আ’লীগ নেতার ভাইকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়ায় সংঘর্ষে আহত ১০#সদরঘাট ইজারায় নৌমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ#গাঁজাদিয়ে যুবদল নেতাকে অাটক #ঢাবির শিক্ষার্থীকে মেরে থানায় দিলো ছাত্রলীগ

ক্রাইমবার্তা ডেক্স রিপোর্টঃ  পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮,

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের রায়পুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। পরে গিয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

সংঘর্ষের পর অর্ধশতাধিক বহিরাগত লাঠিসোঁটা নিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ উভয়পক্ষের ১০ জন আহত হয়েছেন।

বিদ্যালয়টিতে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয়টির ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করেছিল।

প্রত্যক্ষদর্শী, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার রায়পুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে সম্প্রতি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম নান্নুকে নির্বাচিত করায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী ক্ষোভে ফুঁসে উঠে। একপর্যায়ে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে এবং শিক্ষকদের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ ঘটনায় ম্যানেজিং কমিটির সঙ্গে এলাকাবাসীর পাল্টাপাল্টি হামলা, সভা, সমাবেশও চলে। কয়েক দিন পরে ক্লাস শুরু হয়।

এরই মধ্যে ম্যানেজিং কমিটির ওই বিতর্কিত সভাপতি গোপনে পীরগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ খলিলুর রহমানের ছোট ভাই খয়বার মিয়াকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেন। এ খবর প্রকাশ হলে এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা আরও উত্তেজিত হয়ে যায়।

বৃহস্পতিবার বিদ্যালয় চলাকালীন ম্যানেজিং কমিটির ওই সভাপতি ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতির নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক বহিরাগত ভ্যানযোগে লাঠিসোঁটা নিয়ে বিদ্যালয়টিতে ঢুকে প্রধান শিক্ষকের কক্ষের তালা ভেঙে গোপনে নিয়োগ দেয়া প্রধান শিক্ষককে চেয়ারে বসাতে যায়। এ সময় ক্লাসরত শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের দ্বিতীয়তলা থেকে নিচতলায় নেমে আসতে চাইলে গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়।

পরে বিক্ষুব্ধ কয়েক শিক্ষার্থী বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নিচে নেমে গেটের তালা ভেঙে দিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে সভাপতি রেজাউল করিম নান্নু, সাবেক ইউপি সদস্য আতোয়ার রহমান, গোলাপ মিয়াসহ ১০ জন আহত হয়। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে আতোয়ার রহমানের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এদিকে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় বহিরাগতরা পালিয়ে রক্ষা পায়। পরে এসে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল মমিন মণ্ডল পুলিশের সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে ‘প্রধান শিক্ষক’ পদে নিয়োগ হয়নি বলে তিনি ঘোষণা দেন বলে জানা গেছে।

পীরগঞ্জ থানার ওসি রেজাউল করিম বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়েছিল। এ ব্যাপারে আমার কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি।

————0—————-

সদরঘাট ইজারায় নৌমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান
নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। ফাইল ছবি

রাজধানীর সদরঘাটের বিভিন্ন ঘাট ইজারা দেয়ার ক্ষেত্রে নানা অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। প্রকৃত লোকজনকে ঘাট ইজারা না দিয়ে ক্ষমতা অপব্যবহার করে পছন্দের লোকজনকে ঘাটের ইজারা দিয়েছেন তিনি। নিয়ম অনুযায়ী ঘাট সমবায় সমিতিকে রাজধানীর সদরঘাট ইজারা দেয়া কথা। কিন্তু মন্ত্রী তার আস্থাভাজন লোকজনের মাধ্যমে সদরঘাট পরিচালনা করছেন।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঘাট শ্রমিক লীগ নেতারা এসব অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জাতীয় ঘাট শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘাটে মধ্যস্বত্বভোগী ইজারাদারি প্রথা বিলুপ্ত করে ঘাট সমবায় সমিতিকে সহজমূল্যে ঘাট ইজারা দেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু জাতির জনককে হত্যার পর বঙ্গবন্ধুর অনুসৃত নীতি বিলুপ্ত করে দেয়া হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু সরকারের নীতি অনুযায়ী ঘাট শ্রমিক সমবায় সমিতিকে ঘাট বরাদ্দ দেয়া হয়।

জাতীয় ঘাট শ্রমিক লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে শাজাহান খান নৌমন্ত্রী হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু-শেখ হাসিনার নীতি বাতিল করে সদরঘাট টার্মিনালসহ বিভিন্ন ঘাটে খাস কালেকশনের নামে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছেন। তিনি কখনো বিএনপির চিহ্নিত লোক, কখনো ভুয়া ঘাট শ্রমিক দিয়ে ঘাট পরিচালনা করে আসছেন।

তিনি বলেন, অথচ শ্রম দফতর এবং জাতীয় ঘাট শ্রমিক লীগের অনুমোদিত কমিটি এবং শ্রমিক লীগের সমর্থিত শত শত ঘাট শ্রমিককে ঘাট এলাকায় কাজ করতে দিচ্ছেন না। এতে ঘাট শ্রমিকরা নিদারুণ দুরবস্থার মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছেন। এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন, অনুগ্রহ করে জাতীয় ঘাট শ্রমিক লীগ ও এই সংগঠনের শত শত ঘাট শ্রমিককে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের রাহুগ্রাস থেকে বাঁচান।

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঘাট শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি ফরহাদ হোসেন পরু বলেন, নৌপরিবহনমন্ত্রী তার আস্থাভাজন লোকজনকে সদরঘাটের বিভিন্ন ঘাট পরিচালনার দায়িত্ব দিচ্ছেন। মন্ত্রী বিভিন্ন জায়গায় বলছেন, শ্রমিকদের কাছে বিআইডব্লিউটিএর ইজারার সাড়ে ৫ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য, গত ৯ বছর ধরে আমরা সদরঘাটের কোনো কাজই পাচ্ছি না। তাই আমাদের কাছে বিআইডব্লিউটিএ কোনো টাকা পাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তারপরও আমরা বলব- সরকারের অর্থ যদি কেউ আত্মসাৎ করে থাকে তাহলে তাদের শাস্তি দিন। কিন্তু আমাদের বঞ্চিত করবেন না।

ফরহাদ হোসেন পরু আরও বলেন, মন্ত্রী ঢালাওভাবে শ্রমিকদের ওপর নানা দায় চাপাচ্ছেন। আমরা আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য হিসেবে মন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্য প্রত্যাশা করি না। এ সময় সংগঠনের সভাপতি আব্দুল জলিলসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

——0————

নন্দীগ্রামে গাঁজাসহ যুবদল নেতা গ্রেফতার

  বগুড়া ব্যুরো ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮,

বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় পুলিশ ১৫ পুরিয়া গাঁজাসহ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কালামকে (৩৫) গ্রেফতার করেছে।

বৃহস্পতিবার বিকালে দামগাড়া গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

নন্দীগ্রাম থানার এসআই চাঁন মিয়া জানান, দামগাড়া গ্রামের মৃত মজিবর রহমানের ছেলে আবুল কালাম নন্দীগ্রাম উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। বৃহস্পতিবার বিকাল পৌনে ৫টার দিকে গোপনে খবর পেয়ে তাকে নিজ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছে ১৫ পুরিয়া গাঁজা পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ দমন আইনে মামলা হয়েছে।

–0————-

দা দাবির অভিযোগ

ঢাবির শিক্ষার্থীকে মেরে থানায় দিলো ছাত্রলীগ

কাওসার আল আ‌মিন – নয়া দিগন্ত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সান্ধ্যকালীন কোর্সের এক ছাত্রকে কয়েক দফায় মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ব্যক্তিগত শত্রুতার জের ধরে তাকে মারধর করা হয়েছে বলে জানা যায়।

ভুক্তভোগীর কাছ থেকে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ ওঠে। যদিও মারধরকারীদের পক্ষ থেকে সে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করা হয়। বুধবার দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী আহম্মেদ উল্লাহ সাদ্দাম ইন্সটিটিউটের সান্ধ্যকালীন কোর্সে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। বুধবার দিবাগত রাত ৯টা থেকে ১টা পর্যন্ত বেশ কয়েক দফায় প্রথমে ঢাকা কলেজের ভিতরে নিয়ে এবং পরে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন এনে মারধর করা হয়।

মারধর শেষে তাকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয়। জানা গেছে, বুধবার রাত ৯ টার দিকে সমাজ কল্যাণ ইনস্টিটিউট থেকে ক্লাস করে বেরোনোর পর আহমেদ উল্লাহ সাদ্দামকে বিশ^বিদ্যালয় সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাউসার আল আমিনসহ অন্তত ১০-১৫ জন ধরে নিয়ে যায়। প্রথমে তারা তাকে ঢাকা কলেজের পুকুরের পাড়ে নিয়ে মারধর করে।

মারধরের এক পর্যায়ে তাকে গাঁজা ও ফেন্সিডিল নিয়ে ঘুরে এমন স্বীকারোক্তি দিতে বলা হয়। কিন্তু সে স্বীকারোক্তি না দেওয়ায় তাকে আরও মারধর করে। এরপর তাকে তার বাসা থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে ওই ছাত্রলীগ নেতাদের দিতে বলা হয়। কিন্তু সেটাও না করায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কয়েক দফা মারধরের পর সে বিএনপি করে এই মর্মে স্বীকারোক্তি আদায় করে তাকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয়। এসময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে জানা গেছে, মারধরের শিকার আহমেদ উল্লাহ সাদ্দাম ও ছাত্রলীগ নেতা কাউসার আল আমিন উভয়ের গ্রামের বাড়ি পাবনাতে। কাউসার আল আমিনের বাবা মুক্তিযোদ্ধা। সেই সূত্রে তিনি একজন কোটাধারী। আহমেদ উল্লাহ সাদ্দাম তার ফেসবুকে কোটার বিপক্ষে লেখালেখি করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কাউসার তাকে মারধর করে। মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত কাওসার আল আমিন অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আপনি ভুল জায়গায় কল করেছেন। পরে অভিযুক্তির বিষয়ে জানালে তিনি বলেন আপনি দেখা করেন। চাঁ

দা দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনার কাছে কে অভিযোগ করেছে? যে অভিযুক্ত (সাদ্দাম) সে তো অলরেডি থানায় আছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদককে কল দিয়ে ও খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, তাকে পুলিশে দেয়া হয়েছে কিছু তথ্য জানার জন্য। কি তথ্য জানার জন্য এমন প্রশ্নের জবাবে প্রক্টর বলেন, জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

জিজ্ঞাসাবাদ করে আমাকে জানাবে কেন ওকে দেয়া হয়েছে এবং কি করেছে। তাকে (প্রক্টরকে) কি কারণে পুলিশে দেয়া হচ্ছে তা জানানো হয়নি বলে বলেন তিনি। পুলিশে সোপর্দের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার তদন্ত কর্মকর্তা জাফর আলী বিশ্বাস জানান, ওই ছাত্র তাদের কাছে আছে। তার ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। কেন তাদের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেউ বলে বিএনপি করে, কেউ বলে জামায়াত করে। ঘটনাটি তারা তদন্ত করছেন বলে জানান তিনি।

আরো পড়ুন : ঢাবিতে আবশ্যিক কোর্সের পরীক্ষা না নিয়েই দেয়া হচ্ছে ডিগ্রি
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে মাস্টার্সের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত আবশ্যিক কোর্স বাদ দিয়েই পরীক্ষা সম্পন্ন হচ্ছে। চলতি বছরসহ গত তিন বছর ধারাবাহিকভাবে নেয়া হচ্ছে পরীক্ষা। দেয়া হচ্ছে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও। অভিযোগ রয়েছে উক্ত আবশ্যিক কোর্সটি বাদ দিয়ে পরীক্ষা নেয়া হলেও সে স্থলে নতুন কোনো কোর্স যুক্ত হয়নি। পাশপাশি তিন বছরের এই অসম্পূর্ণ অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের বিষয়টি ধামাচাপা বিভাগ কর্তৃপক্ষ দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ।

ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের মাস্টার্সের সিলেবাস পর্যালোচনা করে জানা যায়, বিভাগের এক বছর মেয়াদী মাস্টার্স কোর্সে ৩০ ক্রেডিট থাকবে। প্রত্যেক ১০০ নম্বরের সমতুল্য তাত্ত্বিক কোর্সে ৪ ক্রেডিট আছে। ওই সিলেবাসে ৫০১ নম্বর কোর্স ‘অ্যাডভ্যানসড রিসার্স মেথডলোজি ইন জিওগ্রাফী’ শীর্ষক একটি কোর্স রয়েছে। এই কোর্সটি মাস্টার্সের সকল শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক। কিন্তু বিভাগ কর্তৃপক্ষ মাস্টার্স ২০১৪-১৫ সেশন, ২০১৫-১৬ সেশনে ৪ ক্রেডিটের ওই আবশ্যিক কোর্স বাদ দিয়ে ২৬ ক্রেডিটে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিয়েছে ডিগ্রিও দিয়েছে।

সর্বশেষ গত ২৯ আগস্ট মাস্টার্স ২০১৬-১৭ সেশনের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এই বর্ষেও আবশ্যিক ওই কোর্সটি বাদ দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। তবে সে স্থলে নতুন কোনো কোর্স যোগ করা হয়নি। এক রকম রাখ-ঢাকভাবেই আবশ্যিক কোর্স বাদ দিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে ডিগ্রি তুলে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। বিভাগটি অন্তত পাঁচ মাসের সেশন জট রয়েছে বলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সিনিয়র শিক্ষকদের সাথে কথা বললে তারা মন্তব্য করেন যে, আবশ্যিক কোর্স বাদ দিয়ে পরীক্ষা সম্পন্ন করে ডিগ্রি দিলে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম অসম্পূর্ণ থাকে। এটা কোনো নিয়মের ভেতর পড়ে না বলেও মন্তব্য ওই শিক্ষকদের। পাশাপাশি বিভাগের রাখ-ঢাক ব্যাপারটিকেও ভাল মনে করছেন না তারা।

এদিকে বিভাগ সূত্র জানায়, নতুন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রেজওয়ান হোসেন ভূইয়ার সভাপতিত্বে¡ গত ৭ আগস্ট বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটির একটি সভা হয়। সেখানে আবশ্যিক কোর্স বাদ দিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি একজন শিক্ষক উত্থাপন করলে শিক্ষকরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যান। একটি পক্ষ আবশ্যিক ওই কোর্সটির পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে মত দেন। অন্যপক্ষটি কোর্সটি ছাড়াই পূর্বের দুই বছরের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার পক্ষে বলেন।

 

চলতি মাস্টার্স পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রেজওয়ান হোসেন ভূঁইয়া। পরীক্ষা কমিটি থেকে তিনি পদত্যাগ করলে কমিটির নতুন চেয়ারম্যান হন অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম নাজেম।

চলতি মাস্টার্স পরীক্ষাটি আবশ্যিক কোর্স ছাড়াই অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নাজেম বলেন, ওটা চেয়ারম্যান বলবে। এটা আমার কোনো দায়-দায়িত্ব না এবং এটা আমি জানি না। পরে আবার বলেন, জানি না এটা আমার বলা ঠিক হবে না। বিভাগের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান এটা ব্যাখা করেবন, আপনি তাকে ফোন করেন।

এ বিষযে বিভাগের চেয়ারম্যানের সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বাহালুল হক চৌধুরীর সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও প্রথমবার ফোন রিসিভ করেন নি। পরে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এদিকে, মাস্টার্স ২০১৪-১৫ সেশনে প্রথমবার যখন আবশ্যিক কোর্স ছাড়া পরীক্ষা হয় সেসময় পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন অধ্যাপক ড. এ কিউ এম মাহবুব। আবশ্যিক কোর্স পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। মন্তব্য পাওয়া যায়নি ২০১৫-১৬ সেশনে মাস্টার্স পরীক্ষা কমিটি ও বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুনেরও।

আবশ্যিক কোর্স বাদ দেয়ার বিষয়ে জানতে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের প্রোভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ এবং প্রোভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, একটি বিভাগের সিলেবাস ঠিক করে বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটি। পরে এটি অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে অনুমোদন হয়ে সিন্ডিকেটে চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়। সিন্ডিকেটের প্রধান থাকেন বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি। সিন্ডিকেটের অনুমোদন ব্যতীত বিভাগ কর্তৃপক্ষ ইচ্ছামত কোর্স বাড়ানো কিংবা কমাতে পারে না। সার্বিক বিষয়ে জানতে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানকে ফোন করা হলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

Please follow and like us:

Check Also

খাবার স্যালাইন বিতরণ কলারোয়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর

সারা দেশের মতো কলারোয়াতেও তীব্র তাপদাহ চলছে। গরমে সবারই হাঁসফাঁস অবস্থা। তবে থেমে নেই জনজীবন। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।