বৈশ্বিক পরিবর্তনে ঝুঁকি মোকাবেলায় সাতক্ষীরায় সিঙ্গারা চাষ বাড়ছে

আবু সাইদ বিশ্বাস, সাতক্ষীরাঃ মৌসুমি ফল “পানি সিংড়া” চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে সাতক্ষীরার চাষিরা। স্বল্প পরিশ্রম ও অধিক লাভ হওয়ায় পতিত জলাবদ্ধ জমিতে পানিফল চাষে আগ্রহ বেড়েছে এখানকার কৃষকদের। যে কারনে প্রতি বছর বেড়েই চলেছে এর চাষ। কৃষিতে ‘স্মার্ট এগ্রিকালচার’ বৈশি^ক পরিবর্তনে ঝুঁকি মোকাবেলায় খাপখাইয়ে নেয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে এখানকার কৃষকদের মাঝে। লবণাক্ততা ও পানিবদ্ধতা কৃষি উৎপাদনে বাধার সৃষ্টি করে আসলেও উত্তরণে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের প্রচেষ্টায় জেলায় ‘স্মার্ট এগ্রিকালচার’ পদ্ধতি অনুসরণ করে একই জমিতে পর্যায়ক্রমে ধান ও সিঙ্গারা ফল চাষে সাফল্য অর্জন সম্ভব হচ্ছে। যে জমি ও পানি কৃষকের কাছে জঞ্জাল ছিল তা এখন আর্থিক সুফল এবং পুষ্টি জোগানে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। চাষের জমি যা বর্ষায় পানিবদ্ধ থাকে এমন জমিতে মৌসুমি সিঙ্গারা ফল চাষে সাফল্য আসছে।বিগত ১০—১২ বছর ধরে এই অঞ্চলে সিঙ্গারা চাষ সম্প্রসারণ হচ্ছে।
ঝুঁকি মোকাবিলায় দেশের দক্ষিণ—পশ্চিমাঞ্চলের এ জেলা বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। ২০২৩—২৪ সালে জেলায় যেখানে ১৫০ হেক্টর জমিতে পানিফল চাষ হয়েছে। সেখানে ২০২১—২২ সালে চাষ হয় ১০৬ হেক্টর জমিতে। পর্যবেক্ষণে দেখা যায় এই ফল সামান্য যত্ন ও ন্যূনতম খরচে চাষ করা যায়। বিশেষ করে কাজের সুযোগ সৃষ্টি ও আয় বৃদ্ধিতে সিঙ্গারা ফল চাষ বেশ অবদান রাখছে।
পানিফল চাষি রফিক তরফদার জানান, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি মাড়িয়ে প্লাবিত জমিতে ফসল উৎপাদন সহনশীল কৃষির বাস্তব উদাহরণ তারা। জমিতে পানি আসতেই হালকা চাষ দিয়ে বীজ বপন করা হয়। ক্রমান্বয়ে পানি বাড়ে সাথে সিঙ্গারা গাছও বৃদ্ধি পেতে থাকে। গাছের পাতা জলে ভাসতে থাকে। বাড়তি জল ফসলের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় না। দো—আঁশ মাটিতে এ উদ্ভিদ ভাল জন্মে। মূলত সাতক্ষীরার জলবায়ু সিঙ্গারা চাষের জন্য উপযোগী, উদ্ভিদ জন্মানোর অভিযোজন ক্ষমতা রয়েছে।
পুষ্ঠি বিশেজ্ঞরা জানান, খাদ্যোউপযোগী প্রতি—১০০ গ্রাম পানিফলে ৮৪.৯ গ্রাম জলীয় অংশ, মোট খনিজ পদার্থ ০.৯ গ্রাম, ০.৬ গ্রাম আঁশ, ৬৫ কিলো ক্যালরি খাদ্যশক্তি, ২.৫ গ্রাম আমিষ, ০.৯ গ্রাম চর্বি , ১১.৭ গ্রাম শর্করা, ১০ মি. গ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৮ মিলিগ্রাম লৌহ, ০.১৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি—১, ০.০৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি—২ এবং ১৫ মিলি গ্রাম ভিটামিন সি বিদ্যমান থাকে।
দেবহাটার পানিফল চাষি রইছুল ইসলাম বলেন, সাড়ে তিন বিঘা জমি লিজ নিয়ে চার বছর ধরে এই ফল চাষ করছি। যা খরচ হয় তার থেকে দ্বিগুণ লাভ হয়। এ বছর ৫ বিঘা জমিতে চাষ করছি। আশা করছি খরচ খরচা বাদে লাখ খানিক টাকা লাভ হবে।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ—পরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, পানিফল একটি অপ্রধান ফল হলেও এটি সাতক্ষীরা জেলায় এটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। কৃষকরা এক বিঘা জমিতে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ করে ফল বিক্রি করতে পারেন ৪০ হাজার টাকার। এতে তার ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ হয়। তিনি বলেন, আগামীতে কৃষকরা যেন তাদের পরিত্যক্ত জলাবদ্ধ জায়গায় পরিকল্পিতভাবে পানিফল চাষ করে আত্মসামাজিক উন্নয়ন ঘটাতে পারেন সে জন্য কৃষি বিভাগ থেকে তাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
কৃষি বিজ্ঞানীদের সৃজনশীল চিন্তা এবং সম্প্রসারণকর্মী ও কৃষকের প্রচেষ্টায় সাতক্ষীরা জেলায় সিঙ্গারা চাষের অনেক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আগামীর কথা বললে সাতক্ষীরা অঞ্চলকে নিয়ে যুতসই “ক্লাইমেট স্মার্ট” কৃষির পরিকল্পনা করতে হবে। তাই আগামীর কৃষির জন্য অঞ্চলভিত্তিক কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে। বলা হয় এই সাতক্ষীরা অঞ্চলের কৃষক পানিবন্ধভূমিতে সিঙ্গারা আর প্রান্তিক অফলা জমিতে স্থায়ী ফল বাগান তৈরি করছে।

আবু সাইদ বিশ^াস
সাতক্ষীরা
২০/৭/২৫

 

 

About news-admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *