ব্যাপক বন্যার আংকা পাঁচ জেলা প্লাবিত ॥ হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ   অবিরাম বর্ষণ, উজান ও পাহাড়ি ঢলে এবং সুরমা, ধলাই, যমুনা ও তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সুনামগঞ্জ, সিলেট, সিরাজগঞ্জ, লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। নতুন করে আরো অনেক এলাকা প্লাবিত হয়ে ব্যাপক বন্যার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। কয়েক হাজার মানুষ হয়ে পড়েছে পানিবন্দী। ফসলের হয়েছে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি। লালমনিরহাটে আরো একজনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। জেলাগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বিচ্ছিন্ন। কোথাও কোথাও ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। উঠতি ফসল ও অনেক পুকুর ডুবে গেছে। বাসা-বাড়ীতে পানি ঢুকে পাড়ায় গৃহস্থালী জিনিসপত্রের ব্যাপক ক্ষতি ও রান্না-বান্না বন্ধ হয়ে পানিবন্দীর অনাহার অর্ধাহার দিনাতিপাত করছেন। নেই কোন ত্রাণসাহায্য। পানিবন্দী ও অবিরাম বর্ষণের ফলে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী হয়ে পড়েছেন বড় অসহায়। যারা দিন আনে দিন খায় তাদের অবস্থা চরম আকার ধারণ করেছে। এই দুর্যোগময় মুহূর্তে মিলছে না কোন সাহায্য, ত্রাণ ও খাবার সামগ্রী। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব। আমাদের সিলেট ব্যুরো ও জেলা সংবাদদাতা এ খবর জানান।

উপজেলার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

আমাদের সিলেট ব্যুরো জানায়, বর্ষায় অঝরে বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে দেশের অন্যতম হাওড় অঞ্চল নামে খ্যাত সুনামগঞ্জের অনেক এলাকার মানুষ পানিবন্দী। সিলেটের সুরমা কিছুটা নমনীয় থাকলেও ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে সুনামগঞ্জের সুরমা। সুনামগঞ্জের খর¯্রােতা সুরমা উত্তাল হয়ে প্রমত্তা রূপ ধারণ করেছে। শুধু সুরমা নয়, ৬ জন তরতাজা যুবকের প্রাণ নিয়েও সিলেটের সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া ধলাই নদীর গর্জন থাকছে না। ধলাই এখন সিলেটে আসা লাখো পর্যটকের কাছে এক আতঙ্কের নাম।

সুনামগঞ্জে গত বুধবার রাত সাড়ে ১১ টায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা সতর্ক বার্তা জারি করা হয়েছে। সতর্কবার্তায় গত ৪ দিনের অব্যাহত বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১৬ সেঃ মিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি ও বন্যার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ভারতের মেঘালয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে সুনামগঞ্জে। গত তিন দিনের বর্ষণ ও ঢল অব্যাহত রয়েছে। রেকর্ড বৃষ্টিপাতে সুরমা, যাদুকাটা, সোমেশ্বরী, খাসিয়ামারা, চেলাসহ বিভিন্ন সীমান্ত নদ নদীর পানি বেড়েছে। প্রধান নদী সুরমার পানি বুধবার সন্ধ্যা ৬ টায় সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ১৬ সেঃ মিঃ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঢল ও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে নিম্নাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থাপনা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও গত ২৪ ঘন্টায় ১৭৫ মিঃ মিঃ রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে নিশ্চিত করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়া।

তিনি বলেন, প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছে। রেকর্ড বৃষ্টিপাতে নদ নদীর পানি বেড়েছে, এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন নি¤œাঞ্চলের মানুষ। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল অব্যাহত আছে। এ কারণে নদী ও হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলার বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, জামালগঞ্জ উপজেলার বেশ কিছু অভ্যন্তরীন সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে জেলার নি¤œাঞ্চল।

জামালগঞ্জের হাফসা বেগম জানান, তাদের সারা গ্রামে পানি এমনভাবে উঠেছে সুনামগঞ্জে যাওয়া তো দূরের কথা জামালগঞ্জ সদরেরও যাওয়া যাচ্ছে না। ঘরে চুলোয় পানি উঠে যাওয়ায় রান্নাবান্নাও করা যাচ্ছে। শিশু ও বয়স্ক মহিলাদের নিয়ে বড়ই কষ্টে আছেন হাফসারা। শক্তিয়ারখলা গ্রামের বাসিন্দা কামাল হোসেনসহ অনেকেই জানান, পাহাড়ি ঢলে তাহিরপুর-আনোয়ারপুর-বিশ্বম্ভরপুর সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রভাবিত হওয়ায় এই দুই উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। এই সড়কটির (দুর্গা অংশে) পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাত হলেই বর্ষা মওসুমে সাময়িক তলিয়ে যায়। আনোয়ারপুর গ্রামের জাকেরিন চমক জানান, তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়ক পানিতে ডুবে যাওয়ায় জেলা সদরের সাথে সড়ক পথে যোগাযোগ একবারেই বন্ধ রয়েছে। পানি বাড়ার কারণে নি¤œাঞ্চলের মানুষ আতংকের মাঝে আছে।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কর”না সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, তাহিরপুর উপজেলার গুর”ত্বপূর্ণ তাহিরপুর-বাদাঘাট, বাদাঘাট সোহালা, বাদাঘাট-টেকেরঘাট-বাগলী সড়কও ভেঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এছাড়াও তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়ক একাধিক স্থানে ভাঙ্গণ ও পানিতে ডুবে যাওয়ার ফলে জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সাময়িক বন্ধ রয়েছে। এতে করে জনজীবনে এসেছে দুর্ভোগ। আমার উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেক্ষে সর্তক অবস্থানে আছে সবাই।

বন্যা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠার জন্য সকল উপজেলায় স্থানীয় পর্যায়ে উদ্ধার টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলায় ৩হাজার ৭শ ৩৫ প্যাকেট শুকনা খাবার প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং জেলা ও উপজেলার সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের কর্মস্থলে থাকা ও সকল উপজেলায় মেডিক্যাল টিম গঠন করার জন্য গত সোমবার রাত ১১ টায় নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ। ইতিমধ্যে মেডিকেল টীম বন্যার্তদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

শাহজাদপুরে বন্যার পানি বৃদ্ধি : ৯টি উপজেলা প্লাবিত

শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার রাউতারা নবনির্মিত রিং বাঁধটি দুই দফায় দুই স্থানে কেটে দিয়েছে স্থানীয় অসাধু মৎস্যজীবী ও নৌকাচালকরা। ফলে শাহজাদপুর উপজেলার পশ্চিম এলাকার ৩টি ইউনিয়নসহ চলনবিল অঞ্চলের ৯ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এ বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে এ এলাকার বিস্তৃীর্ণ ফসলের মাঠ ও গো-বাথান। ফলে কৃষকরা তাদের গবাদি পশু বাড়িতে নিয়ে রেখেছে। কাঁচা ঘাসের মাঠ বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় এ এলাকায় গো-খাদ্যের দাম বস্তা প্রতি ২/৩‘শ টাকা করে বেড়ে গেছে। ফলে এ অঞ্চলের গো-খামার মালিক ও গবাদি কৃষকেরা তাদের গবাদি পশুর খাদ্য নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। গত ১ মাস আগে পওর বিভাগের আওতায় ১ কোটি ৫১ লাখ ১৫ হাজার ৫৮১.৯৬ টাকা ব্যায়ে শাহজাদপুর উপজেলার পেতাজিয়া ইউনিয়নের রাউতারা সুইচগেট সংলগ্ন ১২‘শ মিটার দৈর্ঘ্য এ রিং বাঁধটির নির্মাণ করা হয়। প্রতি বছর বন্যার হাত থেকে এ অঞ্চলের কৃষকদের জমির পাকা ধান রক্ষার জন্য সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড এটি নির্মাণ করে। আর প্রতি বছরই এ এলাকার মৎস্যজীবী ও নৌকা চালকরা তাদের সুবিধার জন্য এ বাঁধ কেটে দেয়। এ বছর বন্যা দেরিতে আসায় কৃষকরা আগে ভাগেই জমি থেকে পাঁকা ধান কেটে ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। তারপরেও পানি উন্নয়ন বোর্ড বিপুল অংকের টাকা ব্যয়ে এ বাঁধটি নির্মাণ করেন। এলাকাবাসী জানায়,সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের মাধ্যমে এ বাঁধ নির্মাণের নামে গত ৩৭ বছরে কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকা এ ভাবে হরিলুট করেছেন। এ বছরও তাই করলেন। এলাকাবাসি আরো জানায়,১৯৯৪ সালের পর থেকে এ অঞ্চলে ধান কাঁটা হয়ে গেলে বন্যার পানি বৃদ্ধি পায়। এতে কোন ফসলহানী হয় না। তারপরেও সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ফসল রক্ষার নামে প্রতি বছরই এ বাঁধ নির্মাণ করে। এ বাঁধ নির্মণের ফলে এ অঞ্চলের বিস্তীর্ণ জমি ও জলাশয়ে দেরিতে বন্যা হয়। এতে মৎস্যজীবিরা আশানুরূপ মাছ শিকার থেকে বিরত হন। অপরদিকে এ এলাকায় বন্যা মৌসুমে নৌকা ছাড়া চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়ে। দেরিতে বন্যা হলে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত নৌকা মালিকরা লোকশানে পড়েন। তাই তারা এ লোকশানের হাত থেকে রেহাই পেতে ধাঁন উঠে যাওয়ার পরপরই বালু দিয়ে তৈরী নিন্মমানের ও দায়সারা এ বাঁধ কেটে দেয়। এ বছরও তারা সেই কাজটিই করলেন। ফলে শাহজাদপুর উপজেলার পশ্চিম অঞ্চলের কায়েমপুর, রূপবাটি ও পোতাজিয়া ইউনিয়নের সকল গ্রাম সহ চলনবিল অঞ্চলের ৮ উপজেলার প্রায় ৫৩ হাজার হেক্টর জমি ফসলি জমি বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া নিচু অনেক কাঁচা রাস্তা-ঘাটও এ বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। এতে এ অঞ্চলের প্রায় ১ লাখ মানুষ বন্যার পানিতে আক্রান্ত হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে। এ ব্যাপারে পোতাজিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী ব্যাপারী জানান, আমাদের এখানকার কৃষকেরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই নিন্মমানের বালু দিয়ে তৈরি লো-হাইড রিং বাঁধ নির্মাণে খুবই ক্ষুব্ধ। নদীতে পানি বাড়লেই বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার ভয়ে কৃষকের বুক কাঁপে। তাই তারা আর এই নিন্মমানের বালু দিয়ে তৈরী রিং বাঁধ চায় না তারা স্থায়ী ভাবে বাঁধ নির্মাণ চায়। এ ব্যাপারে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হুসেইন খান বলেন, সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ বাঁধ যারা নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থে কেটে দিয়েছে,তাদের খুজে বের করে আইন প্রয়োগের মাধ্যেমে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হবে।

লালমনিরহাটে ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী

লালমনিরহাট সংবাদদাতা : পানিতে ডুবে ১ শিশুর মৃত্যু, টানা ভারী বর্ষন ও পাহাড়ি ঢলে লালমনিরহাটে ৫ হাজার পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। তবে জেলা ত্রাণ শাখার তথ্য মতে, লালমনিরহাটে ১ হাজার ৮শত ৭৭ টি পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। লালমনিরহাটে গত ৫ দিন থেকে টানা ভারি বর্ষনে তিস্তা ও ধরলার তীরবর্তী এলাকায় প্লাবিত হয়েছে কয়েক হাজার পরিবার। লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, গোকুন্ডা, রাজপুর, মোগলহাট ও কুলাঘাট ইউনিয়নে বৃষ্টির পানিতে জলাবন্ধতার কারণে প্রায় ৫০০টি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচায় ৫০টি, হাতীবান্ধা উপজেলা সিন্দুনা ইউনিয়নে ২ হাজার, পাটিকাপাড়া – ১ হাজার ২ শত, ডাউয়াবাড়ী ৬ শত, গড্ডিমারী ৪ শতটি পরিবার পানিবন্দী হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ইউ.পি চেয়ারম্যানগণ বৃহস্পতিবার নিশ্চিত করেছে। লালমনিরহাটে সবমিলে ৫ হাজার পরিবার পানি বন্দী হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে জেলা প্রশাসন এ খবর সঠিক ভাবে জানে না। লালমনিরহাট জেলার ত্রাণ কর্মকর্তা আলী হায়দার বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) জানান, লালমনিরহাটে ১হাজার ৮শত ৭৭ টি পরিবার পানিবন্দী হয়েছে। এদের মধ্যে ৪৩টি পরিবারের মাঝে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। এদিকে লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের পশ্চিম গুড়িয়াদহ এলাকার সামছুলের ছেলে মুকিত (৯) তিস্তা নদীতে পড়ে নিখোঁজ হয়। পরে লালমনিরহাট ফায়ার সার্ভিস এর একটি ডুবুরি দল তিস্তা নদীতে খোঁজে বৃহস্পতিবার বিকালে লাশ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী বজলে করিম জানান, তিস্তার পানি ৫২.৬৭ ও ধরলার পানি ৩০.৫৯ সেন্টিমিটার বিপদ সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

তিস্তার পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপরে

নীলফামারী সংবাদদাতা ঃ টানা বর্ষন ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় তিন হাজার পরিবার। ভোর রাত থেকে তিস্তার পাড়ের অধিকাংশ বাড়ী ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় অনেকে তিস্তার বামতীর বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পূর্বাভাস সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে তিস্তার পানি বাড়তে শুর” করে নীলফামারীর ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে। সকাল ১০টা থেকে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যারেজের সবকটি(৪৪টি) জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।

এদিকে তিস্তা নদী পরিবেষ্টিত ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী, খগাখড়িবাড়ি, পুর্ব ছাতনাই, পুর্ব ছাতনাই, নাউতারা, গয়াবাড়ি এবং জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা, শৌলমারীসহ আশপাশ কয়েকটি ইউনিয়নের তিন হাজার পরিবারের বসতবাড়ীতে পানি উঠেছে। টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ময়নুল ইসলাম জানান বন্যায় তার ইউনিয়নের পূর্ব খড়িবাড়ী,টাবুর চর ও বাংলা পাড়ার প্রায় ২ হাজার পরিবার পানিবন্দী রয়েছে।

খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন জানান, তার ইউনিয়নের কিছামত ছাতনাই চরে বসবাসরত তিনশত পরিবারের বসতভিটায় হাঁটু পরিমান পানি উঠেছে।

পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান বলেন, তার ইউনিয়নের প্রায় ৯শত পরিবার ভোররাত থেকে পানি বন্দী হয়ে রয়েছে। এছাড়া অনেক পরিবার তিস্তার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল¬াহ আল মামুন বলেন, টানা ভারী বর্ষণ ও উজানে ঢলে তিস্তা পানি বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি জানান তিস্তা এলাকা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় তৎপর রয়েছে বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা।

Please follow and like us:

Check Also

খাবার স্যালাইন বিতরণ কলারোয়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর

সারা দেশের মতো কলারোয়াতেও তীব্র তাপদাহ চলছে। গরমে সবারই হাঁসফাঁস অবস্থা। তবে থেমে নেই জনজীবন। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।