সাতক্ষীরা ১ আসনে জামায়াতের প্রার্থী অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ কে হারানো অসম্ভব হয়ে উঠছে!

মো: সাইদুজ্জামান শুভ ( সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি): দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী উপজেলা তালা ও কলারোয়া নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-১ আসনে জমে উঠেছে নির্বাচনী উত্তাপ। চার মাস আগে জামায়াত সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠ গরম করে দিয়েছে।
জামায়াতের ইসলামির ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত সাতক্ষীরা – ০১ ( তালা -কলারোয়া) আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ মনোনয়ন পাওয়ায় তৃণ-মূলের কর্মীরা বেশ উচ্ছ্বসিত ও উজ্জীবিত।
স্থানীয়রা বলছেন—রাস্তাঘাট, জলবদ্ধতা, কর্মসংস্থান, মাদক দমন আর শিক্ষার উন্নয়নই এবার তাদের মূল দাবি। সবকিছু মিলিয়ে সাতক্ষীরা–১ আসন আবারও সাতক্ষীরা জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসন হয়ে উঠেছে।
ইতিমধ্যে জামায়াত প্রার্থী অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ কে নিয়ে এবার মাঠে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে । এলাকাজুড়ে এখন তার প্রচারণা নির্বাচন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে।
অধ্যক্ষ মোঃ ইজ্জত উল্লাহ নিজ রাজনৈতিক পরিচয়, অতীত কাজ এবং এলাকার উন্নয়ন-পরিকল্পনা তুলে ধরে ভোটারদের কাছে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সাতক্ষীরা–১ আসনের রাজনৈতিক ইতিহাসও বেশ ঘনঘটার। তালা, কলারোয়া ও পাটকেলঘাটা অঞ্চল নিয়ে গঠিত এই আসনে রয়েছে ২৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা। এবারের নির্বাচনে ভোটার প্রায় ৪ লাখ ৯৩ হাজার, যা গত নির্বাচনের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
এ আসনটি সবসময়ই হাতবদল হয়েছে বড় বড় দলের মধ্যে—কখনো আওয়ামী লীগ, কখনো বিএনপি, কখনো জামায়াত, আবার কখনো জাতীয় পার্টি।
রাজনৈতিক ইতিহাস বলছে—১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের সৈয়দ কামাল বখত সাকী, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির সৈয়দ দিদার বখত, ১৯৯১ সালে জামায়াতের আনসার আলী, ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিএনপির হাবিবুল ইসলাম হাবিব, ১৯৯৬ সালের জুনে আওয়ামী লীগের সৈয়দ কামাল বখত সাকী।
এ ছাড়া, ১৯৯৯ সালের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের বি. এম. নজরুল ইসলাম, ২০০১ সালে বিএনপির হাবিবুল ইসলাম হাবিব, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের শেখ মুজিবুর রহমান, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ওয়ার্কার্স পার্টির মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের ফিরোজ আহমেদ স্বপন নির্বাচিত হন।
বিগত চার দশকের এই ওঠানামা প্রমাণ করে, সাতক্ষীরা–১ সবসময়ই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি আসন। তবে এবারের চিত্রটা ভিন্ন—আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি মাঠে নেই বললেই চলে। এতে পুরোপুরি বদলে গেছে নির্বাচনী প্রতিযোগিতা।
এ প্রসঙ্গে তালা- কলারোয়ার সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ বলেন, তালা–কলারোয়ায় জলাবদ্ধতা ভয়াবহ। এটি নিরসনে বড় ধরনের প্রকল্পই একমাত্র সমাধান। এ ছাড়া, রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, অবকাঠামোহীন স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা, হাসপাতালের সীমিত সেবা—এসব উন্নয়ন করাই আমার পরিকল্পনা।অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ, জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ দীর্ঘ রাজনৈতিক পথ অতিক্রম করে দলটির শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছেছেন। ১৯৭৫ সালে ইসলামী সাহিত্য পড়ে ইসলামী রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ছাত্রশিবিরের সদস্য হন।
পরবর্তীতে তিনি জেলা সেক্রেটারি, জেলা আমির, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২০ সাল থেকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য। ব্যক্তিগতভাবে তিনি কলারোয়া উপজেলার ফয়জুল্লাহপুর গ্রামের বাসিন্দা তিনি। তার পরিবারে এক ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে।
অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ বলেন, ৫ আগস্টের পরও একদল সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ-দখলদার সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। মানুষ যাতে নিরাপদে থাকতে পারে—এটাই নির্বাচিত হলে আমার প্রথম লক্ষ্য। শান্তিতে ঘুমাতে পারবে, ব্যবসা করতে পারবে—এটাই চাই।
নির্বাচনী মাঠে দুই প্রার্থীর অতীত, অভিজ্ঞতা ও উন্নয়ন-দর্শন ঘিরে ভোটারদের মধ্যে চলছে তুমুল আলোচনা। এ আসনের লড়াই হবে শান্তিপূর্ণ উন্নয়ন বনাম দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার একটি বড় পরীক্ষা—এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় ভোটাররা।

About news-admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *