ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত জার্মেইন জ্যাকসনের অনুভূতি

জার্মেইন জ্যাকসন। প্রয়াত পপ সঙ্গীত তারকা মাইকেল জ্যাকসনের ভাই। কেন খ্রিস্ট ধর্ম থেকে ইসলাম গ্রহণ করেছেন সে বিষয়ে মুখ খুলেছেন।
সম্প্রতি বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জার্মেইন জ্যাকসন জানান, তিনি ১৯৮৯ সালে তার বোনের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ সফরে যান। সেখানে তাদের কয়েকজন শিশুর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। যারা তাদের খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে সেখানে স্বাগত জানিয়েছিলেন।
জার্মেইন জ্যাকসন জানান, ওই শিশুদের সঙ্গে আলাপচারিতার সময় তিনি ওই শিশুদের মধ্যে দৃঢ় মনোভাব ও এক প্রশান্তির উপলদ্ধি করতে পারেন। মুসলমান হিসেবে ওই শিশুরা যে অত্যন্ত গর্বিত তা তিনি খুব দ্রুতই বুঝতে পারেন।
জার্মেইন জ্যাকসন আরও জানান, শিশুদের এই আস্থা তার মনকে সত্যি সত্যি ভেতরটা প্রচন্ডভাবে নাড়িয়ে দেয়। নতুন করে ভাবিয়ে তুলে। নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শেখায়।
জার্মেইন জ্যাকসন বলেন, তারপর তারা আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বলতে শুরু করে। শিশুরা ইসলাম সম্পর্কে আমাকে অনেক তথ্য দেয়। এমন বয়সের শিশুরা ধর্ম সম্পর্কে এত কিছু জানে যা আমাকে অবাক করে দেয়। তাদের কণ্ঠস্বরের মাত্রা এটাই প্রকাশ করে যে, তারা ইসলাম নিয়ে অত্যন্ত গর্বিত, আনন্দিত ও পুলকিত। আর এভাবেই শুরু হয় আমার ইসলাম দিকে পথ চলা। শান্তির পথে ফিরে আসা।
তিনি বলেন, শিশুদের সঙ্গে খুব অল্প সময়ের পারস্পরিক আলাপচারিতা একটি চমৎকার স্পন্দন আমার চিন্তায় স্থান করে নেয়। আমি নিজেকে সান্ত্বনা দেয়ার ব্যর্থ প্রয়াস চালাই যে, কিছুই ঘটেনি। আমি ঠিকই আছি। কিন্তু এই শাশ্বত সত্যটা আমি কোনোক্রমেই গোপন করতে পারিনি। অবশেষে আমি আমার অন্তর থেকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হই। আমার পারিবারিক বন্ধু কোয়ানবির আলীর কাছে প্রথম বিষয়টি প্রকাশ করি।
একজন মুসলমান হিসেবে তার নিজের অনুভূতি সম্পর্কে জানতে চাইলে জার্মেইন জ্যাকসন বলেন, ইসলাম গ্রহণের পর আমার কাছে মনে হয়েছে, আমি নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি। অজানা এক প্রশান্তি অনুভব করলাম। আমি ইসলাম ধর্মে এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি যা খ্রিস্টান ধর্মে পাইনি। বিশেষত, খ্রিস্টের জন্ম সংক্রান্ত প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর কেবল ইসলামের মধ্যেই রয়েছে। ইসলাম গ্রহণের পর প্রথমবারের জন্য আমি ধর্ম সম্পর্কে সন্তুষ্ট হই। এই বিষয়গুলো যেন আমার পরিবারের সদস্যরা উপলব্ধি করতে পারে তার জন্য আমি মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি।
তিনি আরও বলেন, আমার পরিবার খ্রিস্ট ধর্মে বিশ্বাসী, যা ‘জেহোভার সাক্ষী’ নামে পরিচিত। এর আকীদা-বিশ্বাস অনুযায়ী, কেবল ১৪৪,০০০ জন পুরুষ পরিশেষে বেহেশতে প্রবেশ করার যোগ্যতা অর্জন করবে। কিন্তু কিভাবে আসবে? এটা সবসময়ই আমার কাছে একটি জটিল ধর্মমত রয়ে গেছে।
জার্মেইন বলেন, আমি এটা জেনে বিস্মিত হই যে, অনেক পুরুষদের লেখা একত্র করে বাইবেল প্রণীত হয়েছে। এর মধ্যে একটি ভলিউমের লেখক হচ্ছেন রাজা জেমস। একজন মানুষ একটি গ্রন্থ প্রনয়ণ করে তারপর সেটি ঈশ্বরের গ্রন্থ বলে চালিয়ে দিতে পারে কিনা তা আমার কাছে বিস্ময়ের উদ্রেক করে। কিন্তু তিনি নিজেও (রাজা জেমস) বাইবেলের দিক নির্দেশনা পুরোপুরি মেনে চলছেন না।
তিনি বলেন, আমার সৌদি আরবে থাকার সময়, তদানীন্তন প্রাক্তন ব্রিটিশ পপ-গায়ক এবং বর্তমান মুসলিম প্রচারক ইউসুফ ইসলামের (পূর্ব নাম ক্যাট স্টিভেন্স) একটি অডিও রেকর্ড কেনার সৌভাগ্য হয়েছিল। আমি ওই অডিও থেকে ইসলাম সম্পর্কে অনেক ভাল কিছু শিখতে পেরেছি।

Please follow and like us:

Check Also

ঢাকায় প্রথম মহিলাদের ঈদের জামাত

বাংলায় মুসলমান সমাজে নারীদের প্রতিকূলতার ইতিহাস অনস্বীকার্য। নারীদের শিক্ষা, চিকিৎসা, বিবাহ ও অন্যান্য ব্যাপারে ইসলামের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।