জেলার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে নো ওয়ার্ক কর্মসূচি অব্যাহত

নিজস্ব প্রতিনিধি: সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ‘নো ওয়ার্ক’ কর্মসূচি পালন করেছেন। মঙ্গলবারও বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শ্রেণিকাজ, পরীক্ষাসহ সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকেন।

এর আগে সোমবার (১ ডিসেম্বর) সকাল থেকে বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি (বাসমাশিস) সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ইউনিটের উদ্যোগে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে কর্মসূচি শুরু হয়। এতে বিদ্যালয়ের চলমান বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। পরীক্ষাকেন্দ্রে এসে শিক্ষার্থীরা ফিরে যেতে বাধ্য হয়।

পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের দাবি-শিক্ষকরা ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ের অধিকার রাখেন, তবে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত নয়।

অভিভাবক অ্যাডভোকেট আল মাহমুদ পলাশ বলেন, “আমরাও শিক্ষকদের ন্যায়সংগত দাবীর পক্ষে একমত। তবে হঠাৎ করে পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় উদ্বেগে দিন কাটছে। গত দুই দিন পরীক্ষা হয়নি। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়ন ও মূল্যায়ন নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠছে। কোচিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কিছু শিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত করছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।”

তিনি আরও বলেন, “আন্দোলনের অধিকার আছে, কিন্তু কোমলমতি শিশুদের জিম্মি করে কোনো আন্দোলন ন্যায়সঙ্গত হতে পারে না।”

আরেক অভিভাবক জেসমিন নাহার বলেন, “শিক্ষকেরা দাবি আদায় করতেই পারেন, কিন্তু বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করে হাজারো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তায় ঠেলে দেওয়া উচিত হয়নি। সময় ও পদ্ধতি-দুটিই বিবেচনায় রাখা দরকার ছিল।”

অভিভাবকদের অনেকেই জানান-এ পরিস্থিতিতে তারা অসহায় বোধ করছেন। সন্তানদের পড়াশোনা ও পরীক্ষার প্রস্তুতি ব্যাহত হচ্ছে।

শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান, রিফাত হোসেন, তানজিম আক্তার ও সুমাইয়া আফরোজ জানান, তারা প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে গেলেও পরীক্ষা না হওয়ায় হতাশ।

তাদের ভাষায়- “পরীক্ষার সিলেবাস ভেঙে গেলে পড়া মনে ধরে না। মনে আতঙ্ক কাজ করে। জানা জিনিসও ভুলে যাই।”

শিক্ষকদের দাবিগুলো হলো- সহকারী শিক্ষক পদ নবম গ্রেডে উন্নীত করে পৃথক অধিদপ্তরে চারস্তরবিশিষ্ট পদসোপান বাস্তবায়ন। বকেয়া টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড প্রদান। দীর্ঘদিন প্রমোশনবঞ্চিত শিক্ষকদের দ্রুত পদোন্নতির ব্যবস্থা। অতিরিক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য অ্যাডভান্সড ইনক্রিমেন্ট পূর্বের মতো বহাল রাখা।
শিক্ষকদের অভিযোগ-দীর্ঘদিন ধরে এসব বিষয়ে অবহেলা চলছে। তাই তারা ১ ডিসেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

এক আন্দোলনকারী শিক্ষক বলেন, “সহকারী শিক্ষকরা বছরের পর বছর বৈষম্যের শিকার। সুপ্রিম কোর্টের রায় থাকা সত্ত্বেও টাইমস্কেল-সিলেকশন গ্রেডের ফাইল ঝুলে আছে। দাবি পূরণের নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।”

সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আমিনুল ইসলাম টুকু বলেন, “শিক্ষকেরা মানুষ গড়ার কারিগর। তাঁদের দাবি যৌক্তিক। কিন্তু শিক্ষা ব্যাহত করে আন্দোলন করায় শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা মন্ত্রণালয়ের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”

তিনি আরও জানান, সোমবার-মঙ্গলবারের পরীক্ষাগুলো স্থগিত হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুননির্ধারিত তারিখে পরীক্ষা নেওয়া হবে। আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষকদের তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসার আবুল খায়ের বলেন, “পরীক্ষা বন্ধ করে যারা কর্মসূচি পালন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মঙ্গলবার থেকে সব বিদ্যালয়ে পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পরীক্ষাকালে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ মোতায়েনের সিদ্ধান্তও হয়েছিল।”

তিনি বলেন, জেলার চারটি বিদ্যালয়ে সোমবার পরীক্ষা হয়নি- সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং তালা উপজেলার দুটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

কর্মবিরতির কারণে প্রশাসনিক কাজও বন্ধ হয়ে গেছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। অভিভাবকেরা দ্রুত আলোচনা করে সমাধানে পৌঁছাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

About news-admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *