ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট: রাজশাহী: এবার রাজশাহীতে স্বাধীনা আকতার শিলা (২২) নামের এক প্রসূতির সিজারের সময় পেটে গজ রেখে সেলাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে সুস্থ না হওয়ায় আরও দুই দফা অস্ত্রোপচারে যেতে হয় তাকে। তবে শেষ দফা অস্ত্রোপচারে অপসারণ করা হয়েছে পেটের গজ।
স্বাধীনা আকতার শিলা জেলার চারঘাট উজেলার নন্দনগাছি ফকিরপাড়া এলাকার হাফিজুর রহমানের স্ত্রী। সংকটাপন্ন অবস্থায় বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের চিকিৎসাধীন ওই গৃহবধূ। তবে জন্মের তিন দিনের মাথায় মারা গেছে নবজাতক।
সম্প্রতি পটুয়াখালীর বাউফলের একটি ক্লিনিকে মাকসুদা বেগম নামে এক প্রসূতির পেটে গজ রেখে সেলাই দেন এক চিকিৎসক। ওই ঘটনায় গত বুধবার ভুল অস্ত্রোপচারের শিকার ওই গৃহবধূকে ৯ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার রামেক হাসপাতালের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের ৪ নম্বর বেডে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের বেডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন ওই গৃহবধূ।
তিনি জানান, তার প্রায় প্রচণ্ড জ্বর থাকছে। কাটা জায়গায় ব্যথা হচ্ছে। কিছু খেলেই বমি হচ্ছে। তার এ অবস্থার জন্য ভুল চিকিৎসাকে দায়ী করেছেন। হামপাতালে শিলার সঙ্গে ছিলেন বাবা ইদ্রিস আলী মোল্লা ও মা পারুল বেগম। মেয়ের এ অবস্থায় দারুণভাবে ভেঙে পড়েছেন তারা।
বাবা ইদ্রিস আলী মোল্লা জানান, বছর ছয় আগে একই গ্রামের বাসিন্দা চাচাতো ভাই আতাহার আলী মোল্লার ছেলে হাফিজুর রহমানের সঙ্গে মেয়ে শিলার বিয়ে দেন। গত ১৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় অস্ত্রোপচারে পৃথিবীর আলো দেখে হাফিজুর-শিলা দম্পতির প্রথম সন্তান। জন্মের তিন দিনের মাথায় মারা গেছে সেই নবজাতক।
দফায় দফায় অস্ত্রোপচারে এখন সংকটাপন্ন অবস্থায় মা। এ পর্যন্ত তার চিকিৎসায় সাড়ে তিন লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। ওষুধপত্র কিনতে জমি বিক্রি ছাড়া আর কোনো পথ নেই। তিনি এ ঘটনায় দায়ি চিকিৎসকের শাস্তি দাবি করেন।
ইদ্রিস আলী আরো জানান, ১৭ অক্টোবর প্রসববেদনা নিয়ে শিলাকে ভর্তি করানো হয় নগরীর নওদাপাড়ার ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ওইদিন সন্ধ্যায় সিজার করার সিদ্ধান্ত জানান আবাসিক সার্জন ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সুলতানা নাজনীন রিতা। টাকা জমা দেয়ার পর সেদিনই সিজার করে ছেলে সন্তান প্রসব করান চিকিৎসক।
তবে তিন দিনের মাথায় ২০ অক্টোবর দুপুরে হাসপাতালেই মৃত্যু হয় নবজাতকের। হৃদযন্ত্রের সমস্যা থাকায় নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে বলে ওই সময় জানান চিকিৎসক। পরে ওইদিন সন্ধ্যার আগেই শিলাকে ছাড়পত্র দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ওইদিনই কিউর নার্সিং হোমে গিয়ে সেখানকার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ দেখে শিলাকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করান স্বজনরা। রামেক হাসপাতালের স্ত্রীরোগ কনসালট্যান্ট ডা. মনোয়ারা বেগমের পরামর্শে নগরীর লক্ষ্মীপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে আরেক বার আলট্রাসনোগ্রাম করানো হয়। ওই রিপোর্টে প্রসূতির ডিম্বাশয়ে সংক্রামণের কথা জানানো হয়।
৩০ অক্টোবর সকালে রামেক হাসপাতালে দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিলার ডিম্বাশয় থেকে পুঁজ অপসারণ করেন ডা. মনোয়ারা বেগম। এরপর ৭ নভেম্বর রোগী সুস্থ বলে ছাড়পত্র দেন চিকিৎসক।
শিলার স্বামী হাফিজুর রহমানের ভাষ্য, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র মেনে ওষুধ চলছিল। তারপরও দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচার শেষে বাড়িতে ফিরে আবারও প্রচণ্ড জ্বরসহ তলপেটে তীব্র ব্যথা অনুভব শুরু হয় শিলার। এছাড়া প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে পুঁজ ও রক্ত যাওয়া শুরু হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে ২৮ নভেম্বর শিলাকে ফের রামেক হাসপাতালে নেয়া হয়। রামেকের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাজমুন নাহার তারা আবারও আলট্রাসনোগ্রামের পরামর্শ দেন।
এরপর নগরীর মেডিপ্যাথ হাসপাতালে দুইবার ও ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে আরেক বার আলট্রাসনোগ্রাম করানো হয়। প্রত্যেক রিপোর্টেই রোগীর ডিম্বাশয়ে গজ এবং সংক্রামণের কথা জানানো হয়েছে।
সর্বশেষ গত ৩ ডিসেম্বর রামেক হাসপাতালে তৃতীয় দফা অস্ত্রোপচার হয় শিলার। এবার ডা. নাজমুন নাহার তারা অস্ত্রোপচার করে রয়ে যাওয়া গজ ও পুঁজ অপসারণ করেন। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে উন্নতি হতে শুরু করে শিলার শারীরিক অবস্থা।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সুলতানা নাজনীন রিতা বিষয়টি এড়িয়ে যান। এ নিয়ে যোগাযোগ করা হলে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
রামেক হাসপাতালে গৃহবধূ শিলার চিকিৎসার সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে সর্বশেষ অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক নাজমুন নাহার তারা বলেন, স্বাধীনার পেটে গজ ব্যান্ডেজ ছিল। সেটাই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়েছে। তবে এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
১৫ পিসেম্বর ২০১৭ শুক্রুবার:ক্রাইমর্বাতাডটকম/প্রতিনিধি/আসাবি