২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ না দেয়ায় তিতাসে স্কুল ছাত্র হত্যার অভিযোগ

ক্রাইমবার্তা রিপোট:(কুমিল্লা) সংবাদদাতা : তিতাস উপজেলার বাতাকান্দির মধ্য আকালিয়া গ্রামে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ না দেওয়ায় এক স্কুল ছাত্রকে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তিতাস উপজেলার বাতাকান্দি হাই স্কুলের ৭ম শ্রেণির ছাত্র এবং ৮ম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ আবু তাহের ওরফে হৃদয়(১৪) গত ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর নিখোঁজ হয়। এ বিষয়ে ২২ ডিসেম্বর তিতাস থানায় অভিযোগের পর পুলিশ মোবাইল ফোন নাম্বার ট্র্যাকিং করে বেশ কয়েক জন কে আটক করে। তাদের জবান বন্দির ভিত্তিতে

গতকাল সোমবার সকাল থেকে দিনব্যাপী হোমনা উপজেলার তিতাস নদীতে তিতাস ও হোমনা থানা পুলিশ লাশ উদ্ধারে প্রাণপণ চেষ্টা করেও লাশের হদিস পায়নি। এবিষয়ে নিখোঁজ হওয়া ছাত্র আবু তাহের ওরফে হৃদয়ের বাবা মধ্য আকালিয়া গ্রামের বশির আহম্মেদ ওরফে বাচ্চু জানান, গত ২১ ডিসেম্বর বুধবার সন্ধ্যায় বাড়ির পিছনে ব্যাড মিন্টন খেলার মাঠে প্রতিবেশী বন্ধু তাকে ডেকে নিয়ে যায়। রাতে বাসায় না ফেরায় এবং খোঁজাখুঁজি করে না পাওয়ায় ২২ ডিসেম্বর তিনি তিতাস থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এদিনই মুক্তিপণ বাবদ তার কাছে ২০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। পরবর্তীতে পুলিশের বিভিন্ন টিম হৃদয়ের সন্ধানে নেমে পরে। তারা সন্দেহ ভাজন ব্যক্তিদের মোবাইল ফোন নাম্বার ট্র্যাকিং করে বেশ কয়েক জনকে আটক করে। আটককৃতদের জবান বন্দী সূত্রে জানা গেছে, হৃদয়কে হত্যা করে বস্তায় ভরে হোমনা-বাঞ্ছারামপুর সেতুর নিচে তিতাস নদীতে তার লাশ ফেলে দেয়। এদিকে লাশ উদ্ধারের জন্য গতকাল সোমবার তিতাস থানার ওসি মনিরুল ইসলাম পিপিএম এবং হোমনা থানার ওসি রসুল আহমেদ নিজামীর নেতৃত্বে নদীর কয়েক কিলোমিটারব্যাপী ডুবুরি ও জেলেদের মাধ্যমে জাল ফেলে লাশের সন্ধান করা হয়। কিন্তু লাশের হদিস মিলেনি। আটককৃত একই গ্রামের মোঃ আলী, মইন, রিয়াদ, ও দড়িকান্দি(আসমানিয়া) গ্রামের সাকিব সহ বেশ কয়েক জন হত্যাকাণ্ডে জড়িত রয়েছে বলে পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রের ধারণা। হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য এখনো জানা যায়নি, তবে মোঃ আলীদের সাথে দীর্ঘ পারিবারিক বিরোধ রয়েছে বাঙ্গালি বাড়ির বশিরদের একথা বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। বশির ওরফে বাচ্চুর দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে হৃদয় ছিল সবার ছোট। সে বাতাকান্দি সরকার সাহেব আলী আবুল হোসেন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির নিয়মিত ছাত্র ছিল বলে প্রধান শিক্ষক মোঃ আলাউদ্দিন ভূঁইয়া নিশ্চিত করেন। তার রোল নং ছিল ৯৭, এবং সে অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছিল। হৃদয়ের মা ফেরদৌসী বেগমকে সম্প্রতি হৃদরোগ সমস্যায় ওপেন হার্ট বাইপাস সার্জারী করা হয়। স্ত্রীর অসুস্থতা ও ছেলে হত্যার খবরে পাগল প্রায় সহজ সরল ব্যবসায়ী বশির আহমেদ (বাচ্চু) । হৃদয় প্রথমে নিখোঁজ ও পরে হত্যার খবর পেয়ে তাদের বাড়িতে হাজার হাজার নারী-পুরুষের ঢল নামে। এবিষয়ে বলরামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ নূরনবী ও সাতানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামসুল হক সরকার বলেন, পূর্বে মুক্তিপণ- চাঁদাবাজি ছিল বিশেষ করে শহর কেন্দ্রিক বর্তমানে তা গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবিী করেন এই দুই জনপ্রতিনিধি। হৃদয়ের জেঠা মোঃ তাজুল ইসলাম জানান, হৃদয় ছিল তাদের পরিবারের অতি আদরের একমাত্র ছেলে। অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় ধৈর্য ধরার ক্ষমতা তারা হারিয়ে ফেলেছেন। হৃদয় হত্যার খবর শুনে তার স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরাজ করছে ভয়ভীতি, শংঙ্কা। তারাও এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন।

Please follow and like us:

Check Also

শ্যামনগরে পেট্রোল বোমায় মাহবুব-ই-এলাহী দগ্ধ

শ্যামনগরে সন্ত্রাসীদের পেট্রোল বোমায় দৈনিক দক্ষিণের মশাল সম্পাদক অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহীর ভাই ও স্থানীয় বাজার রক্ষা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।