সুন্দরবনের চর দখল করে গড়া হচ্ছে রিসোর্ট সেন্টার ও ট্যুরিস্ট পয়েন্ট

সামিউল মনির, শ্যামনগর: সুন্দরনের চর দখলে নিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে রিসোর্ট সেন্টার ও ট্যুরিস্ট পয়েন্ট। চরের গাছ কেটে সাবাড়ের পর পায়ে চলাচলের রাস্তাসহ সেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে ভ্রমনপিপাসুদের রাত্রযাপনের উপযোগী আবাসস্থল। এছাড়া চারপাশে বাঁধ তৈরী করে চরের মধ্যে ‘লেক সাদৃশ’ জলাধার তৈরীর পাশাপাশি রাস্তার শেষপ্রান্তে নির্মিত হচ্ছে ‘জেঠি’ বা পল্টুন। সুন্দরবন ভ্রমনে আসা পর্যটকরা যেখান থেকে একই প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট নৌযানে চড়ে ঘুরে বেড়াবে সুন্দরবন।
সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে এমন রিসোর্ট সেন্টার বা ট্যুরিস্ট পয়েন্ট নির্মিত হচ্ছে পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের মুন্সিগঞ্জ এলাকায়। বনবিভাগের মুন্সিগঞ্জ অফিস হতে মাত্র পাঁচশত মিটার দক্ষিনে মালঞ্চ নদীর তীরে মৌখালী এলাকায় প্রায় আট মাস ধরে বিশাল এ কর্মযজ্ঞ চললেও বনবিভাগ কিংবা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কেউ নাকি কিছু জানে না।
স্থানীয়দের অভিযোগ খুলনার জনৈক মাহাবুব আলম প্রায় ছয় মাস ধরে মালঞ্চ নদীর তীরে এএন্ডএন ট্যাভেল এন্ড ট্যুরস নামীয় রিসোর্ট সেন্টার ও ট্যুরিস্ট পয়েন্ট নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। এর আগে সেখানকার বাঁধ প্রশস্থ এবং উঁচু করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কতৃক সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়। পরবর্তীতে বহিরাগত এক ব্যক্তি এসে প্রভাবশালী ট্যুরিস্ট ব্যবসায়ী পরিচয়ে ডাম্পিংকৃত উক্ত বাঁধের উপর স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন।
এসব গ্রামবাসীর অভিযোগ সুন্দরবন থেকে ভেসে আসা বিভিন্ন গাছের ফুল ও ফল জমে চরে কৃত্রিম বনভুমি সৃষ্টি হয়। সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের পাশাপাশি সামাজিক বনায়নের সাথে সংশ্লিষ্টরা কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট এসব বনভুমি সংরক্ষণে নানা উদ্যোগ নেয়। অথচ চরে জম্মানো গাছ কেটে সাবাড়ের পাশাপাশি শুধুমাত্র ব্যবসা করতেই সেখানে রিসোর্ট সেন্টার ও ট্যুরিস্ট পয়েন্ট গড়ে তোলা হচ্ছে।
মুন্সিগঞ্জ গ্রামের কালিপদ বিশ্বাস জানান সেখানে ট্যুরিস্ট পয়েন্ট হলে বহিরাগতদের আনাগোনা মারাত্মকভাবে বেড়ে যাবে। ভালো মানুষের সাথে সাথে বদঅভ্যাসে জড়িতদেরও আনাগোনা বহুগুনে বৃদ্ধি পাবে। তাতে এলাকার পরিবেশ মারাত্বক ক্ষতির মুখে পড়বে। এছাড়া চরের গাছ-গাছালী কেটে সাবাড়ের ফলে সেসব এলাকার বাঁধ অতিশয় ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে।
স্থানীয় গ্রামবাসী আব্দুল্লাহ ও রফিকুল ইসলামসহ কয়েকজনের দাবি সুন্দরবনে আাবারও জলদস্যুদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব দস্যুরা সাধারণত প্রকাশ্যে নিচে নামা কিংবা উপরে উঠে আসতে পারে না। লোকারয়ের বাইরে এমন অঁজ পাড়াগায়ের মধ্যে রিসোর্ট সেন্টার বা ট্যুরিস্ট পয়েন্ট হলে বহিরাগতদের নিয়ে তারাও নিজেরাও শংকার মধ্যে পড়বে।

 


এদিকে পরিবেশ নিয়ে কাজে সম্পৃক্ত শাহিন বিল্লাহ জানান, যত্রতত্র রিসোর্ট সেন্টার বা ট্যুরিস্ট পয়েন্ট হিতে বিপরীত হতে পারে। এমনিতেই অসচেতন পর্যটকদের পতিত প্লাস্টিক ও পলিথিনে সুন্দরবন মারাত্মক ঝুঁকি মোকাবেলা করছে। এর উপর এভাবে সরকারি অনুমোদন ছাড়া যে কেউ মন চাইলেই রিসোর্ট সেন্টার বা ট্যুরিস্ট পয়েন্ট করলে তার ফল খুবই খারাপ হবে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে এএন্ডএন ট্রাভেল এন্ড ট্যুরস-এর মালিক মাহাবুব আলম জানান, তিনি ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং উপজেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি নিয়েছেন। কাগজপত্রের প্রমানপত্র দেখতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে প্রতিবেদককে বকা নিয়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাব-ডিভিশনাল প্রকৌশলী ইমরান সরদার জানান বিষয়টি জানতে পেরে প্রায় ছয় মাস আগে উক্ত স্থাপনা নির্মণ কাজ বন্ধে তাদেরকে চিঠি দেয়া হয়। পাউবো’র জায়গায় কারও কোন রিসোর্ট সেন্টার বা ট্যুরিস্ট পয়েন্ট করার অনুমতি দেয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলে দ্রুতই এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. রনী খাতুন জানান, আপনারা সংশ্লিষ্টদের কাছে আমার লিখিত অনুমতি দেখতে বলেন। তারা কারও থেকে কোন অনুমতি না নিয়েই হয়ত এমনটা করছে। দ্রুতই পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ব্যবস্থা নিতে বলা হবে।

About news-admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *