সাতক্ষীরায় একদিনে পানিতে ডুবে প্রাণ গেলো ৪ শিশুসহ পাঁচজনের

সাতক্ষীরায় একদিনে পানিতে ডুবে প্রাণ গেলো ৪ শিশুসহ পাঁচজনের

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

সাতক্ষীরায় একদিনে পানিতে ডুবে চার শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ভোর থেকে রাত পর্যন্ত একের পর এক মৃত্যু সংবাদে শোকাহত হয়ে পড়ে সাতক্ষীরার মানুষ।

এদিন জেলার কলারোয়া, শ্যামনগর, সদর, আশাশুনি ও কালিগঞ্জ উপজেলায় পানিতে ডুবে মারা গেছে পাঁচজন।

কলারোয়ার কেড়াগাছি গ্রামে দুই বছরের ইরফান খাঁ সবার অগোচরে রান্নাঘরের পাশের ডোবায় পড়ে যায়। কিছুক্ষণের খোঁজাখুঁজির পর তাকে নিথর দেহে উদ্ধার করা হয়।

শ্যামনগরের চন্ডিপুর গ্রামে ফয়সাল হোসেন (১৬) নামের মানসিক প্রতিবন্ধী কিশোরের করুণ পরিণতি সবাইকে কাঁদিয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় বাড়ি না ফেরায় পরিবার সারারাত খুঁজতে থাকে। অবশেষে সোমবার দুপুরে ডোবার শেওলার ভেতর থেকে পাওয়া যায় তার নিথর দেহ।

এদিকে সাতক্ষীরা সদরের ফিংড়ি ইউনিয়নের এল্লারচর আবাসন প্রকল্পে বিকেলে ডুবে মারা যায় ইসমাইল হোসেনের ছোট্ট মেয়ে। খেলার ছলে পানিতে গিয়ে আর ফেরা হয়নি তার
আশাশুনির বড়দলে মহেন্দ্র নাথ সানার ঘরে নেমে আসে অকাল মৃত্যুর ছায়া। তার দেড় বছরের শিশু ঈশিতা পানিতে ডুবে মারা যায়।

এছাড়া কালিগঞ্জের নলতার ইন্দ্রনগর গ্রামে মো. সিরাজুল ইসলামের ১৯ মাস বয়সী মেয়ে লামিসা খাতুন পুকুরে পড়ে যায়। দ্রুত ক্লিনিকে নেওয়া হলেও তাকে আর ফিরিয়ে আনা যায়নি।

এসব উপজেলার থানাগুলো থেকে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা জলবায়ু পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে কয়েক হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়, যার বড় অংশ শিশু। এ মৃত্যুগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব যদি পরিবার ও সমাজ মিলে শিশুদের সুরক্ষার ব্যবস্থা নেয়। বিশেষ করে গ্রামের বাড়িগুলোতে পুকুর-ডোবায় নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা এখন সময়ের দাবি।

সাতক্ষীরা ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক দেওয়ান সোহেল রানা বলেন, প্রতিবছর জেলায় অসংখ্য শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটা ঘটে অসচেতনতার কারণে।

অভিভাবকরা যদি শিশুদের একা বাইরে খেলতে না দেন, ডোবা-নালা বা পুকুরের পাশে সতর্ক থাকেন, তাহলে এসব দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। পানি থেকে কাউকে উদ্ধারের পর দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া গেলে অনেক প্রাণ বাঁচানো যেতেও পারে। এজন্য প্রত্যেকেরই সিপিআরসহ জরুরি চিকিৎসা বিষয়ে অন্তত প্রাথমিক ধারণা থাকা দরকার।

ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর বাংলাদেশে গড়ে ১৭ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এই মৃত্যুর সংখ্যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। যা দেশের মোট শিশুমৃত্যুর প্রায় ২৮ ভাগ। তবে এ ধরনের মৃত্যুর বেশিরভাগ খবর গণমাধ্যমে আসে না।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাস্থ্য ও তথ্য জরিপ ২০১৬ অনুযায়ী, বছরে ১ থেকে ১৭ বছর বয়সী অন্তত ১৪ হাজার ৪৩৮ জন শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতনতা ও প্রাথমিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলে এসব মৃত্যুর বড় একটি অংশ প্রতিরোধ করা সম্ভব

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মৃত্যুগুলো প্রতিরোধযোগ্য ছিল। একটু সচেতনতা ও সতর্কতাই পারে এমন দুর্ঘটনা কমাতে। শিশুদের কখনও একা বাইরে খেলতে বা গোসল করতে না দেওয়া, বাড়ির আশেপাশে থাকা পুকুর, ডোবা বা খালগুলোতে বেড়া বা বাঁশ দিয়ে সুরক্ষিত রাখা, শিশুদের পানির ঝুঁকি সম্পর্কে পরিবারের সবাইকে সচেতন করা, গ্রামে বা পাড়ায় সাঁতার শেখার উদ্যোগ নেওয়া, শিশুদের ছোটবেলা থেকেই সাঁতার শেখানো জরুরি ও মানসিক প্রতিবন্ধী বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সদস্যদের সবসময় পরিবারের নজরে রাখা।

আবু সাইদ বিশ্বাস
সাতক্ষীরা
১৬/৯/২৫
০১৭২২-৩৩৩২৯৯

About news-admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *