ঘুষ গ্রহণের অপরাধে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সাবেক সাঁটলিপিকারের ৭ বছরের কারাদন্ড

ঘুষের টাকা গ্রহণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় খুলনার একটি আদালত সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সাবেক সাঁটলিপিকার এ কে এম শহীদুজ্জামানকে দু’টি পৃথক ধারায় ৭ বছরের কারাদন্ড দিয়েছেন। পাশাপাশি তাকে ৭ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।

সাজাপ্রাপ্ত শহীদুজ্জামান সাতক্ষীরা জেলার পাটকেলঘাটা উপজেলার পারকুমিরা গ্রামের বাসিন্দা মো: সোহরাব উদ্দিনের ছেলে

সোমবার খুলনা বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মো: আশরাফুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো: ইয়াছিন আলী। রায় ঘোষণার সময়ে আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

আদালত সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা সদর থানাধীন দেবনগর বেগম রোকেয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য অনুদান হিসেবে ৩ লাখ টাকা পাওয়ার জন্য ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: মেহেদী হাসান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট আবেদন করেন। আবেদনটি নিয়ে তিনি সাঁটলিপিকার এ কে এম শহীদুজ্জামানের অফিস রুমে যান।

২০১৭ সালের ৩০ জুলাই শহীদুজ্জামান গ্রহণ করে আবেদনপত্রটিতে সিল এবং স্বাক্ষর করে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে বলেন, অনুদান পাইয়ে দিলে সেক্ষেত্রে তাকে শতকরা ৩০ শতাংশ হারে টাকা দিতে হবে। সে সময়ে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্কুলের উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে তাকে তখন ১০ হাজার টাকা অগ্রিম প্রদান করেন। পরবর্তীতে অভিযুক্ত শহীদুজ্জামান তাকে বলে, স্কুলের নামে আরও ২ লাখ টাকা পাইয়ে দিতে পারবো। সেক্ষেত্রে তাকে আরও ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক যোগাযোগ করলেও শহীদুজ্জামান তাকে ঘোরাতে থাকে এবং বাকি টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। এতে তিনি উৎকোচ দিতে রাজি হন।

২০১৮ সালের ৩১ মে অভিযুক্তের সাথে দেখা করলে ওই শিক্ষককে বাকি টাকা দ্রুত দেওয়ার জন্য তাগিদ দেন। বিষয়টি অনৈতিক বিবেচনা করে প্রধান শিক্ষক দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তাদের দ্বারা হাতে নাতে ধৃত করার মনস্থির করেন।

ওই বছরের ৩ জুন প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান এ ব্যাপারে খুলনার দুদক পরিচালকের নিকট আবেদন করেন। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য দুদক কর্মকর্তারা ফাঁদ পাতে।

২০১৮ সালের ১২ জুন সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ কার্যালয়ে ওৎ পাতে দুদক কর্মকর্তারা। ওই দিন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান শহীদুজ্জামানের রুমে প্রবেশ করে এবং পূর্বোল্লিখিত ৫০ হাজার টাকা প্রদান করতে চাইলে অভিযুক্ত শহীদুজ্জামান বলে, এক লাখ টাকা উৎকোচ না দিলে তার কাজ হবে না। এ কথা শুনার পর তিনি বিভিন্নস্থান হতে আরও ৫০ হাজার টাকা যোগাড় করে তাকে প্রদান করে। টাকাটি নিয়ে শহীদুজ্জামান তার প্যান্টের বাম পকেটে রাখে। ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি প্রধান শিক্ষক সংকেত দিয়ে জানানোর সাথে সাথে শহীদুজ্জামানের রুমে প্রবেশ করে দুদক কর্মকর্তারা এবং তার নিকট থেকে ঘুষের ১ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় ওই দিন দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয় খুলনার সহকারী পরিচালক মো: মহতাব উদ্দিন বাদী হয়ে সাতক্ষীরা থানায় মামলা দায়ের করেন, যার নং ২৫। একই বছরের ২৮ নভেম্বর সমন্বিত জেলা কার্যালয়, খুলনা দুর্নীতি দমন কমিশন সহকারী পরিচালক মো: শাওন মিয়া শহীদ্জ্জুামানকে আসামি করে আদালতে একটি অভিযোগ পত্র দাখিল করেন এবং একই আদালতে ২০২০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর চার্জ গঠন করা হয়।

 

About news-admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *