তুরস্ক কেন বারবার আক্রান্ত হচ্ছে

ক্রাইমবার্তা আন্তর্জাতিক ডেস্ক :তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে নাইটক্লাবে হামলাকারীকে এখনও ধরতে পারেনি পুলিশ। খ্রিস্টীয় নববর্ষের প্রথম প্রহরে চালানো এই হামলায় অন্তত ৩৯ জন নিহত হয়। ইসলামিক স্টেট এ হামলার দায় স্বীকার করেছে। গত বছরজুড়ে তুরস্কে ইসলামিক স্টেট এবং কুর্দি জঙ্গিদের চালানো অন্তত ছয়টি বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে- যাতে হতাহত হয়েছে দু’শতাধিক লোক। ফলে দেশটির জন্য ২০১৬ ছিল এক ভয়াবহ বছর এবং শেষ দিনে আরও একটি আক্রমণ দেখিয়ে দিল, নিরাপত্তা জোরদার করা সত্ত্বেও দেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতি কতটা নাজুক অবস্থায় আছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে তুরস্ক কেন বারবার এ ধরনের হামলার লক্ষ্য হয়ে উঠছে?

এ প্রসঙ্গে আংকারার সাংবাদিক সরওয়ার আলম বলেন, তুরস্কের পাশের দুটি দেশ ইরাক ও সিরিয়াতে কয়েক বছর ধরে যুদ্ধ চলছে এবং সেখানে যে সন্ত্রাসী গ্রুপ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে গত দেড় /দুই বছর তুরস্কের অবস্থান ছিল প্রত্যক্ষ। এর কারণেই আইএস তুরস্ককে টার্গেট করছে। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে আইএস যে ভিডিওগুলো প্রকাশ করেছে সেখানে স্পষ্টভাবেই তারা হুমকি দিয়েছে যে, পরবর্তী টার্গেট হবে তুরস্ক এবং তুরস্কের যে মূল স্থাপনাগুলো আছে সেগুলোকে তারা টার্গেট করবে।

তুরস্কের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে এটাকেই দেখছেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে একটা সন্ত্রাসী গ্রুপের বিরুদ্ধে আমরা কাজ করছি ব্যাপারটা তেমন না বা একটা গোষ্ঠী যে আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে তেমনটিও না। সরকার বলছে, তারা একসঙ্গে অনেকগুলো সন্ত্রাসী গ্রুপের মোকাবিলা করছে।

এরদোগান সরকারের সঙ্গে ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টি একাত্মতা ঘোষণা করেছে। এর আগে ইস্তাম্বুল স্টেডিয়ামের পাশে যে হামলাটা হলো তারপর পার্লামেন্টের চারটা দলের মধ্যে তিনটা দল সন্ত্রাস মোকাবিলা করার জন্য একত্রে বিবৃতি দিয়েছে।

আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে রাজনীতির মাঠে মতভেদ থাকলেও সন্ত্রাসী মোকাবিলায় তারা এরদোগান সরকারকে সমর্থন করার কথাই বলছে। তবে এখানে একটা বড় বিষয় হলো তিনটি দল সন্ত্রাসবাদবিরোধী বিবৃতি দিলেও কুর্দিদের দল এই বিবৃতির বাইরে রয়েছে।

অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট এরদোগানপন্থী ও এরদোগানবিরোধী গ্রুপ তুরস্কে বেশ সক্রিয়। যে কোনো হামলার পর সরকারপন্থীরা এরদোগানবিরোধীদের দোষারোপ করছে। আবার এরদোগানবিরোধীরা সরকারের বৈষম্যমূলক নীতিকে দায়ী করছে। সরকারপন্থীরা বিশ্বাস করেন, এরদোগান কোনো ভুল করতে পারে না। আবার বিরোধীরা মনে করেন, এরদোগান কোনো কাজই ঠিক করছে না। তবে এরদোগানের বড় সুবিধা হলো তিনি ইসলামী চেতনার বিকাশে উদারনৈতিক অবস্থান এবং অবকাঠামো-পরিবহন ব্যবসার উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মাধ্যমে ইসলামপন্থী ও জাতীয়তাবাদীদের সমর্থন লাভ করছেন।

এরদোগান সরকারের সাফল্যের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও সশস্ত্র কুর্দি গোষ্ঠী পিকেকে। আইএস হামলা করলে কুর্দিসহ বিরোধীরা অভিযোগ করে সরকার তাদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আবার পিকেকে হামলা করলে সরকারপন্থীরা এজন্য বিরোধীদের দায়ী করে। এখন সরকারের সামনে ব্লেম গেম বাদ দিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিবিসি, সিএনএন।

Check Also

গাজায় আরও ৭৭ ফিলিস্তিনি নিহত

ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজা ভূখণ্ডে আরও ৭৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।এতে করে উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।