আবু সাইদ বিশ্বাস:ক্রাইমবাতা রিপোট: সাজা প্রাপ্ত আসামীকে কারাগারে না পাঠিয়ে পিতা-মাতার সেবাসহ পাঁচটি শর্তে বাড়িতে প্রবেশনে পাঠিয়ে সংশোধনের সুযোগ দিয়ে আদালত রায় দিয়েছেন। মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে সাতক্ষীরা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক ইয়াসমিন নাহার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি মামলায় এক বছর সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে কারাগারে না পাঠিয়ে বাড়িতে প্রবেশনে পাঠিয়ে সংশোধনের সুযোগ দিয়েছে রায় দেন। সাজাপ্রপ্ত আসামি হাসান আলী সরদার (২৫) সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভাদড়া গ্রামের রজব আলী সরদারের ছেলে।
অন্যদিকে রবিবার (৮ নভেম্বর) হাইকোর্ট মাদক মামলার ৫ বছরের দন্ডপ্রাপ্ত আসামি মতি মাতবরকে কারাগারের বদলে সংশোধনের জন্য নিজ পরিবারের কাছে ফেরত পাঠান। আসামিপক্ষের আইনজীবী শিশির মুনির গণমাধ্যমকে জানান, বিশেষ আইনে করা মামলায় দেশে এর আগে আর কোনও দন্ডপ্রাপ্ত আসামি এ সুযোগ পায়নি। আদালত আসামিকে সংশোধিত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে এ রায় দিয়েছেন। আসামি মতি মাতবরের কাছ থেকে ৪১১ পিস ইয়াবা উদ্ধারের অভিযোগে ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বরে ঢাকার কোতোয়ালি থানায় একটি মামলায় তাকে অভিযুক্ত করা হয়।
তিন দিনের ব্যবধানে দেশের দুটি আদালতের এমন রায়ে সারাদেশে সাড়া ফেলেছে। এমন রায় নিয়ে চলছে ব্যাপক গুনজন। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তজার্তিক গণমাধ্যমে সংবাদটি জোরালো ভাবে প্রকাশ পেয়েছে। হাইকোট বিভাগের জুনিয়র আইনজীবী শিশির মুনিরের ভুয়সী প্রশাংসা করছে দেশব্যাপি। আইনজীবী হিসেবে একটি টেভিতে দেয়া বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন রায় বিরল। হাইকোট বিভাগের এমন রায় ঘোষণায় নিন্ম আদালত সাতক্ষীরার ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক ইয়াসমিন নাহারও একই রকম রায় দেন। আসামী পক্ষের আইনজীবী এড. এটিএম ফখরুল আলম জানান, মঙ্গলবার জিআর ৪৩/১৫ (টিআর ২৯/১৬) নম্বর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনের মামলার রায়ে (৩ কেজি গাজা রাখার অপরাধ প্রমানিত হয়) আসামী হাসান আলী সরদারকে এক বছরের সাজা দিয়ে জেলে না পাঠিয়ে প্রবেশনে মুক্তি দেয়া হয়েছে। তবে এই সময় তাকে ৫টি শর্ত পালনের আদেশ দেয়া হয়েছে। শর্তগুলো হলো-
১। কোনরূপ মাদক বা নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করবে না ২। কোন খারাপ সঙ্গীর সাথে মিশবে না ৩। প্রবেশনকালীন সময়ে ১০টি গাছ রোপ করতে হবে ৪। পিতা-মাতার সেবা করতে হবে ৫। সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন মাদকের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে হবে।
এদিকে, সাজাপ্রাপ্ত আসামি শর্তগুলো মানছে কিনা তা তদারকি করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সাতক্ষীরা সমাজসেবা অফিসের প্রবেশনাল অফিসারকে। তিন মাস পর পর সমাজসেবা প্রবেশনাল অফিসারকে আদালতে এ বিষয়ে রিপোর্ট জমা দেয়ার আদেশও দেয়া হয়েছে আলোচিত এই রায়ে।
অন্যদিকে ২০ মাস কারাভোগের পর, নিন্ম আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসামি মতি মাতবর ১ জুলাই ২০১৭ তারিখে হাইকোর্টে রিভিশন মামলা দায়ের করেন। ৯ জুলাই ২০১৭ তারিখে হাইকোর্ট তাকে জামিন প্রদান করেন। পরবর্তীতে রিভিশন মামলাটি পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য কার্যতালিকায় এলে, আসামিপক্ষের আইনজীবী শিশির মনির আদালতের কাছে এ মামলায় প্রবেশন অধ্যাদেশ, ১৯৬০-এর ধারা ৫ অনুযায়ী আদেশ দেয়ার আবেদন করেন। আসামির এটি প্রথম অপরাধ এবং আর কোনও অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার রেকর্ড না থাকায়, তাকে প্রবিশনে থাকার সুযোগ চাওয়া হয়।
মামলার নথিতে বলা হয়েছে, আসামি মতি মাতবরের কাছ থেকে ৪১১ পিস ইয়াবা উদ্ধারের অভিযোগে ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বরে ঢাকার কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। পুলি
শ আসামি মতি মাতবরকে দুদিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তদন্ত শেষে ২৪ নভেম্বর ২০১৫ এ আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। ২৯ মার্চ ২০১৬ আদালতে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিচার। ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি বিচারিক আদালত মতি মাতবরকে ৫ বছরের কারাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী শিশির মনিরের যুক্তিতর্ক শেষে হাইকোটে বিচারপতি জাফর আহমেদের একক বেঞ্চে মাদক মামলার ৫ বছরের দন্ডপ্রাপ্ত আসামি মতি মাতবরকে কারাগারের বদলে সংশোধনের জন্য নিজ পরিবারের কাছে ফেরত পাঠান। উচ্চ আদালতে মাদক মামলায় কোনও দন্ডপ্রাপ্ত আসামির এ সুযোগ পাওয়া এই প্রথম ঘটল। আর এতে করেই সাজাপ্রাপ্ত হয়েও স্ত্রী ও সন্তানের হাত ধরে বাড়ি ফিরেন আসামি মতি মাতবর। তবে আসামি মতিকে ৩টি শর্ত দেন হাইকোর্ট। শর্তগুলো হলো-
প্রথম শর্ত- বাড়ি ফিরেই নিজের ৭৫ বছর বয়সী মায়ের যতœ নিতে হবে। দ্বিতীয় শর্ত- আসামির স্কুলপড়ুয়া ২ সন্তানের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিতে হবে। তৃতীয় শর্ত- কন্যার বিয়ের বয়স না হওয়া পর্যন্ত তাকে বিয়ে দেওয়া যাবে না।
হাইকোর্টের রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন আসামি মতি মাতবরের পরিবার- স্ত্রী ও ১০ বছরের ছেলে। রায় শেষে আসামির স্ত্রীর ফিরোজা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে আল্লাহর কাছে শোকরিয়া আদায় ও আইনজীবী শিশির মনিরের দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
https://www.facebook.com/somoynews.tv/videos/2812842392294208