নিজস্ব সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় শিক্ষার মানোন্নয়নে জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বারবার কঠোর নির্দেশনা দিলেও তা মানছেন না অনেক শিক্ষক। প্রকাশ্যে না হলেও গোপনে চলছে কোচিং বাণিজ্যের জমজমাট ব্যবসা। জেলার স্বনামধন্য নবারুণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে গড়ে তুলেছেন অবৈধ টিউশনি সাম্রাজ্য।
অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম ডে-নাইট কলেজের সামনে বড় বাজার সংলগ্ন একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় প্রায় ১০ জন শিক্ষার্থীকে মাসিক ২ হাজার টাকা করে পড়ান। এছাড়া সাতক্ষীরা তাঁর আলাদা ব্যাচ রয়েছে। ইংরেজি শিক্ষক হওয়ার কারণে তিনি প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করছেন তাঁর কাছে পড়তে।
অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, “স্কুলের স্যারদের কাছে না পড়লে ক্লাসে অপমান করেন। এমনকি পরীক্ষায় পাশ করানোর বিষয়েও হুমকির মুখে থাকতে হয়।”
সহকারী শিক্ষক আক্তারুজ্জামান প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে ৮টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত সুলতানপুর এলাকায় আব্দুর রশিদের বাড়িতে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সব বিষয়ে পড়ান। মাসিক ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা আদায় ছাড়াও পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্রে দাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
একইভাবে সহকারী শিক্ষক এমএম নওরোজ সুলতানপুরে এক প্রিন্স নামের ব্যক্তির বাড়িতে সপ্তাহে তিনদিন মাগরিবের নামাজের পর কোচিং করান। সেখানে গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞান পড়ানো হয়।
অন্যদিকে সহকারী শিক্ষক কবির আহমেদ সুলতানপুর ঝিলপাড়া এলাকায় একাধিক বাসায় ব্যাচ পরিচালনা করছেন। অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন, কোচিংয়ের পাশাপাশি তিনি রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সাথেও জড়িত। তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের এজাহার রয়েছে এবং তিনি ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি বলেও জানা গেছে। বর্তমানে তিনি স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক গাজী বলেন, “২০১২ সালের কোচিং নীতিমালা সম্পর্কে শিক্ষকদের অবগত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশনাও জানানো হয়েছে। তবে কে কোথায় কোচিং করছে— সে বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।”
এর আগে জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ ঘোষণা দিয়েছিলেন— সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কোনো কোচিং সেন্টার চালু রাখা যাবে না। পাশাপাশি শিক্ষকরা নিজ বাড়ি বা অন্যত্র কোচিং করালে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিন্তু বাস্তবে সেই নির্দেশনা অমান্য করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন একাধিক শিক্ষক। এ ঘটনায় অভিভাবক ও সচেতন মহল তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের দাবি, “যারা সরকারি চাকরিজীবী হয়েও নিয়ম-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিতে হবে।”
ক্রাইম বার্তা