সাতক্ষীরায় উৎপাদিত সুপারীর মূল্য ২০ কোটি টাকা রপ্তানি হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের সুপারি

আবু সাইদ বিশ^াস, সাতক্ষীরাঃ
দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে যাচ্ছে সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণাঞ্চলের সুপারি। বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকার সুপারি রপ্তানি হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। দক্ষিণ—পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার ধানের পরেই গু রুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে সুপারি। যা দীর্ঘদিন থেকে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রেখে চলছে। লাভজনক ফসল হিসাবে এ অঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতে কমবেশি সুপারির চাষ করা হয়। এ বছর সুপারির ভাল ফলন হলেও ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না বলে চাষিদের অভিযোগ। চাষিরা বলছে,পরিচর্যা ছাড়াই বেড়ে ওঠা সুপারি গাছে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে কাঁচা এবং পাকা সুপারি কেনাবেচা। কেউ কেউ আবার সুপারি কিনে শুকিয়ে টাডি হিসাবে পরে বিক্রি করে থাকেন। এতে চাঙ্গা হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি।

দক্ষিণ—পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাটি,বরিশাল জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ইউনিয়নের বিভিন্ন হাট বাজারে প্রতি হাটে গড়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকার সুপারি কেনাবেচা হয়। হাটের দিন সকাল থেকেই এসব বাজারে চাষিরা বস্তা ও ঝুড়িতে করে সুপারি নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য। আর এ কেনাবেচা চলে বিকেল পর্যন্ত। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বড় বড় পাইকার ও মহাজনরা আসেন এসব হাটে সুপারি কিনতে। দিনের কেনাবেচা শেষে তারা লঞ্চ, ট্রলার ও ট্রাকে করে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, মুন্সীগঞ্জ, সৈয়দপুর, রংপুর, গাইবান্ধা, শরিয়তপুর, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সুপারি চালান করেন। শুধু দেশেই নয়, এ সুপারি রফতানি হচ্ছে ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে।

উপকুলীয় জেলা সাতক্ষীরাতে অর্থকরি ফসল সুপারীর উৎপাদন দিন—দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানে বছরে এখন ৪৫০ টন সুপারী উৎপাদন হয়।যার বাজার মুল্য ২০ কোটি টাকারও বেশি। জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যানুযায়ী, অন্যান্য ফসলের তুলনায় উৎপাদনে তেমন খরচ না থাকায় জেলায় সুপারীর বাগান বাড়ছে। চলতি মৌসুমে জেলায় ১ হাজার ৩৫০ বিঘা জমিতে সুপারী উৎপাদন হয়েছে ৪৫০ টন। কেজি প্রতি শুকনা সুপারীর বাজার দর ৪৫০ টাকা। এ হিসাবে সুপারীর বাজার মুল্য ২০ কোটি ২৫ লাখ টাকা। গত তিনবছরের ব্যবধানে জেলায় সুপারী আবাদ বেড়েছে প্রায় ২০০ বিঘা পরিমাণে।

সাতক্ষীরার তালা উপজেলা মঙ্গলাবন্দকাটি গ্রামের কৃষক আব্দুল হামিদ জানান, তার তিন বিঘা জমিতে সুপারী বাগান রয়েছে। নারকেল বা অন্যান্য ফসলী গাছগাছালীর সাথেই মুলত সুপারী গাছ লাগানো রয়েছে। তিনি বলেন, এসব সুপারী গাছে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ বছর যাবত ফল দিচ্ছে। বছরে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা সুপারী বিক্রি হয়। এসব সুপারী স্থানীয় ব্যাপারীরা বাগান থেকে পাইকারী মুল্যে নিয়ে যায়। জেলার পাইকারী সুপারী বিক্রয় মোকাম পাটকেলঘাটা বাজারে সপ্তাহে দুইদিন মঙ্গল ও শুক্রবার পাইকারী সুপারীর হাট বসে। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর পরিমাণ সুপারী উঠে এই হাটে। স্থানীয় ছাড়াও পাশবর্তী যশোর ও খুলনা থেকে পাইকারী ব্যাপারী সুপারী সংগ্রহ করেন পাটকেলঘাটা থেকে। এ বাজারের সুপারী বিক্রয় আড়তদার হযরত আলী জানান, প্রতি সপ্তাহে দুইদিন মঙ্গল ও শুক্রবার তার আড়তে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার সুপারী ক্রয়—বিক্রয় হয়। জেলার বিভিন্ন এলাকার পাইকারী ব্যবসায়ীরা পাটকেলঘাটা থেকে সুপারী ও পান কিনতে আসেন।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ—পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, পান ও সুপারী আমাদের দেশের খুবই অর্থকরি ফসল। সাতক্ষীরাতে উলে­খযোগ্য পরিমাণে সুপারী উৎপাদন হচ্ছে। এখন অনেকে বাড়ির বসতভিটার সাথেই সুপারী বাগান করছেন, আবার কোনো—কোনো কৃষক সাথী ফসল হিসেবেও সুপারীর সাথে বিভিন্ন ফসল করছেন। তবে পান এবং সুপারী খুবই লাভজনক ফসল।

আবু সাইদ বিশ^াস
সাতক্ষীরা
১৬/৯/২৫

 

About news-admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *