রাজশাহীতে বিএনপি পরিচয়ে চাঁদাবাজি, অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা!

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী:   রাজশাহীতে হাজারো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ। রাজনৈতিক পরিচয়ে এসব চাঁদাবাজ প্রকাশ্যে চালাচ্ছে তাদের চাঁদাবাজি। চাঁদাবাজদের প্রধান টার্গেট হলেন—ফুটপাত ও সড়কে ভ্যানে পণ্য বিক্রয়কারী ও ছোট দোকানিরা। তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না কোচিং সেন্টার, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বাড়ি বা ভবন নির্মাণকারী মালিকরাও। একেক এলাকায় একাধিক গ্রুপ ভাগাভাগি করে প্রতিদিন চাঁদা তুলছে বলে জানা গেছে।

ভুক্তভোগীরা বলেন, ‘পুলিশে অভিযোগ করার মতো পরিস্থিতি নেই। নগরীর বিভিন্ন মোড়ে দায়িত্বরত পুলিশের সামনে চাঁদাবাজরা দল বেঁধে এলে পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করে। তাদের আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা পুলিশের পরিবর্তে রাজনৈতিক নেতাদের কাছে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিচ্ছেন।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহানগরীর উপকণ্ঠ কাটাখালী থেকে কাশিয়াডাঙ্গা পর্যন্ত এবং নওহাটা ব্রিজ থেকে গোরহাঙ্গা পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার অস্থায়ী বা ভ্রাম্যমাণ ও স্থায়ী দোকান বসে। এসব দোকানে চাঁদাবাজি করে রাজনৈতিক পরিচয়ের বেশ কিছু গ্রুপ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, সাহেববাজারের একজন পেয়ারা বিক্রেতা জানান, আগে দোকানপ্রতি দৈনিক ৪০-৫০ টাকা চাঁদা দিলেই হতো। এখন দোকানপ্রতি দৈনিক ১০০ টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে। বেচাকেনা যা-১ই হোক, ১০০ টাকা চাঁদা দিতেই হবে; না দিলে পরদিন থেকে দোকান তুলে দেওয়া হচ্ছে।

কাপড়পট্টির একজন ব্যবসায়ী জানান, জিরোপয়েন্ট থেকে সোনাদীঘি পর্যন্ত ফুটপাতে শত শত দোকান বসেছে চাঁদাবাজদের মাধ্যমে। ক্রেতারা ফুটপাতেই কেনাকাটা করে। ফলে মার্কেটে ভিড় নেই। অনেক ব্যবসায়ী লোকসানে দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন। প্রশাসন চাইলেও মালোপাড়া, সোনাদীঘির মোড় ও সিটি কলেজ এলাকার ফুটপাত দখলমুক্ত করতে বাধা দেয় চাঁদাবাজরা। পুলিশকে জানানো হলে তারা রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

নগরীর নিউ মার্কেটের একজন বস্ত্র ব্যবসায়ী বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের একজন নেতার অনুসারীরা তিন ভাগে এলাকা ভাগ করে চাঁদা তোলেন। ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে দোকান বসিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়া হচ্ছে। ঐসব দোকানে ফুটপাত ও সড়কসংলগ্ন ভবন থেকে জোরপূর্বক বিদ্যুত্সংযোগ নেওয়া হচ্ছে।’ রেলগেট এলাকায় চাঁদার পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ বলে জানান বাবু নামের একজন ফুটপাত ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন আগে একদল চাঁদাবাজ তার কাছ থেকে জোর করে ৮০০ টাকা নিয়েছে। এর আগে, চাঁদাবাজরা দল বেঁধে তার দোকানে খেয়ে টাকা না দিয়েই চলে যেতেন।’

নগরীর তেরখাদিয়া কাঁচাবাজার এলাকায় ফুটপাতের একজন সবজি ব্যবসায়ী জানান, ‘আগে প্রতিদিন ১০-২০ টাকা চাঁদা দিলেই হতো। কিন্তু দেড় বছর ধরে ৫০ থেকে ১০০ টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে। এখানকার চাঁদাবাজরা এতই শক্তিশালী যে, সিটি করপোরেশন কর্মকর্তাদেরও টোল আদায় করতে বাধা দেয়।’

নগরীর শিরোইল বাস্তুহারাপাড়ার কয়েক জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানান, অতিষ্ঠ হয়ে তারা মহানগর বিএনপির নেতাদের কাছে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র মো. গাজিউর রহমান জানান, ব্যবসায়ীরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করছেন না। প্রকাশ্যে না পারলে গোপনে অভিযোগ দিলেও অভিযোগকারীর নাম-পরিচয় গোপন রেখে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আইনগত বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও রাজশাহী-২ আসনে দলীয় প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনু সাংবাদিকদের বলেন, ‘ফুটপাতের ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদাবাজির কথা শুনেছি। চাঁদাবাজিতে দলের কেউ জড়িত থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, গত জুলাইয়ে অনলাইনে শহরের ১২৩ চাঁদাবাজের তালিকা ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ঐ তালিকায় বিএনপি, ছাত্রদল ও সহযোগী সংগঠনের ৪৪ নেতাকর্মী এবং জামায়াতের ছয় জন এবং পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী ২৫ জনকে ‘সুবিধাবাদী’ চিহ্নিত করা হয়। যারা গত বছর ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের নতুন রাজনৈতিক পরিচয়ে চাঁদাবাজি করছে।

About news-admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *