॥ হারুন ইবনে শাহাদাত ॥
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন নিয়ে চেম্বার জজ আদালতের স্থগিতাদেশ বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আদালতের এ যুগান্তকারী ও সাহসী রায়কে জনগণ স্বাগত জানিয়েছেন। হাসিনার আমলে আদালতের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছিলো। এ রায়ের পর সেই দুঃসময়ের কথা মনে করে অনেকে অশ্রুসিক্ত হয়েছেন। দুনিয়ায় ন্যায়বিচার পাওয়ার শেষ ভরসা আদালতের প্রতি আস্থা ফিরে পেয়ে তারা নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। এ প্রতিবেদককে অনেকেই মোবাইল করে কান্নাভেজা কণ্ঠে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন।
সবার চোখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দিকে। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে। আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর এবার ডাকসুর ২৮টি পদের বিপরীতে মোট ৪৭১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এর মধ্যে নারী প্রার্থী আছেন ৬২ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী সিনেট চৌধুরী ভবনে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়ের সামনে এক ব্রিফিংয়ে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনে ২৮ জন প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। এছাড়া প্রাথমিক বাছাই প্রক্রিয়ায় বাদ পড়া ১০ জন প্রার্থী আপিল না করায় তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে চূড়ান্তভাবে ৪৭১ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
প্রতিদ্বন্দ্বী উল্লেখযোগ্য প্যানেল
প্রতিদ্বন্দ্বী উল্লেখযোগ্য প্যানেলগুলো হলো- ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ভিপি প্রার্থী মো. আবু সাদিক কায়েম। তিনি সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক। এই প্যানেল থেকে জিএস পদে শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদকে প্রার্থী করা হয়েছে। এজিএস পদে শিবিরের প্রার্থী সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি মহিউদ্দিন খান।
ছাত্রদলের প্যানেলে ভিপি পদে প্রার্থী মো. আবিদুল ইসলাম খান। তিনি সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদে শেখ তানভীর বারী হামিম ও এজিএস (সহ-সাধারণ সম্পাদক) পদে তানভীর আল হাদী মায়েদকে মনোনয়ন দিয়েছে ছাত্রদল। হামিম ছাত্রদলের কবি জসীমউদ্দীন হল শাখার আহ্বায়ক আর তানভীর বিজয় একাত্তর হল শাখার আহ্বায়ক।
বামপন্থী সাত ছাত্র সংগঠনের সমর্থিত প্রতিরোধ পর্ষদে ভিপি পদে প্রার্থী করেছে শেখ তাসনিম আফরোজকে। তিনি ২০১৯ সালের নির্বাচনে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্যানেল দিয়ে শামসুন নাহার হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। এই প্যানেলের জিএস প্রার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বসু। আর এজিএস পদে প্রার্থী করা হয়েছে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেলকে।
স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের প্যানেল থেকে ভিপি পদে লড়ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। জিএস পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন খান মাহমুদুল হাসান, আল সাদী ভূঁইয়া ও মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি। গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ-সমর্থিত বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের প্যানেলে জুলাই অভ্যুত্থানের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল কাদেরকে ভিপি ও আরেক সমন্বয়ক মো. আবু বাকের মজুমদারকে জিএস প্রার্থী করা হয়েছে।
প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, ডাকসুতে ৪৭১ প্রার্থীর মধ্যে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৪৫ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯ জন, সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২৫ জন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে ১৭ জন, কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ১১ জন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে ১৪ জন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে ১৯ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ১২ জন, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ৯ জন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১৩ জন, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে ১২ জন, সমাজসেবা সম্পাদক পদে ১৭ জন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে ১৫ জন, মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক পদে ১১ জন, ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক পদে ১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এছাড়া ১৩টি সদস্য পদে ২১৭ জন প্রার্থী হয়েছেন। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘেঁটে দেখা গেছে, এবার ডাকসুর বিভিন্ন পদে ৬২ জন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। যাদের মধ্যে ভিপি পদে ৫ জন, জিএস পদে একজন, এজিএস পদে ৪ জন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে ২ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ১ জন, কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ৯ জন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে ৩ জন, ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক পদে ২ জন, সমাজসেবা সম্পাদক পদে ১ জন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১ জন, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ৩ জন, সাহিত্য ও সংস্কৃতিক পদে ২ জন, মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক পদে ৩ জন এবং সদস্য পদে ২৫ জন নারী প্রার্থী রয়েছেন। ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেল ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের পক্ষে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সমর্থন লক্ষ করা যাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের’ কাজে ঈর্ষান্বিত হয়ে ‘একটি অংশ’ তাদের চরিত্র হননের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ভবনের সামনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি। ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের’ সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিটের ঘটনায় জরুরি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। পরাজিত ও পতিত হাসিনা সরকারের ছাত্র সংগঠনটি সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গি কর্মকাণ্ডের কারণে নিষিদ্ধ হওয়ার পর তারা বিভিন্ন দলে বিশেষ করে বাম দলে আশ্রয় নিয়ে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে। এ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তারা ডাকসু নির্বাচন বন্ধ ও বাতিল করতে চাচ্ছে। গত ২৯ আগস্ট সাপ্তাহিক সোনার বাংলার এ প্রতিবেদক গোয়েন্দা সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ ষড়যন্ত্রের শঙ্কার কথা তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। প্রতিবেদক সাথে সাথে এ ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় প্রশাসনকে প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা অনেক যাছাই-বাছাই করে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছেন। তারপরও কারো কোনো আপত্তি থাকলে তা বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত নির্বাচন কমিশনকে জানানোর আগেই আদালতে চলে যায়- এসব ষড়যন্ত্রেরই অংশ।
পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, কোনো রাজনৈতিক ইস্যু রাজনৈতিকভাবে সমাধানের চেষ্টা না করে সরাসরি আদালতে যাওয়া কোনো ভালো ফলফল বয়ে আনে না। সাধারণত স্বৈরাচারী শাসকরাই ‘আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে স্বার্থসিদ্ধি করতে চায়, যা শেষ পর্যন্ত বুমেরাং হয়। হাসিনার ইঙ্গিতে আদালত এ অপকর্ম করতো। সর্বশেষ কোটা সংস্কার নিয়ে আদালত মন্তব্য করেছিলেন, ‘মিছিল করে রায় বদলানো যায় না। জুলাই-আগস্টের বিপ্লবীরা এ কথা প্রমাণ করেছে। তারা এখনো সবাই সজাগ। এমন পরিস্থিতি তদন্তের আগে হাই কোর্ট নির্বাচন স্থগিত করেছিলেন। যার ফলে দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনা এবং ব্যাপক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছিল। অবশ্য পরে চেম্বার জজের নির্দেশে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করায় পরিস্থিতি শান্ত হতে শুরু করেছে।
ঢাবি ভিসি অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেছেন, ডাকসু নির্বাচন যদি কেউ বা কোনো পক্ষ বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তাহলে পরিষ্কারভাবে কে কী করেছে, সবকিছু জানিয়ে দেবেন বলে হুঁশিয়ার করেছেন। তিনি বলেছেন, পুরো জাতি ডাকসু নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। ভালো পরিবেশে ভোট আয়োজনের চেষ্টা চলছে। কমিশনের দিকনির্দেশনায় সব হচ্ছে। সব অংশীজনের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান আরও বলেন, জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে অন্যায় দেখলে প্রতিহত করার ধারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বজায় ছিল। যেকোনো পরিস্থিতিতে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।
ডাকসু নির্বাচন : ছাত্রশিবিরের ৩৬ দফা ইশতেহার ঘোষণা
ডাকসু নির্বাচনে শিবির সমর্থিত প্যানেল ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট ৩৬ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে। গত সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের ইশতেহারগুলো ঘোষণা করেন প্যানেলের সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদপ্রার্থী মহিউদ্দিন খান। ইশতেহারগুলো হলো- ১. ডাকসুকে একাডেমিক ক্যালেন্ডারভুক্ত করা। ২. ঢাবিকে ফ্যাসিবাদীদের দোসরমুক্ত করা। ৩. প্রথম বর্ষ থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর বৈধ সিট নিশ্চিত করা। ৪. নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য নিশ্চিতকরণে হল ও অন্যান্য ক্যান্টিন-ক্যাফেটেরিয়ায় পুষ্টিবিদের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে পুষ্টিকর খাবারের মেনু প্রণয়ন এবং ৩ মাস অন্তর খাবার মান পরীক্ষা করা। ৫. নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ পরিবহন নিশ্চিত করা। ৬. ছাত্রীদের জন্য ছাত্রী হলে প্রবেশের বিধিনিষেধ শিথিল করা। ৭. ছাত্রীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটির ব্যবস্থা করা। ৮. কমনরুমে নারী কর্মচারী নিয়োগ করা। ৯. বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সেবাকেন্দ্রিক লাল ফিতার দৌরাত্ম্য নিরসন করে পেপারলেস রেজিস্ট্রার বিল্ডিং গড়ে তোলা। ১০. ডাকসু ওয়েবসাইট উন্নতকরণ এবং অ্যাপের মাধ্যমে ‘Access to Resources’ নিশ্চিত করা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করা। ১১. শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতিকে আরো কার্যকর করে উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আদলে ‘মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম’ চালু করা। প্রত্যেক ফ্যাকাল্টিতে ই-লাইব্রেরি ও কম্পিউটার সেন্টার স্থাপন করা। ১২. শিক্ষার্থীদের নিয়ে রিসার্চ-বিষয়ক কর্মশালা করা। ১৩. কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, বিজ্ঞান লাইব্রেরি, হল লাইব্রেরি ও পাঠকক্ষ এবং ডিপার্টমেন্টের সেমিনার কক্ষ সম্প্রসারণ করা। ১৪. সফট স্কিল ডেভেলপমেন্টের ওপর কর্মশালা আয়োজন করা। উচ্চশিক্ষা ও ক্যারিয়ার-বিষয়ক সেমিনার, কর্মশালার পাশাপাশি ক্যাম্পাসে জব ফেয়ার আয়োজন করা। ১৫. অ্যালামনাই নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়নে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। ১৬. কেন্দ্রীয় মসজিদ, হল মসজিদ, মন্দির ও অন্য উপাসনালয়সমূহের অবকাঠামোগত সংস্কার ও উন্নয়ন করা। ছাত্রীদের ইবাদতের জন্য একাডেমিক এরিয়া বিশেষ করে কার্জন হল এলাকায় উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতকরণ। ১৭. মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও কাউন্সেলিং সেবার পরিসর বৃদ্ধি করা। ১৮. বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার ও সেবা আধুনিকীকরণের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি করা এবং উটগঈ অ্যাপ চালুর মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবাকে আরো বেশি সহজলভ্য করা এবং নারী চিকিৎসকের ব্যবস্থা করা। ১৯. সারা দেশে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের সাথে গড়ট করার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও তার অভিভাবকদের চিকিৎসাব্যয়ের ওপর বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করা। স্বাস্থ্যবীমাকেন্দ্রিক ভোগান্তি নিরসনে প্রশাসন ও বীমা প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয় করা। হলভিত্তিক প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা চালু করা। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে প্রয়োজনসাপেক্ষে ফার্মেসি স্থাপন করা। ২০. বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন (ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড) শিক্ষার্থীদের জন্য অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি চালু করা। ২১. আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটকে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উন্নীত করা। প্রত্যেক ভাষায় অন্তত একজন বিদেশি শিক্ষক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া। ল্যাংগুয়েজ রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা। ২২. বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ল্যাবগুলোয় উন্নত ও আধুনিক যন্ত্রপাতি নিশ্চিত করা। সায়েন্স ওয়ার্কশপ, CARS Ges CARASS-এর আধুনিকায়ন নিশ্চিত করা। ২৩. ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে বহিরাগত যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, ভাসমান হকার ও ভবঘুরেদের উচ্ছেদ করা। ক্যাম্পাস এরিয়ায় রেজিস্ট্রার্ড রিকশা প্রবর্তন ও ভাড়া তালিকা প্রণয়ন করা। ২৪. যৌন হয়রানি ও সাইবার-বুলিং প্রতিরোধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করা। যৌন নির্যাতন-বিষয়ক অভিযোগ সেল শক্তিশালীকরণ ও আইনি সহায়তা প্রদান। ২৫. ক্যাম্পাসের একাডেমিক ভবনগুলোয় ফ্রি মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন প্রোডাক্ট সহজলভ্য করা। ২৬. হলভিত্তিক সমস্যা সমাধানে কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা এবং ক্যাম্পাস অমবুডসপার্সন নিয়োগ করা। নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করা ও ভুক্তভোগীদের সাপোর্টের জন্য ভিক্টিম সাপোর্ট সেল গঠন। ২৭. বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত মেইলের অ্যাক্সেসিবিলিটি বাড়ানো। ই-মেইলের মাধ্যমে বিভিন্ন জার্নাল, সাময়িকী এবং ওয়েবসাইটে অ্যাক্সেস রাখা এবং বিভিন্ন একাডেমিক অ্যাপের প্রিমিয়াম অ্যাক্সেস নিশ্চিত করা। অ্যালামনাইদের জন্য অফিসিয়াল ই-মেইলের ব্যবস্থা করা। ২৮. জরাজীর্ণ বাসগুলো বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় নতুন বাস ক্রয় করা। মোবাইল অ্যাপে রিয়েলটাইম ট্র্যাকিংয়ের ব্যবস্থা করা। বাসের সংখ্যা ও ট্রিপ বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন রুট বৃদ্ধি করা। অভ্যন্তরীণ পরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য শাটল চালু করা।
২৯. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও আইনি সহায়তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সারা দেশের সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও আইনজীবীদের অন্তর্ভুক্ত করে লিগ্যাল হেল্পডেস্ক স্থাপন করা। ৩০. শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের অবকাঠামোগত আধুনিকায়ন, এক্সপার্ট কিউরেটরের মাধ্যমে মাঠ পরিচর্যা এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিযোগিতা আয়োজন করা। হল পর্যায়ে শারীরিক শিক্ষা কার্যক্রমের আধুনিকায়ন ও ইনডোর গেমসের আওতা বাড়ানো। ৩১. টিএসসির অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা। টিএসসির নিকটবর্তী ছাত্রী স্কুল ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের অবস্থান বিবেচনায় সাউন্ডবক্স ব্যবহারের ক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়ন। ৩২. বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড) শিক্ষার্থী উপযোগী ক্লাসরুম ও একাডেমিক কার্যক্রম নিশ্চিত করা। তাদের জন্য ওয়াশরুমে বিশেষ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। ৩৩. নারী শিক্ষার্থীদের জন্য সেলফ ডিফেন্স প্রশিক্ষণের আয়োজন করা।
৩৪. হলগুলোয় কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং কর্মচারী মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করা। ৩৫. পরিবেশ ও প্রতিবেশের সংরক্ষণ, শব্দদূষণ রোধ, সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাস গঠন করা। ক্যাম্পাসের পরিচ্ছন্নতা রক্ষার্থে প্রতি মাসের শেষ সপ্তাহে পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা। ৩৬. সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক আধিপত্যবাদ মোকাবিলায় এই অঞ্চলের মানুষের নিজস্ব সংস্কৃতির বিকাশে কাজ করা।
সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (ডাকসু) কেন্দ্রীয় কমিটি ও হল সংসদসমূহের নির্বাচন ২০১৯ সালের ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যেটি ছিল ১৯৯০-এর পর প্রথম ডাকসু নির্বাচন। নির্বাচনে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নুরুল হক নূর সহ-সভাপতি (ভিপি), বর্তমানে সন্ত্রাসের অভিযোগে নিষিদ্ধঘোষিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গোলাম রব্বানী সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও ছাত্রলীগের সাদ্দাম হোসেন সহকারী সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। হাসিনার আমলের অন্য নির্বাচনগুলোর মতোই ছিল নীলনকশা ও ষড়যন্ত্রে দুষ্ট ছিল এ নির্বাচন।
ক্রাইম বার্তা