ে থাকে। হরিণ ও বাঘ শিকার ও বনের অন্যান্য অপকর্ম ডাকাত দলই করে থাকে। তবে বর্তমানে স্মার্ট পেট্রোলিং চালু হওয়ার কারণে সুন্দরবনে ডাকাতের সংখ্যা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। বাঘের জীবন প্রনালী সম্পর্কে গবেষণা ও বিভিন্ন রোগবালাইয়ের হাত থেকে বাঘকে রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। টাইগার এ্যাকশান প্লান এর মাধ্যমে পাবর্তত্য চট্টগ্রাম বন্য প্রাণির মধ্যে বাঘকে প্রতিষ্ঠিত করা যায় কি—না ইত্যাদি সহ কামেরা ট্রাপিং জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া সুন্দরবন ইকোসিস্টেম ও লাইভলিহোড় সিকিউরিটি (ঝঊঅখঝ) প্রকল্প এবং স্ট্রেংদেনিং রিজিওনাল কো—অপারেশন এর ওয়াইন্ড লাইফ প্রোটেকশন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
এই মহা বিপন্ন প্রানটিকে বাচিয়ে রাখার জন্য সরকারী সহযোগিতা ও জরুরী বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ তৎসহ জন সাধারণের সচেতনতা বোধ সৃষ্টি করা একান্ত আবশ্যক। তাহলে বাংলাদেশের গর্ব ও অংকারের প্রতিক বাংলার বাঘ টিকে থাকবে।

লেখক:
ডাঃ মোঃ আব্দুর রজ্জাক
প্রানি সম্পদ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সার্জন
ভেটেরিনারী সার্ভিস সেন্টার
(পেট এন্ড ভেট)
সাতক্ষীরা ০১৭১২—৬৩২৬৬৯

About news-admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *