সংবাদ ডেস্ক রিপোর্টঃ দলের নিবন্ধন বাতিল হলেও সাংগঠনিক তৎপরতা, নির্বাচনী ভাবনা এবং প্রস্তুতি থেকে পিছিয়ে নেই নিবন্ধন বাতিল হওয়া রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর। শত প্রতিবন্ধকতার মাঝেও দলটি বিভিন্ন কৌশলে আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের তালিকা প্রস্তুত করেছে। ইতোমধ্যে বাছাইকৃত প্রার্থীদের নির্বাচনী এলাকায় যাওয়ার নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে জামায়াত। ঈদের পর থেকে কোথাও কোথাও জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনী গণসংযোগেরও খবর পাওয়া যাচ্ছে।
কঠিন রাজনৈতিক বৈরী পরিস্থিতির মুখেও জামায়াতে ইসলামী আগামী নির্বাচনে ৬০ টি আসন নিয়ে লড়তে চায়। এর মধ্যে ৩৫ থেকে ৪০ টি আসনে বিজয় নিশ্চিত করতে চায় তারা। সর্বশেষ ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম সংসদে বিএনপির সঙ্গে জোটগতভাবে ৩৫টি এবং বিএনপি জামায়াতের যৌথ প্রার্থী ছিল ৪ টি আসনে। সে হিসেবে জামায়াত ৩৯টি আসনে নির্বাচন করেছিল। দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। আগামী নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের কাছে প্রায় ৬০টি আসন দাবী করবে জামায়াত। প্রার্থী আদায়ে জোর তদবির চালাবেন দলটির শীর্ষ নেতারা। এ ক্ষেত্রে বিগত উপজেলা নির্বাচনে বিপুল বিজয় জামায়াতকে জোটরে আসন বন্টনে এগিয়ে রাখবে বলে মনে করছে দলটির নেতা কর্মীরা।
গত নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী আসনগুলো ছাড়াও এবার যে সকল নতুন আসন জোটের কাছে দাবী জানাবে জামায়াত তার মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হল- দলের সেক্রেটারী জেনারেল ডা.শফিকুর রহমানের জন্য মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া), ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আমির নুরুল ইসলাম বুলবুলের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩(সদর), শিবিরের সাবেক সভাপতি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের জন্য পটুয়াখালী-২(বাউফল), শিবিরের সাবেক সভাপতি ডা. ফখরুদ্দিন মানিকের জন্য ফেনী-৩(সোনাগাজী-দাগনভুঁইয়া), শিবিরের বর্তমান সভাপতি ইয়াছিন আরাফাতের জন্য কুমিল্লা-১০(নাঙ্গলকোট-সদর দক্ষিণ) আসন।
এ ছাড়াও বগুড়াতে এবার কমপক্ষে ৩ টি আসন জামায়াত জোটের কাছে দাবী করবে। বিগত উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির চাইতে জামায়াতের প্রার্থীরা এখানে বেশি উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিল। এছাড়া ঢাকায় অন্তত ৩ থেকে ৪ টা আসনে জামায়াত প্রার্থী দিবে বলে জানা গেছে।
জামায়াতের দায়িত্বশীল সূত্র বলেছে, তাদের নিদ্দির্ষ্ট প্রার্থীরা গোপনীয়তার সঙ্গে তৃণমূলে কাজ করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন উচ্চ আদালতের রায়ের আলোকে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে। জামায়াত দলীয়ভাবে ও তাদের প্রতীক দাঁড়িপাল্লা নিয়ে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ হারিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন রয়েছে এমন ছোট দলের প্রার্থী হিসাবে জামায়াতের নেতারা ভোট করবেন নাকি সতন্ত্র প্রার্থী হবেন সেই সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত করেনি। তবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার বিষয়ে জামায়াত প্রার্থীরা একমত নন।
নির্বাচন সম্পর্কে জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে দলে। কতগুলো আসনে প্রার্থিতা করা যাবে, সেটি জোটগত সিদ্ধান্ত না হওয়ার আগে বলা যাবে না।’
নির্বাচনে অংশগ্রহণ সম্পর্কে আরেক নায়েবে আমির মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী একটি গণতান্ত্রিক ইসলামী দল। আমরা নির্বাচনে বিশ্বাস করি। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা পরিবর্তনের জন্য বরাবরই আমাদের ভূমিকা ছিল, এখনও আছে, আগামী দিনেও থাকবে।’ ‘নির্বাচনের প্রস্তুতি সব সময়ই আছে’—মন্তব্য করে শামসুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এক সময় ৩০০ আসনে নির্বাচন করেছি। বর্জনকৃত ১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন ছাড়া সব সংসদেই আমাদের প্রতিনিধিত্ব ছিল।’
জামায়াত যে ৬০ টি আসনে লড়তে চায় সে আসনগুলোতে আলোচনায় যারা তারা হলেন-
ঠাকুরগাঁও-২ (বালিয়াডাঙ্গী-হরিপুর): মাওলানা আবদুল হাকিম।
দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল): মাওলানা আবু হানিফ। দিনাজপুর-৪ (খানসামা-চিরিরবন্দর): মাওলানা আফতাব উদ্দিন মোল্লা। দিনাজপুর-৬ (নবাবগঞ্জ-বিরামপুর-হাকিমপুর-ঘোড়াঘাট): আনোয়ারুল ইসলাম।
নীলফামারী-২ (সদর) মুক্তিযোদ্ধা মনিরুজ্জামান মন্টু। নীলফামারী-৩ (জলঢাকা): মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম।
লালমনিরহাট-১ (পাটগ্রাম-হাতিবান্ধা): মাওলানা হাবিবুর রহমান।
রংপুর-৫ (মিঠপুকুর): শাহ মোঃ হাফিজুর রহমান।
কুড়িগ্রাম-১ (ভুরঙ্গমারি-নাগেশ্বরী): আজিজুর রহমান স্বপন। কুড়িগ্রাম-৪ (রৌমারী-রাজীবপুর): নুর আলম মুকুল।
গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ): মাজেদুর রহমান। গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্যাপুর-পলাশবাড়ী): মাওলানা নজরুল ইসলাম। গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্ধগঞ্জ): ডাক্তার আবদুর রহীম।
বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ): অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন। বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম): মাওলানা তায়েব আলী। বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট): আলহাজ্ব দবিবুর রহমান।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর): নুরুল ইসলাম বুলবুল।
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী -তানোর ): অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর): আতাউর রহমান।
সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া): রফিকুল ইসলাম খান। সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি): অধ্যক্ষ আলী আলম।
পাবনা-১ (সাঁথিয়া-বেড়া): ব্যারিষ্টার নাজিব মোমেন। পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া): মাওলানা জহুরুল ইসলাম/আবু তালেব মন্ডল। পাবনা-৫ (সদর): মাওলানা আবদুস সোবহান।
মেহেরপুর-১ (সদর-মুজিব নগর): মাওলানা ছমির উদ্দিন। চুয়াডাঙ্গা-২ (দামুড়হুদা-জীবন নগর): রুহুল আমিন। ঝিনাইদহ-৩ (মহেশপুর-কোটচাঁদপুর): মতিয়ার রহমান।
যশোর-১ (শার্শা): আজিজুর রহমান। যশোর-২ (চৌগাছা-ঝিকরগাছা): মুহাদ্দিস আবু সাইদ মুহাম্মদ সাদাত হোসাইন।
বাগেরহাট-৩ (মংলা-রামপাল):অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ। বাগেরহাট-৪ (মোড়েলগঞ্জ-সরনখোলা): মু. শহীদুল ইসলাম।
খুলনা-৫ (ফুলতলা-ডুমুরিয়া): অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা): মাওলানা আবুল কালাম আযাদ।
সাতক্ষীরা-১ (কলারোয়া-তালা): অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহ। সাতক্ষীরা-২ (সদর): মুহাদ্দিস আবদুল খালেক। সাতক্ষীরা-৩ (আশাশুনি-দেবহাটা): মুফতি রবিউল বাশার। সাতক্ষীরা-৪ (কালিগঞ্জ-শ্যামনগর): গাজী নজরুল ইসলাম।
পিরোজপুর-১ (সদর -নাজিরপুর-স্বরূপকাঠি): শামীম সাঈদী। পিরোজপুর-২ (ভাণ্ডারিয়া -কাউখালী-জিয়ানগর): মাসুদ সাঈদী।
পটুয়াখালী-২ (বাউফল): ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
জামালপুর-২ (ইসলামপুর): ড. সামিউল হক ফারুকী। শেরপুর-১ (সদর): কামারুজ্জামানের ছেলে অথবা অন্য কেউ। ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া): অধ্যাপক জসিম উদ্দিন।
ঢাকা-৫ (ডেমরা-যাত্রাবাড়ী): জামায়াতের কেন্দ্রীয় কোন নেতা। ঢাকা-৮ (মতিঝিল-রমনার একাংশ): মাওলানা লুৎফুর রহমান। ঢাকা-১৫ (কাফরুল-মিরপুর): জামায়াতের কেন্দ্রীয় কোন নেতা।
সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট): মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী। সিলেট-৬ (বিয়ানিবাজার-গোলাপগঞ্জ): মাওলানা হাবিবুর রহমান।
মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ি): মাওলানা আমিনুল ইসলাম। মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া): ডা. শফিকুর রহমান।
কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ): সোলায়মান চৌধুরী। কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট-সদর দক্ষিণ): ইয়াছিন আরাফাত। কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম): ডা.সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের।
ফেনী-৩ (সোনাগাজী-দাগনভুঞা): ডা. ফখরুদ্দিন মানিক।
চট্টগ্রাম-১০ (ডাবলমুরিং): আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী। চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া): মাওলানা শামসুল ইসলাম। চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী): অধ্যক্ষ মাওলানা জহিরুল ইসলাম।
কক্সবাজার-২ (কুতুবদিয়া-মহেশখালী): হামিদুর রহমান আজাদ। কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ): এডভোকেট শাহজালাল চৌধুরী।
তথ্যসুত্র: বাংলাট্রিবিউন, বাংলানিউজ, Rtনিউজ, দৈনিক নয়াদিগন্ত।