সিনহার পথেই হাঁটছেন হুদা কমিশন?

বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে নিয়ে অস্বস্তির রেশ কাটতে না কাটতেই সরকার নির্বাচন কমিশন নিয়ে নতুন অস্বস্তিতে পড়েছে। সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বলছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিজেকে ‘নিরপেক্ষ’ প্রমাণের জন্য অতিমাত্রায় বিএনপি প্রেমী হয়ে পড়ছেন। কমিশনের ভেতর তাঁর কার্যকলাপ সবই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে নুরুল হুদার নির্বাচন কমিশন সরকারের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি সার্চ কমিটির মাধ্যমে সাবেক আমলা কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে ৫ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়। নির্বাচন কমিশন প্রথম বিতর্ক সৃষ্টি করে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক বলেন। এরপর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের একের পর এক পদক্ষেপ বিএনপিকে তুষ্ট করার জন্যই বলে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করছে। নির্বাচন কমিশন রংপুর সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। ইতিমধ্যেই সেখানে এমন কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে যা পক্ষপাতপূর্ণ বলে অভিযোগ আওয়ামী লীগের নেতাদের।

উদাহরণ হিসেবে বলা হচ্ছে নির্বাচন কমিশন থেকে গত ৭ নভেম্বর এক পরিপত্র জারি করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে ‘নির্বাচন সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে নতুন ভিজিডি কার্ড ইস্যু কার্যক্রমসহ নতুন ধরনের কোনো প্রকার অনুদান/ত্রাণ বিতড়ণ কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে না।’ সিটি নির্বাচন উপলক্ষ্যে সরকারের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধের ঘটনা নজীরবিহীন বলে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ মন্তব্য করেছেন। দূর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাথে সিটি করপোরেশনের কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকার পরও এটা করা হয়েছে স্রেফ বিএনপিকে খুশি করার জন্য বলেই আওয়ামী লীগ মনে করছে। এছাড়াও নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই কমিশন আওয়ামী লীগ বিরোধী অবস্থান নিয়েছে বলে অভিযোগ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট স্থানীয় আওয়ামী লীগের। এর আগেও এই কমিশনের অধীনে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে কমিশন বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে ‘উদারনীতি’ গ্রহণ করেছিল।

শুধু স্থানীয় সরকার নির্বাচন নয়,জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কমিশনের বেশ কিছু পদক্ষেপে আওয়ামী লীগ বিব্রত এবং উদ্বিগ্ন। নির্বাচন কমিশন, নিজেদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক ছাড়া এবং সেনাবাহিনীর মতামত না নিয়েই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। গত সোমবার সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে, নির্বাচন কমিশনার মাহাবুব তালুকদার বলেছেন ‘আগামী নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হবে।’ তিনি আরও বলেছেন ‘আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের চিন্তা নেই।’ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা, নির্বাচন কমিশনের এধরনের সিদ্ধান্ত মূলক বক্তব্যে অবাক হয়েছেন। এখনো নির্বাচনের দিন তারিখই ঠিক হলো না, বিএনপি কোটায় কমিশনার বলে দিলেন সেনাবাহিনীর মোতায়েনের কথা। সেনা মোতায়েনের আগে সেনাবাহিনীর ব্যস্ততা এবং তাদের মতামত গুরুত্বপূর্ণ। আর তফসিল ঘোষণার আগে এরকম মতামত নেওয়ার সুযোগ নেই। তাই অনেকে প্রশ্ন করেছেন, নির্বাচন কমিশন কি বিএনপিকে খুশি করার মিশনে নেমেছে?

বিদায়ী প্রধান বিচারপতি যেমন নিরপেক্ষ হতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছিলেন। ঠিক একই পথে হাঁটছে হুদা কমিশন। এই কমিশন কী করে তা দেখা যাবে রংপুর সিটি নির্বাচনে।

Please follow and like us:

Check Also

২৮শে এপ্রিল খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শনিবারেও ক্লাসের পরিকল্পনা

আগামী ২৮শে এপ্রিল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য সব রকমের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।