গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার দুই বছরে নিহত ৬৭ হাজার ফিলিস্তিনি

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর আগ্রাসনের দুই বছর পূর্ণ হলো মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর)। ইসরায়েলি হামলায় গত দুই বছরে পুরো গাজা উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। যাদের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ শিশু। আহত হয়েছে আরও ১ লাখ ৬৯ হাজার ৬৭৯ জন। এছাড়া ত্রাণের অভাবে বর্তমানে ভয়াবহ ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন গাজার বাসিন্দারা।

জাতিসংঘ স্যাটেলাইট সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় প্রায় ১,৯৩,০০০ ভবন ধ্বংস বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত, যার মধ্যে রয়েছে ২১৩টি হাসপাতাল এবং ১,০২৯টি স্কুল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, এখন গাজার মাত্র ১৪টি হাসপাতাল আংশিকভাবে কার্যকর রয়েছে এবং দক্ষিণ গাজার হাসপাতালগুলো রোগীতে উপচে পড়ছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস গাজা শহরের ব্যাপক ধ্বংসে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, জনবসতিকে জোর করে সরিয়ে নেওয়ার যেকোনও প্রচেষ্টা “জাতিগত নিধন”-এর মতো অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক সানাম ভাকিল বলেন, ‘গাজায় গণহত্যার চূড়ান্ত রূপ প্রকাশ করেছে ইসরাইল। বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের গুরুতর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি করেছে আইডিএফ। সেখানে এমন পরিকল্পিত জীবনধারা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা তাদের অস্তিত্ব হুমকির মধ্যে ফেলেছে। ফিলিস্তিনিদের ওপর জাতিগত নিধনের পদক্ষেপ নিয়েছে ইসরাইল।’

ফিলিস্তিনকে সমর্থন করায় ইরান, সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন এবং কাতারেও হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে নানা সময়ে আলোচনা হলেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।

সর্বশেষ যুদ্ধ থামাতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেন ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠমিত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করতে নেতানিয়াহু সরকারের প্রতি আহ্বান জানানোর পরও ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদিকে, ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের অংশ হিসেবে সব বন্দি মুক্তির বিষয়ে গত শুক্রবার সম্মতি জানিয়েছে হামাস। তা সত্ত্বেও গাজায় ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ থামছে না।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার মাত্র ১৮ শতাংশ অঞ্চল বর্তমানে নিরাপদ বাসযোগ্য হিসেবে বিবেচিত, বাকি অংশগুলো হয় স্থানচ্যুতি আদেশের আওতায় নয়তো সামরিক নিয়ন্ত্রণাধীন। চলমান সহিংসতায় বহু পরিবার একাধিকবার স্থানচ্যুত হয়েছে। শুধু আগস্ট থেকে গাজা শহরে অভিযান জোরদার হবার পর থেকে ৪.১৭ লক্ষ মানুষ উত্তরের অংশ থেকে দক্ষিণে পালিয়েছে। যদিও ইসরায়েল বাসিন্দাদের দক্ষিণে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে, তবুও সেখানে ত্রাণ ও আশ্রয়ের ঘাটতি মারাত্মক।

About news-admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *