প্রাণসায়ের খাল বাঁচাতে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন ও সমাবেশ

সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ

সাতক্ষীরার প্রাণসায়ের খাল আজ দখল, দূষণ ও অব্যবস্থাপনায় মৃতপ্রায়। অথচ একসময় এই খালই ছিল জেলার কৃষি, মৎস্য, পরিবেশ ও জনজীবনের প্রধান ভরসা। খাল রক্ষায় কসাইখানা স্থানান্তর, দূষণকারী প্রতিষ্ঠান অপসারণ, দখলমুক্তকরণ ও স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিতের দাবিতে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় সাতক্ষীরা শহরের পাকা পুলের উপর মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে ‘প্রাণসায়ের ও পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চ’।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, এক সময় প্রাণসায়ের খাল ছিল সাতক্ষীরার প্রাণ। এই খাল দিয়েই যোগাযোগ, কৃষি, মৎস্য ও জনজীবন সমৃদ্ধ ছিল। কিন্তু দখলদারদের কবলে পড়ে আজ খালটি প্রায় মৃত। খালের দুই তীরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা। কসাইখানা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ছড়াচ্ছে ভয়াবহ দূষণ। ফলে খালের পানি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে, ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ। অবিলম্বে খাল দখলমুক্ত, কসাইখানা স্থানান্তর ও খালের স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান তারা।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট কবি পল্টু বাসার। বক্তব্য রাখেন প্রাণসায়ের ও পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চের সভাপতি প্রফেসর মোজাম্মেল হক, প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক কল্যাণ ব্যানার্জি, প্রাণসায়ের ও পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চের ও দেশ টিভির সাতক্ষীরা প্রতিনিধি শরিফুল্লাহ কায়সার সুমন, চ্যানেল ২৪—এর আমেনা বিলকিস ময়না, পরিবেশ সংগঠন বেলা’র বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল, প্রভার নির্বাহী পরিচালক শাম্মী আক্তার কুমকুম, প্রাণের বাংলাদেশের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি নাজমুল আলম মুন্না, প্রাণসায়ের ও পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চের বায়েজিদ, প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী মাহবুব, আশিষ ও গিটারিস্ট পিনাক প্রমুখ।

প্রফেসর মোজাম্মেল হক বলেন, “প্রাণসায়ের খাল শুধু একটি খাল নয়, এটি সাতক্ষীরার অস্তিত্ব। খালের বুক চিরে কসাইখানা চালু করার সিদ্ধান্ত জনগণের সাথে তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়।”

সাংবাদিক কল্যাণ ব্যানার্জি বলেন, “প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের নীরব ভূমিকার কারণেই দখলদাররা খাল গিলে খাচ্ছে। জনগণ এবার জেগে উঠেছে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”

শরিফুল্লাহ কায়সার সুমন বলেন, “খালই যদি না থাকে, সাতক্ষীরার পরিবেশ টিকবে কীভাবে? আগামী প্রজন্মের জন্য আমাদের এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।”

শাম্মী আক্তার কুমকুম বলেন, “খাল দখল ও দূষণে প্রতিদিন মানুষ ভোগান্তিতে পড়ছে। শিশুদের খেলাধুলা, মাছের আবাস, কৃষির সেচ সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এটি আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই।”

বক্তারা প্রাণসায়ের খালকে “সাতক্ষীরার লাইফলাইন” আখ্যায়িত করে বলেন, এই খাল রক্ষা করতে না পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে দায়ী থাকবে প্রশাসন। প্রয়োজনে আরও বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দেন তারা।

‘প্রাণসায়ের ও পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চ’ এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।

উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে এই বিষয়ে বেলা হাইকোর্টে রিট করেছেন। রিটকে তোয়াক্কা না করে সাতক্ষীরাবাসীকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রাণসায়ের খালের ধারে কসাইখানার জন্য দরপত্র আহবান করেছেন পৌর কর্তৃপক্ষ। এটি হুমকি স্বরূপ দেখছেন সাতক্ষীরার সচেতন নাগরিক মহল।

About news-admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *