ক্রাইমবাতা রিপোট: সাতক্ষীরা শহরের পথচারীরা ফুটপাত দখলের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন শহরবাসি। সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের অধিকাংশ ফুটপাত দখল করে নানান পণ্যের দোকান সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা।
বড়বাজারের খালপাড়ের দোকান, মেডিকেলের সামনের সড়কের দোকান, সঙ্গীতা মোড়, খুলনা রোড মোড়, পাকাপোল মোড়Ñ সব জায়গাতেই ফুটপাতগুলো দখল হয়ে গেছে। ফলে মানুষ ফুটপাত ধরে স্বাভাবিকভাবে চলতে পারছে না। বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে সড়কে নামছে পথচারীরা। এতে যেমন যানজট সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ছে।
এসব দোকানে ক্রেতাদের ভিড় বাড়লে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাতজুড়ে বিরানির দোকান, জামা-কাপড়ের দোকান, জুতা-স্যান্ডেলের দোকান দেখা গেছে। কোথাও কোথাও ফুটপাত ছেড়ে প্রধান সড়কেও দোকান সাজানো। পথচারীরা অভিযোগ করছেন, এসব দোকানের কারণে তারা জীবনঝুঁকি নিয়ে সড়কে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন। রাস্তাগুলো ছোট-বড় দোকান দ্বারা ঘেরা থাকায় রাস্তাও সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) জানায়, ২০২৪ সালে জেলায় ৫৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫৮জন, আহত হয়েছেন অন্তত ৬৩ জন। তাদের মধ্যে অনেকেই স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন।

মুনজিতপুর এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, “পৌরসভার লাখ লাখ টাকার ফুটপাত কোন কাজে আসছে না, বরং আরও সমস্যার সৃষ্টি করছে। লাবণী মোড়ে বিরানী দোকানগুলোর হাঁড়িগুলো পর্যন্ত রাখা থাকে রাস্তায়। প্রশাসন একটু নজর দিলে এই দখলদাররা এভাবে দোকান গড়ে রাখতে পারত না। কিছুদিন পরপর সঙ্গীতা মোড়ের চায়ের দোকান উচ্ছেদ করা হয়, পরে আবার একইভাবে গড়ে ওঠে। মেডিকেলের সামনেও একই চিত্র।”
সমাজকর্মী সাজেদুল ইসলাম বলেন, “ফুটপাত মূলত পথচারীদের নিরাপদ চলাচলের জন্য নির্মিত। কিন্তু আজ শহরের ফুটপাত দখল হয়ে গেছে দোকানপাট ও ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের হাতে। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে রাস্তায় নামছে। এটি শুধু যানজট বাড়াচ্ছে না, দুর্ঘটনার ঝুঁকিও অনেকাংশে বৃদ্ধি করছে। প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় পরিস্থিতি ক্রমেই অব্যাহত হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “ফুটপাত দখলমুক্ত করতে শুধু উচ্ছেদ অভিযান যথেষ্ট নয়। বিকল্প ব্যবস্থা যেমন হকার মার্কেট বা সঠিক জায়গায় ভ্রাম্যমাণ দোকানের অনুমোদন প্রয়োজন। পাশাপাশি নিয়মিত প্রশাসনিক নজরদারি চালালে ফুটপাতকে পথচারীদের জন্য নিরাপদ রাখা সম্ভব হবে।”
সাতক্ষীরা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) প্রশাসন শাহাবুদ্দিন মোল্লা বলেন, “রাস্তা এমনিতেই সরু, তার ওপর ফুটপাত দখল হয়ে গেছে। লাবণী মোড়ে বিরিয়ানি দোকানের পাতিল, বেকারির ফ্রিজ সব ফুটপাতে রাখা। ফলে মানুষ ফুটপাত ব্যবহার করতে না পেরে রাস্তায় নেমে যায়, রাস্তা আরও সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এসব দখল উচ্ছেদ করা গেলে অনেকটা স্বস্তি মিলবে।”
সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রশাসক মাশরুবা ফেরদৌস বলেন, “জেলা প্রশাসকের আইন-শৃঙ্খলা মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছে। বর্তমানে পৌরসভার ৬৯৫ টা লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। আরও লাইসেন্স দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে যাতে পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। ফুটপাতের বিষয়ে এর আগেও জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।”
স্থানীয়রা মনে করছেন, শুধু উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে দায় সারলেই হবে না। ফুটপাতকে স্থায়ীভাবে দখলমুক্ত রাখতে প্রশাসনের নিয়মিত নজরদারি এবং বিকল্প ব্যবস্থা জরুরি। না হলে শহরের প্রধান প্রধান সড়কে চলাচল ও পথচারীর নিরাপত্তা ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে।
ক্রাইম বার্তা