মিডল ইস্ট মনিটর : শুক্রবার গাজা সীমান্তে অন্তত ৭,০০০ হাজার ফিলিস্তিনি কর্তৃক ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। অর্ধেকের বেশী সংখ্যক বিক্ষোভকারী গাজা সীমান্তবর্তী বিভিন্ন বন্দি শিবিরের আশেপাশে অবস্থান নিয়েছেন এবং অন্যরা সীমান্ত কাঁটাতারের পাশে ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর মুখোমুখি অবস্থান নেন।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের দেয়া সংবাদ অনুযায়ী জানা যাচ্ছে যে, বেশীরভাগ বিক্ষোভকারী সীমান্ত কাঁটাতারের ৭০০ মিটারের মধ্যে অবস্থান করছেন এমনকি গাজার বেশ কয়েক ডজন তরুণ সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা চালিয়েছেন।
গাজার বিভিন্ন বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, মিশরের একজন নিরাপত্তা কর্মী পশ্চিম বুরিজ এর উদ্বাস্তু শিবিরের নিকটে বিক্ষোভকারীদের গতিবিধি লক্ষ্য করার জন্য সেখানে নিযুক্ত হয়েছেন।
এদিকে বিক্ষোভ চলাকালে ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্টের অন্তত ৮৭ জন সদস্য আহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ৩২ জন আহত ব্যক্তিকে ইতোমধ্যেই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে যাদের মধ্যে ৭ জন সরাসরি গুলির আঘাতে আহত হয়েছেন।
হামাসের সিনিয়র কর্মকর্তা খালিল আল-হয়ায় বলেন, ‘আমরা এখন সফলতার দ্বার প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছি। ‘মার্চ অব রিটার্ন’ এ বিক্ষোভে অংশ নেয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ এবং এমন একটি শুভ সংবাদের আশা করছি যা সকলের জন্যই ইতিবাচক প্রভাব বয়ে আনবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘যদি গাজার উপর থেকে অবরোধ তুলে দেয়া হয় তবে আমরা আমাদের সংগ্রামের কৌশল পরিবর্তন করবো।’
শুক্রবার একজন ইসরাইলি কর্মকর্তা বলেছেন, ‘গাজা উপত্যকা নিয়ে একটি সমাধানে পৌঁছানো অবশ্যই দরকার। আমরা হামাস কর্মকর্তাদের নিকটে কাতার থেকে আসা জ্বালানি তেল এবং নগদ অর্থ ঠেকিয়ে দিয়ে সেখানকার মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন করেছি।’
এদিকে বৃহস্পতিবার হামাসের একজন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থাকে জানিয়েছেন, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার সীমান্তবর্তী স্থানগুলোতে সাংঘর্ষিক বিক্ষোভ অনুষ্ঠান না করার জন্য হামাস নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সাথে আকাশে আগুনের বোমা নিক্ষেপ করা থেকেও হামাস বিরত থাকবে।
শুক্রবারে অনুষ্ঠিত হওয়া বিক্ষোভ সম্পর্কে একটি সংবাদ সম্মেলনে- হামাস, ইসলামিক জিহাদ, পপুলার ফ্রন্টসহ বিক্ষোভে অংশ নেয়া অন্যান্য দলের সদস্যগণ চলমান পরিস্থিতি নিয়ে মিশরের উদ্যোগের আলোচনাকে সফল করার জন্য বিক্ষোভের তীব্রতা কমিয়ে আনার ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন।
তবে এই সিদ্ধান্ত ইসরাইল কর্তৃপক্ষের গাজা উপকূলে ফিলিস্তিনিদের জন্য মাছ ধরার অনুমতি দেয়া এবং কাতার থেকে হামাস সদস্যদের জন্য বেতন বাতা কোনো ধরনের বাধা বিপত্তি ছাড়াই আসতে দেয়ার উপরে নির্ভর করছে।
অক্টোবরে শিশুসহ ৩২ ফিলিস্তিনিকে হত্যা ইসরাইলের : অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা ও পশ্চিমতীরে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে ৬ শিশুসহ অন্তত ৩২ জন ফিলিস্তিনি নাগরিক। আর আহত হয়েছেন ২ হাজারেরও বেশি। মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদভিত্তিক ব্রিটিশ পর্যবেক্ষণ ওয়েবসাইটের প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়।
১৯৭৬ সালের ৩০ মার্চ ইসরাইলের দখলদারিত্ব থেকে নিজেদের মাতৃভূমির দখল ঠেকাতে বিক্ষোভে নামলে ইসরায়েলি সেনাদের হাতে নিহত হন ৬ ফিলিস্তিনি। পরের বছর থেকেই ‘গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন’ নামে ধারাবাহিক কর্মসূচি শুরু করে ফিলিস্তিনিরা। গত ৩১তম শুক্রবারে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে অন্তত ৫ জন নিহত হয়েছেন। এনিয়ে এবছরে এই কর্মসূচিতে নিহতের সংখ্যা দুই শতাধিক ছাড়িয়েছে।
ফিলিস্তিনি লিবারেশন অর্গানাইজেশন পিএলও সংশ্লিষ্ট আব্দুল্লাহ আল হোরানি রিসার্চ সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত পরিসংখ্যানে বলাহয়, গত মাসে নিহতদের মধ্যে ইসরায়েলি হেফাজতে মৃত্যুবরণ করা উইসাম শালাদেহও রয়েছেন।এখনও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছে দুইটি লাশ রয়েছে। ইসরাইলের দাবি, ছুরিকাঘাতের চেষ্টা করার প্রতিক্রিয়ায় তাদের হত্যা করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়,অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ১৯১৬ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। আর পশ্চিমতীর ও পূর্ব জেরুসালেমে আহত হয়েছেন ২৫০ জন। এছাড়া অক্টোবরে পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা ও পূর্ব জেরুজালেম থেকে ৫২৫ জন ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে ইসরায়েল।
ইসরাইলের অন্যান্য অপরাধের মধ্যে বসতি স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, অক্টোবরে ৫৬টি ফিলিস্তিনি ভবন ভেঙে ফেলে ইসরায়েল। এর মধ্যে আল তাহাদি স্কুলও ছিলো। আরও কয়েক হাজার বসতি স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।