ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্যানেলের নাম ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’। এই প্যানেলের ভিপি (সহসভাপতি) প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম। তাঁকে কেন্দ্রে রেখেই মূলত প্রচার চালাচ্ছে সংগঠনটি। ডাকসু নির্বাচন সামনে রেখে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আসিফ হাওলাদার।
সাদিক কায়েম: শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে আমরা আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশাগুলো শুনছি, সমস্যা সমাধানে আমাদের রূপরেখাগুলো তাঁদের সামনে তুলে ধরছি। আমরা বিভিন্ন হলের কক্ষে কক্ষে যাচ্ছি, বিভাগ-ইনস্টিটিউটে যাচ্ছি। এ ছাড়া অনলাইনেও প্রচার চলছে। এক বছর ধরে আমরা শিক্ষার্থীবান্ধব বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। হোক সেটা আর্থিক সংকট, নিরাপত্তা সংকট, একাডেমিক জীবনের কোনো সংকট৷ ফলে শিক্ষার্থীরা আমাদের চেনেন।
প্রচারে গিয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পাচ্ছি।
প্রকাশ্যে এসে ডাকসুর নির্বাচনী লড়াইয়ে ছাত্রশিবির

সাদিক কায়েম: জুলাই বিপ্লবের সময় ১৭ জুলাই শিক্ষার্থীরা বলেছেন, তাঁরা হলে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি (কমিটি গঠন) চান না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ই–মেইলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মতামত নিতে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু সেটা এখনো করা হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে হলে আলাদা করে প্যানেল দেওয়া বা সাংগঠনিক কমিটি গঠন করা মানে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। অবশ্য নির্বাচন ঘিরে এখন আমাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের অনেকেই যোগাযোগ করছেন। যাঁরাই যোগাযোগ করছেন, আমরা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সহযোগিতার মধ্য দিয়ে নির্বাচনটা করার চেষ্টা করছি।
সাদিক কায়েম: এটা একটা প্রোপাগান্ডা (অপপ্রচার)। আমাদের প্যানেল নারী শিক্ষার্থীদের ভোট সবচেয়ে বেশি পাবে। ছাত্রীদের ভোটের ব্যাপারে আমরা কনফিডেন্ট (আত্মবিশ্বাসী), তবে ছাত্রদের ভোটের ব্যাপারে আমরা কনফিউজড (সংশয়গ্রস্ত)। জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও আমাদের নিয়মিত কথা হচ্ছে। আমি সেখানে গিয়ে ইতিমধ্যে প্রচার চালিয়েছি। আমার নিজের বেড়ে ওঠা খাগড়াছড়িতে। আমার বাড়ির পাশে হিন্দু বন্ধুর বাড়ি, এর পাশে চাকমা বন্ধুদের বাড়ি। আমাদের মধ্যে চমৎকার সামাজিক সম্পর্ক আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নেও আমরা একসঙ্গে কাজ করব।
নেতৃত্বের যোগ্যতা, সততা ও দক্ষতার ওপর জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীরাও আস্থা রাখবেন বলে মনে করছি। যাঁদের সঙ্গেই কথা হয়েছে, সবাই এ ব্যাপারে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।
৩৬ জুলাইয়ের সঙ্গে মিল রেখে ৩৬ অঙ্গীকার
সাদিক কায়েম: আমরা বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের কথা বলেছি, অন্তর্ভুক্তির কথা বলছি। আমাদের প্যানেল সেভাবেই সাজানো হয়েছে, আমরা কাজও করছি সেভাবেই। আমাদের নিয়ে যারা সমালোচনা করে, আমরা তাদেরও রেখেছি। যার যে জায়গায় এক্সপার্টিজ (দক্ষতা) আছে, তাকে আমরা প্যানেলে সেই জায়গায় রাখার চেষ্টা করেছি।
চাকমা সম্প্রদায়ের একজন প্রতিনিধি, হিজাবি-নন হিজাবি নারীদের প্রতিনিধি, শারীরিক প্রতিবন্ধীসহ নানা ধরনের প্রতিনিধি আমাদের প্যানেলে আছেন। আমাদের সঙ্গে যাঁদের মতের অমিল আছে, তাঁদেরও প্যানেলে রাখা হয়েছে। আমাদের অনেক বড় একটা স্ট্রেংথ (শক্তি) হচ্ছে এই উদারতা এবং বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য বিনির্মাণের চেষ্টা। ডানপন্থী, বামপন্থী, মধ্যমপন্থী—সবাইকে যে দেশের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে, সেই বার্তাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি আমাদের প্যানেলের মাধ্যমে।
আদর্শিকভাবে এবং আইডিয়া (ধারণা) ও কমপিটেন্স (যোগ্যতা) দিয়ে মোকাবিলা করতে না পেরে অনেকে আমাদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছে। ক্রমাগত আমাদের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ও ট্যাগিং করা হচ্ছে। আমাদের কীভাবে ঠেকানো যায়, তা নিয়ে অনেকে পড়ে আছে। আমরা এর বিরুদ্ধে কথা না বলে, কোনো বিষোদ্গারে না গিয়ে শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানের ও স্বপ্নের ক্যাম্পাসের রূপরেখা দেখাচ্ছি। এটাকে আমাদের একটা দুর্বলতা বলতে পারেন।
অন্যের ওপর দায় না চাপিয়ে অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন: আবু সাদিক

সাদিক কায়েম: আমরা শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া ও উচ্ছ্বাস দেখতে পাচ্ছি। জুলাই বিপ্লবের পরে অনেক নেতৃত্ব বিভিন্নভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। সেই জায়গায় এক বছর ধরে শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলাম আমরা এবং শিক্ষার্থীবান্ধব যতগুলো কাজ করেছি, জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষাকে সব জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
আমরা শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের ক্যাম্পাস গড়ার পথযাত্রী হব। আমরা নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়তে চাই, বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস অবশ্যই গড়তে হবে। তার আগে আমরা থামব না।
সাদিক কায়েম: আপনাকেও ধন্যবাদ।
ক্রাইম বার্তা