সাতক্ষীরায় বহু অপকর্মের হোতা কামরুল ইসলামকে খুজে পাচ্ছে না পুলিশ।

ক্রাইমবার্তা ডেস্করির্পোটঃ

সাতক্ষীরায় বহু অপকর্মের হোতা কামরুল ইসলামকে খুজে পাচ্ছে না পুলিশ। গোয়েন্দা সংস্থা তাকে হন্যে হয়ে খুজে বেড়াচ্ছে। বহু নারীর জীবন নষ্টকারী ও বহু অপকর্মের হোতা কামরুল ইসলাম নিজের অপরাধকে আড়াল করতে কখনো কখনো নিজের নাম, জন্মদাতা পিতার নাম ও ঠিকানা পরিবর্তন করায় গোয়েন্দা সংস্থা তার নাগাল পাচ্ছে না। তবে গোয়েন্দা সংস্থার হাতে তার অপকর্মের খতিয়ান রয়েছে বলে জানা গেছে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ জোড়দিয়া গ্রামের আলাউদ্দীন ও ছফুরা খাতুনের ছেলে কামরুল ইসলাম। ভোটার তালিকায় তার নং ১৪১৫। জাতীয় পরিচয়পত্র নং ৮৭০৬৯৭০০০৩৮৯। কামরুল ইসলামের জন্ম তারিখ ৬সেপ্টেম্বর ১৯৭৮। বহু নারীর সর্বনাশকারী ও প্রতারক কামরুল ইসলাম কখনো বকুল গাজী, কখনো বকুল চৌধুরী নাম ধারণ করে। নিজের জন্মদাতা পিতার নাম পাল্টে কখনো আলাউদ্দীনের স্থলে লোকমান গাজী, কখনো জিয়াদ গাজী আবার কখনো সুলতান গাজী লিখে প্রতারণা করেছে। হাতিয়ে নিয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা। নামে বেনামে পুলিশের নাম করে সাধারণ মানুষকে মামলার ভয় দেখিয়ে আদায় করেছে লক্ষ লক্ষ টাকা। মাদক ব্যবসা করে গড়ে তুলেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট।
এ পর্যন্ত ৮বার বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে কামরুল ওরফে বকুল। অপরাধ জগতের ভয়ঙ্কর প্রতারক কামরুল ওরফে বকুলের বিরুদ্ধে পাহাড়সম অভিযোগ জমা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে।
সূত্রমতে, ২০০০সালে যশোর কাজী অফিসের আব্দুর রউফ মাস্টারের দপ্তরে বসে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার সরাফপুর গ্রামের শেখ মুনসুর রহমানের মেয়ে মাগফুরা খাতুনকে বিয়ে করে কামরুল ইসলাম। তার মোস্তাকিম (১৬), মোছাদ্দেক (১৩) ও তফুরা খাতুন (১০) নামে তিনটি সন্তান আছে। মাগফুরার পিতা মুনসুর রহমানকে মিথ্যা ও হয়রানি মামলায় জেলে পাঠিয়ে মাগফুরাকে যশোরে নিয়ে বিয়ে করে কামরুল।
এরপর আশাশুনির সরাফপুর গ্রামের কেরামত আলীর মেয়ে আলেয়া খাতুনকে বিয়ে করে কামরুল ইসলাম। সেখানে রিমা নামে তার একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। রিমা স্থানীয় হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী।
এরপর ২০১২ সালে আশাশুনি উপজেলার শ্বেতপুর গ্রামের আবু বক্করের মেয়ে এক সন্তানের জননী ময়না খাতুনকে বিয়ে করে কামরুল। ময়নার আগের ঘরের মেয়েকেও সর্বনাশ করতে ছাড়েনি এই লম্পট কামরুল।
এলাকাবাসি জানায়, কামরুল ইসলাম তার পিতা ও ভগ্নিপতিকেও ছাড় দেয়নি। ফেন্সডিল দিয়ে পিতা ও ভগ্নিপতিকে তুলে দেয় পুলিশের হাতে। বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রামবাসির সুপারিশে ও পুলিশের বিচক্ষণতায় কামরুলের পিতা আলাউদ্দীন ছাড়া পেলেও ভগ্নিপতিকে খেতে হয় জেলের ভাত।
এরপর কামরুলের মুখোশ খুলে গেলে স্বেচ্ছায় সে গ্রামছাড়া হয়। বিভিন্ন স্থানে একেক সময় একেক পরিচয় দিয়ে বিয়ের পর বিয়ে করতে থাকে। জোড়দিয়া থেকে চলে এসে নাম ধারণ করে বকুল গাজী ওরফে বকুল চৌধুরী। নিজের পিতার নাম পাল্টে রাখে কখনো জিয়াদ গাজী, কখনো লোকমান গাজী আবার কখনো সুলতান গাজী। সদর উপজেলার বালিথা, এল্লারচর ও সুলতানপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের নাম হয় তার ঠিকানা।
এভাবে বকুল গাজী নাম ধারণ করে ২০১৬ সালের ৯ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলার গয়েশপুর গ্রামের সামছুদ্দিন গাজীর মেয়ে খালেদা খাতুনকে এফিডেভিডের মাধ্যমে বিয়ে করে কামরুল। পরে খালেদা খাতুনকে নিয়ে কামরুল ইসলাম ইটেরভাটার লেবার সর্দার সেজে চলে যায় আমিন বাজারের সাভারের তারা ব্রিক্সস্।ে সেখানে তারা ব্রিকস্ এর মালিককে শ্রমিক দেয়ার কথা বলে প্রায় লক্ষ টাকা ও খালেদার বিয়ের কাগজপত্র নিয়ে খালেদাকে রেখে পালিয়ে আসে কামরুল। পরে ১-৬-২০১৬ তারিখে খালেদার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে এড. এটিএম আকবর আলীর দপ্তর থেকে এফিডেফিড মূলে তালাক দেয় খালেদাকে। এরপর ২০১৮সালের ৭জুন পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার মাওলানা আব্দুর রাজ্জাকের দপ্তরে বসে আবারো খালেদা খাতুনকে বিয়ে করে।
এরআগে কামরুল ইসলাম নিজেকে বকুল গাজী এবং পিতা আলাউদ্দীনের স্থলে লোকমান গাজী সাং বালিথা পরিচয় দিয়ে কালিগঞ্জ উপজেলার বন্দকাটি গ্রামের জবেদ আলীর মেয়ে রাশিদা খাতুনকে বিয়ে করে।
এছাড়া পুরাতন সাতক্ষীরা দক্ষিণপাড়া এলাকায় কামরুল ওরফে বকুল ও তার স্ত্রী পরিচয়দানকারী চাঁদনি খাতুন ২০১৮সালের ২৯জুলাই আনিছুর রহমানের বাড়ি থেকে গরু চুরি করে পালানোর সময় এলাকাবাসি ধরে গণধোলাই দেয়।
এদিকে তথ্যানুসন্ধানে এলাকাবাসি আরো জানায়, গত ২১-০১-২০১৮ তারিখে একটি মাছের ঘেরের লিজডিড করে কামরুল। সেখানে নিজের নাম কামরুল ইসলাম, পিতা- আলাউদ্দীনের স্থলে লিখেছে সুলতান গাজী। ঠিকানা লিখেছে সুলতানপুর।
কামরুল ইসলাম ওরফে বকুলের প্রতারণা এখানেই শেষ নয়,পুরাতন সাতক্ষীরার মরহুম গোলাম এজদানির ছেলে ওলিউল্যাহকে পুলিশ ধরলে তাকে ছাড়ানোর নাম করে কামরুল ওরফে বকুল ৪৭হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ করেন ওই পরিবারের সদস্যরা।
২০১৬ সালের ২নভেম্বর বকুল গাজীর নামে ফেন্সিডিল পাচারের মামলা হয়। মামলা নং ০২/৫৮২।
এভাবেই কামরুল ইসলাম ওরফে বকুল একের পর এক বিয়ে করে অসংখ্য নারীর জীবন নষ্ট করেছে। মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আদায় করছে লক্ষ লক্ষ টাকা। মাদক পাচার করে হয়েছে কোটিপতি। তার প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বশান্ত হয়েছে অগণিত পরিবার। তার জন্ম দেয়া সন্তানেরাও আজ পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
অবিলম্বে এই কামরুল ওরফে বকুলকে গ্রেপ্তারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি এলাকাবাসির।

Please follow and like us:

Check Also

আশাশুনিতে ইসতেসকার নামাজ আদায়

আশাশুনি প্রতিনিধি।। আশাশুনিতে তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি পেতে আল্লাহর রহমতের বৃষ্টি প্রার্থনার নামাজ ইসতেসকার নামাজ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।