দেশে ভয়াবহ দুঃসময় চলছে : খালেদা জিয়া

ক্রাইমবার্তা ডেস্ক রিপোট:০৯ ডিসেম্বর ২০১৬,শুক্রবার

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, বাংলাদেশে এখন ভয়াবহ দুঃসময় বয়ে চলছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পূর্বাপর বাংলাদেশকে বধ্যভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। আজো বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে মানুষ একদলীয় স্বেচ্ছাচারী শাসন, গোষ্ঠী, বর্ণ ও জাতিগত সংঘাতে অবলীলায় খুন ও গুপ্ত হত্যার শিকার হচ্ছে এবং অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ শুক্রবার এক বাণীতে এসব বলেন।

বাণীতে তিনি বলেন, জাতিসংঘ ১৯৫০ সালে ১০ ডিসেম্বরকে ‘মানবাধিকার দিবস’ ঘোষণা করে। সেই থেকে প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর ‘মানবাধিকার দিবস’ পালিত হয়ে আসছে। এই দিনে আমি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মৌলিক মানবিক অধিকারহারা নির্যাতিত মানুষের প্রতি সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছি। যারা বাক, ব্যাক্তি, চিন্তা, প্রার্থনা, মূদ্রণসহ নাগরিক স্বাধীনতার জন্য সোচ্চার হতে গিয়ে ক্ষমতাসীন স্বেচ্ছাচারী গোষ্ঠির নৃশংস নিপীড়নে আত্মদান করেছেন তাদের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা।
বেগম জিয়া বলেন, জাতিসংঘের সার্বজনিন ঘোষণায় বলা হয়েছে বিশ্বের সব জাতির সকল মানুষের মানবাধিকার সংরক্ষনের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। কিন্তু দেশে দেশে নিষ্ঠুর স্বৈরাচারী শাসকেরা জাতিসংঘ কর্তৃক মানবাধিকারের সার্বজনিন ঘোষনার নির্দেশনাগুলোকে তাচ্ছিল্য করে নিজ দেশের জনগণের ওপর চালিয়ে যাচ্ছে বর্বোরোচিত আক্রমণ।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু ক্ষমতাকে চিরস্থায়ীভাবে ধরে রাখার জন্য জনমতকে অগ্রাহ্য করতে হয়, আর সেজন্য এই সকল গণবিরোধী শাসক গোষ্ঠী জনগণের মানবাধিকারের তোয়াক্কা করেনা। সুতরাং দুঃশাসনের অচলায়তন তৈরি করতে গিয়ে তারা প্রতিবাদি জনগণের ওপর নামিয়ে আনে পৈশাচিক উৎপীড়ন। যারা সত্য উচ্চারণ করতে চায় তারা রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, ছাত্র, শ্রমিক, পেশাজীবীসহ নগরিক সমাজের যেই হোকনা কেনো, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয় এবং কারাবাস, শারীরিকভাবে নির্যাতনসহ জখম এবং হত্যারও শিকার হতে হয়।
খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান অবৈধ ক্ষমতাসীন জোট সীমাহীন রক্তপাত ও বেপরোয়া নিপীড়ন নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে জনগণের সকল গণতান্ত্রিক অধিকারকে হরণ করে নিয়েছে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার মানবাধিকারের পরিপূরক। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের মানবাধিকার শূণ্যের নিচে অবস্থান করছে। এদেশে শুধু মাত্র বিরোধীদলের নেতাকর্মীরাই শুধু নয়, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিক, নারী, শিশুসহ কারোই কোনো নিরাপত্তা নাই। এদের অধিকাংশই গুম, গুপ্ত হত্যা এবং বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হচ্ছেন। সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করলেই বিরোধীদলের নেতাকর্মীরা ছাড়াও দল নিরেপক্ষ রাজনৈতিক বিশ্লেষক, টকশো আলোচকদের বিরুদ্ধেও মিথ্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে এবং কাউকে কাউকে কারান্তরীনও করে রাখা হয়েছে।
বিএনচি চেয়ারপারসন বলেন, এ বছরের মানবাধিকার দিবসের শ্লোগান হচ্ছে ‘বছরের ৩৬৫ দিনই মানবাধিকার দিবস’। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে মনে হয় ৩৬৫ দিনই এদেশের মানুষের মানবাধিকার হরণের দিবস। সুতরাং এই নৈরাজ্যকর দুঃশাসনের ছোবল থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের এই মূহুর্তে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। দেশের মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার জন্য জনগণের মিলিত কন্ঠের আওয়াজ তুলে বর্তমান অপশাসনের অবসান ঘটাতে হবে। জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গিকার।
ভিন্ন এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে তা নজীরবিহীন। মানুষের জানমালের ন্যুনতম নিবাপত্তাও আজ চরম হুমকির সম্মুক্ষিণ। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষ পর্যায়ে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার একে অপরের পরিপূরক। যেহেতু এদেশে গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই সেহেতু মানবাধিকার পরিস্থিতি ভয়াবহ সংগীন।
তিনি বলেন, এদেশে বিরোধী দলমত ও বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতাকে দমন করা হচ্ছে রক্তাক্ত পন্থায়। গুম, খুন, জখম, অপহরণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যা এখন এদেশে অপরিহার্য করা হয়েছে রাষ্ট্রশক্তির দাপটে। সামাজিক ক্ষেত্রেও দুর্বৃত্তরা ক্ষমতাশালীদের প্রশয় পেয়ে বেপরোয়া অপকর্মের দ্বারা একের পর এক মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। নারী-শিশু নির্যাতন বাংলাদেশে এখন চরম মাত্রা লাভ করেছে।
মির্জা ফখরুল জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশীসহ বিশ্ববাসীকে অধিকারহারা মানুষ ও মানবজাতির কল্যাণে সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা সুনিশ্চিত করতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সবাই ঐক্যব্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

 

Please follow and like us:

Check Also

আগামী বছর এসএসসি পরীক্ষা হবে ৫ ঘণ্টার

২০২৫ সালে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।