বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যানের বাড়ি বুলডোজারে গুঁড়িয়ে দিয়ে রাতভর লুটপাট!

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ  ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রাতের আঁধারে বুলডোজার দিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদের বাড়ির সীমানা প্রাচীর ও স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এছাড়াও করাত দিয়ে বাড়ির ভেতরের শতবর্ষী গাছও কেটে ফেলা হয়েছে।

মঙ্গলবার রাত দেড়টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত এ তাণ্ডব চালানো হয়। বাড়িতে একটি বেসরকারি ক্লিনিক ছিল। এ ঘটনার পর থেকে ক্লিনিকটিতে রোগীদের সেবা প্রদান বন্ধ রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, ঘটনার সময় পুলিশ সদর হাসপাতালে ভেতরে টহল কার নিয়ে অবস্থান করছিল। তাণ্ডব শুরু হওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর গাড়িটি বের হয়ে যায়।

এদিকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও পাঁচবারের সাবেক সংসদ সদস্য হারুন অর রশিদের বাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সকালে জেলা বিএনপির সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টুসহ শহরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা সদর হাসপাতালের প্রধান ফটক থেকে প্রায় ৩০-৪০ ফুট দূরত্বে কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও রেড ক্রিসেন্টের সাবেক চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদের বাড়ি।

তার বাড়িটি ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ‘মডার্ণ এক্স-রে ও প্যাথলজি ক্লিনিক’ কর্তৃপক্ষ তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। মঙ্গলবার রাত দুইটার দিকে একদল দুর্বৃত্ত বুলডোজার নিয়ে এসে ওই ক্লিনিকে ভাংচুর চালায়। এ সময় তারা ক্লিনিকের সীমানা প্রচীর, রোগীদের প্রতিক্ষালয়সহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ভাংচুর ও লুটপাট করে। পাশাপাশি ক্লিনিকের ভেতরে গাছও করাত দিয়ে কেটে ফেলে দুর্বৃত্তরা। বুধবার সকাল সাতটা পর্যন্ত এ তাণ্ডব চালানো হয়। এ সময় তারা কমপক্ষে ৭টি ট্রাক্টর করে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও মডার্ণ এক্স-রে এবং প্যাথলজি ক্লিনিকের এক্স-রে টেকনিশিয়ান শফিক মিয়া বলেন, রাত দেড়টার থেকে প্রায় শতাধিক লোক বুলডোজার নিয়ে ভাংচুর শুরু করে। তাদের বাধা দিতে গেলে পৌরসভা থেকে এসেছেন বলে জানায়।

মডার্ণ এক্স-রে ও প্যাথলজি ক্লিনিকের পরিচালক আজিজুল হক জানান, রাতের আঁধারে একদল দুর্বৃত্ত এসে ভাংচুর চালিয়েছে। ক্লিনিকের দুটি ফটক, একটি জেনারেটর, একটি আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন ও একটি এসি ট্রাকে করে নিয়ে গেছে তারা। এ ছাড়া ক্লিনিকের তিনটি জেনারেটর, সাতটি এসি, একটি আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন ও পাঁচটি কম্পিউটার নষ্ট হয়ে গেছে। ভাংচুরে প্রায় ৬০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

একটি সূত্র জানায়, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. জাকারিয়া ও ডা. মনির হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হেলাল উদ্দিন, শহর যুবলীগের আহ্বায়ক আমজাদ হোসেন রনি, শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম, ব্যবসায়ী ওবায়দুল হক সুচী, নাটাইর বাছির, ছয়গড়িয়া পাড়ার মিজান, শেরপুরের ইয়াছিনসহ শহরের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী মডার্ণ এক্স-রে ও প্যাথলজি ক্লিনিকের পশ্চিম দিকে নতুন আরেকটি হাসপাতাল নির্মাণের জন্য জায়গা কিনেছেন। সেখানে মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। মূলত ওই হাসপাতালের রাস্তা তৈরির জন্য মডার্ণ এক্স-রে ও প্যাথলজি ক্লিনিকের সীমানা প্রচীরসহ ভেতরে তাণ্ডব চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।

এদিকে রাত ১১টা ৪০মিনিটে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রেজাউল কবির। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল কবির বলেন, সকালে ভাংচুরের ঘটনাটি শুনেছি। সদর থানার ওসিকে ঘটনাস্থল পরির্দশন করতে বলেছি।

হাসপাতাল মালিকপক্ষ রাতে ভাংচুরের ঘটনাটি পুলিশকে অবগত করলে কেউ আসেনি কেন- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই।

গত ৩ জুলাই ডা. জাকারিয়া পৌরসভা মেয়রের কাছে সদর হাসপাতালের রোডে প্রস্তাবিত মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের দক্ষিণপাশে পৌরসভার পূর্ব-পশ্চিমে দখলকৃত রাস্তাটি (মডার্ণ এক্স-রে ও প্যাথলজি ক্লিনিক সীমানা প্রাচীরের দক্ষিণে পায়ে হাঁটার রাস্তা) সর্বসাধারণ ও সেবামূলক কাজে ব্যবহার করার জন্য দখলমুক্ত করার আবেদন করেন।

ডা. জাকারিয়া ওই মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তবে তিনি দেশের বাইরে থাকায় তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ভাংচুর হওয়া ক্লিনিকের জায়গার মালিক অ্যাডভোকেট হারুন অর রশীদও দেশের বাইরে অবস্থান করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র নায়ার কবির জানান, আমাদের বুলডোজার নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। ডা. জাকারিয়ার আবেদনটি পৌরসভার প্রকৌশল শাখায় রয়েছে বলে জানান তিনি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন জানান, ভাংচুরের ঘটনাটি শুনে ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Please follow and like us:

Check Also

খাবার স্যালাইন বিতরণ কলারোয়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর

সারা দেশের মতো কলারোয়াতেও তীব্র তাপদাহ চলছে। গরমে সবারই হাঁসফাঁস অবস্থা। তবে থেমে নেই জনজীবন। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।