আবু সাইদ বিশ^াস, সাতক্ষীরাঃ
জেলা জুড়ে অপরিকল্পিত শিল্প কলকারখানা নির্মাণসহ বিভিন্ন কারণে সাতক্ষীরায় আশঙ্কাজনক হারে কমছে কৃষিজমির পরিমাণ। এছাড়া অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়নের কারণেই আশঙ্কাজনকভাবে কৃষি জমি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। জেলায় ফসলের মাঠে গড়ে উঠছে নতুন বসতি, ইটভাটা, পুকুর, মৎস্য ঘের, কাঁকড়া খামার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। প্রশাসনের অনুমোদন না নিয়েই বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ কাজে ফসলি জমিকেই ব্যবহার করা হচ্ছে। কৃষি জমি থেকে মৎস্য ঘেরে রূপান্তর হচ্ছে। কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইনটি প্রস্তাবিত অবস্থায় থাকার কারণে সেই সুযোগ নিচ্ছে অনেক অসাধু ভূমিখেকো। ফলে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে কৃষি জমি চলে যাচ্ছে অকৃষি খাতে। এভাবে প্রতি বছর কমে যাচ্ছে আবাদি জমি, কমে যাচ্ছে খাদ্যশস্যের উৎপাদন। কোনো কৃষি জমি ভরাট করে বাড়িঘর, শিল্পকারখানা, ইটভাটা বা অন্য কোনো অকৃষি স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। কিন্তু সাতক্ষীরায় এই আইনটি মানছেন না অনেকেই।
সাতক্ষীরা পরিসংখ্যান অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় এখন কৃষি খানার সংখ্যা ৫ লাখ ১৪ হাজার ৩৬৬, যাদের অধীন আবাদি জমি রয়েছে ২ লাখ ৭১ হাজার ৪৭০ একর। ২০০৮ সালের কৃষিশুমারি অনুযায়ী জেলায় কৃষি খানার সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৩৬ হাজার ১৭৮, যাদের অধীন আবাদি জমি ছিল ২ লাখ ৮০ হাজার ৭৩০ একর। সেই হিসাবে ১২ বছরের ব্যবধানে সাতক্ষীরা মোট আবাদি জমির পরিমাণ কমেছে ৯ হাজার ২৬০ একর।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ৩ হাজার ৮৫৮ দশমিক ৩৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের সাতক্ষীরা জেলায় প্রায় ২২লাখ মানুষের বাস। ২৩ বছর আগে জেলায় আবাদযোগ্য জমি ছিল এক লাখ ৭৩ হাজার ৬০৪ হেক্টর। এখন তা কমে ১ লাখ ৬৫ হাজার ২৪৫ হেক্টরে এসে দাঁড়িয়েছে।
সাতক্ষীরা পৌরসভার রাজারবাগান এলাকার জাবের আলী। পৈতৃক সূত্রে ১১ একর কৃষি জমি পেয়েছিলেন। তিনি মৃত্যুর সময় ৩ ছেলে ৫ মেয়ে রেখে যান। তার মৃত্যুর পর ছেলে—মেয়েরা অধিকাংশ কৃষি জমি বিক্রি করে দিয়েছেন এবং অনেকে কৃষি জমিতে ঘর নির্মাণ করেছেন। তাদের কৃষি জমির পরিমাণ এখন দাঁড়িয়েছে মাত্র ১ একরের কাছাকাছি। মাত্র ১৫ বছরে ব্যবধানে এই পরিবারের ৯ একর কৃষিজমি কমেছে। এমনিভাবে সাতক্ষীরা শহরসহ পুরো জেলা জুড়ে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ জমি চলে যাচ্ছে অকৃষি খাতে।
কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইনের আওতায়, সরকার দেশের সব জমির শ্রেণি নির্ধারণ করে দেবে। এতে কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ, আবাসন, নদী, সেচ, নিষ্কাশন, পুকুর, জলমহাল, মৎস্য এলাকা চিহ্নিত করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সাতক্ষীরা উপকূলীয় এলাকায় প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, নদী ভাঙন, লবণাক্ততা, নগরায়ণ, ইটভাটা, শিল্পকারখানা, বসতভিটা, রাস্তাঘাট, অবকাঠামো নির্মাণ ও যত্রতত্র বসতি প্রতিষ্ঠার কারণে অনেক কৃষিজমি অনাবাদি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খাদ্যশস্যের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০০১ সালে জেলায় আবাদযোগ্য জমি ছিল ১ লাখ ৭৩ হাজার ৬০৪ হেক্টর সেটা ২০১০—১১ সালে এসে দাঁড়ালো এক লাখ ৭০ হাজার ৪১৯ এবং ২০২২—২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী এক লাখ ৬৫ হাজার ২৪৫ হেক্টরে এসে দাঁড়িয়েছে। জেলায় কৃষি জমি বাড়ি—ঘর রাস্তাঘাট, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কল—কারখান মৎস্য ঘেরসহ বিভিন্ন খাতে চলে যাচ্ছে। আরার ঘের থেকে অনেক জমি কৃষি খাতে আসছে। এমনিভাবে প্রতিবছর কৃষি খাতের জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে।
আবু সাইদ বিশ^াস
সাতক্ষীরা
১১/৯/২৫
ক্রাইম বার্তা