বিশ্ব শিক্ষক দিবস আজ :টাইমস্কেল, সিলেকশান গ্রেড প্রাপ্তি কারো দয়া নয়

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস। এবারে বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শিক্ষক : সংকটে নেতৃত্ব, নতুন করে ভবিষ্যতের ভাবনা’। আমাদের দেশের প্রক্ষাপটে শিক্ষক সমাজকে দেশ  ও জাতির উন্নয়নে নেতৃত্ব দেয়াসহ কল্পনা করা কতটুকু বাস্তব বিষয়টি নিয়ে আলোপাত করছি। বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজ স্বাধীনতা দীর্ঘসময়ের পরও মর্যাদা, সম্মানজনক বেতনস্কেল থেকে বঞ্চিত। ক্ষুধার রাজ্যে বসবাস করে অভাবে মাঝে বিচরণ করে নেতৃত্ব নেয়া ও দেশ জাতিকে নিয়ে ভাবনা অনেকটা স্বপ্নের মতো। বর্তমান জননেত্রী প্রধাননেন্ত্রী শেখ হাসিনার শিক্ষাবান্ধব সরকার শিক্ষায় বিশাল সাফল্যের পরও সংশ্লিষ্টদের সমস্যা সমাধানে গিট্টু লাগিয়ে দেয়ায় অর্জনগুলো ম্লান হতে চলছে। বিট্রিশ পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সরকারে উষালগ্নে গ্রামের তৃণমূলের মানুষ শিক্ষকদের কাছে বিয়ে সাদী, পারিবারিক যেকোন জটিল সমস্যা নিয়ে সমাধানে শিক্ষকদের নেতৃত্ব গ্রহণ করতো।

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সরকারের আমেল ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে প্রাথমিক শিক্ষাকে গ্রাম সরকারের হাতে ন্যস্ত করার আইন করায় জনগণের মাঝে শিক্ষক নেতৃত্ব বিপন্ন হয়। রাষ্ট্রপতি এরশাদ আমলে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি, বরখাস্ত সব কিছু উপজেলা পরিষদে হাতে ন্যস্ত হয়। সে সময় ব্যাপক দুর্নীতি ও কার্যক্রমের ফলে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতিসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা উপজেলা থেকে জেলা ও কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়। ১৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষকদের দেশ ও জাতির নেতৃত্ব ও কল্পনা বিদ্যমান ছিল।

প্রাথমিকে নেতৃত্ব দেয়ার মানসিকতা থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষকেরা হুজুর হুজুর করতে করতে অভ্যস্ত।
আর কর্মকর্তারা গুণগান শুনতে, শুনতে পুলকিত। য্যেক্তিক সমস্যা সমাধান না করে কৌশলে গিট্টু লাগিয়ে দেয়াই যেন প্রাথমিকের সংশ্লিষ্টদের কাজ।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের উচ্চ ধাপের আদেশের উদাহরণ উপস্থাপন করে, অর্থ মন্ত্রণালয় ১৩তম গ্রেডের প্রজ্ঞাপন জারি করা সম্ভব হয়েছে। উচ্চ ধাপের আদেশ জারি হলেও সমস্যা আরও প্রকট করা হয়। শুধুমাত্র বিএ ২য় বিভাগরা (২০১৯ নিয়োগবিধি মোতাবেক) ১৩ তম গ্রেড পাবেন। এ আদেশ জারির আগে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকেরা নিয়োগ বিধি মোতাবেক উচ্চ শিক্ষিতদের সাথে লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষা দিয়ে কম শিক্ষাগত যোগত্যার শিক্ষকরা শিক্ষকতার পেশায় এসে যোগ্যতা অর্জন করেছেন। এখানে কম যোগ্যতাধারীদের বঞ্চিত করা কতটুকু যৌক্তিক? নতুন নিয়োগদের ক্ষেত্রে এ আদেশ কার্যকর করার বিষয়ে কোন প্রশ্ন আসেনা।

সহকারী শিক্ষকদের ১৩ তম গ্রেড একদিকে শুভঙ্করের ফাঁকি ও অভিনব বৈষম্য সৃষ্টি। প্রাথমিক শিক্ষকদের অনেক আশা ভরসা এ ১৩তম গ্রেড। কেউ কেউ বলে আন্দোলনের কিঞ্চিত ফসল। অনেকে বলে সংশ্লিষ্টদের সাথে ভালবাসার ফসল। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব অবসরে যাওয়ার আগে এ রহস্যময় ভালবাসা বোধগম্য হচ্ছেনা। প্রধান শিক্ষকেরা উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মতে ১০ম গ্রেড পাওয়ার কথা। সহকারী প্রধান শিক্ষকদের পদে দায়িত্বভাতা দিয়ে সহকারী শিক্ষক ১১তম গ্রেড দিলে তাদের মাঝে ক্ষোভ অসন্তোষ বিরাজ করতোনা। সকল সরকারি সিনিয়ররা কর্মচারী জুনিয়র চেয়ে বেতন বেশি পায়। আর শিক্ষকের অনেক ক্ষেত্রে এর উল্টা। সমতা নির্ধারণের প্রক্রিয়া গ্রহণ করার মানসিকতা দায়িত্বপ্রাপ্তদের মাঝে এখনো আসেনি।

শিক্ষকেরা নিয়োগ পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। এখানে ডিগ্রি দেখা সমীচিন নয়। বিপুল সংখ্যক জিপি-৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পাস নম্বর পায়না। প্রাথমিকে শিক্ষক পদে যোগ্য শিক্ষক আসুক। এ প্রত্যাশা আগামী প্রজন্মের জন্য সকলে সাথে আমারও।

মাননীয় গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন ও সিনিয়র সচিব মহোদয় একাধিকবার বলে আসছেন, প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতি হবে। অথচ পুরাতন নিয়োগবিধি মোতাবেক ৬৫ ভাগ শিক্ষক পদোন্নতি পেতে যাচ্ছে। সারাদেশে বিপুল সংখ্যক সহকারী শিক্ষককে চলতি দায়িত্বে প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগ করা হয়। তাদের বেশির ভাগই ২-১ বছরের মধ্যে অবসরে যাবে। শিক্ষকতার যোগ্যতা পুরাতন নিয়োগ বিধি মোতাবেক থাকলেও অভিজ্ঞতার যোগ্যতার ঝুড়ি অনেক ভারি। শেষ বয়সে প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্বে ৩-৪ বছর কাজ করার পর প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি না দেয়া তাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণের মতো হবে।
অভিজ্ঞতাকে যোগ্যতার মাপকাঠি নিয়ে ভাবতে হবে। বিধি মোতাবেক টাইমস্কেল, সিলেকশান গ্রেড প্রাপ্তি কারো দয়া নয়। প্রাথমিকে এ প্রাপ্তির বিড়ম্বনা নিয়ে ভাবতে কষ্ট হয়। জাতীয়করণকৃত শিক্ষকেরা বিধি বর্হিভূতভাবে টাইমস্কেল, সিনিয়রটি জোর করে নেয়নি। একশ্রেণির শিক্ষক নেতা নামে দালাল চাঁদাবাজী করে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছে। কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা অনৈতিক ভাবে তাদের এ সুবিধা দিয়েছেন। আসলে প্রকৃত দোষী চাঁদাবাজ নেতারা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এখন সবদোষ যেন নন্দঘোষদের।

আমাদের প্রাথমিক শিক্ষায় চাপাবাজদের মহাঅবস্থান। নেতা নামদারীরা শুধু চাপাবাজীর মাধ্যমে আগমন করে প্রস্থান করে থাকে। প্রাথমিক শিক্ষার বাস্তব স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতা নিয়ে ভাবতে কষ্ট হয়। ছোট শিশুর ওপর বইয়ের বোঝা, প্রাথমিক শিক্ষার কর্মঘন্টার বৈষম্য, যেখানে বাজেটের সাথে এ দু’টি বিষয় যুক্ত নয়। তাও দূর করতে বছরের পর বছর পার করে সংশ্লিষ্টরা ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে প্রস্থান করে। বর্তমান জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিক্ষাবান্ধব সরকার শিক্ষার উন্নয়নে বিশাল কর্মযজ্ঞ করে যাচ্ছেন। এ গিট্টু লাগানোর কর্মকর্তাদের জন্য সফলতাগুলো ম্লান হচ্ছে। আমাদের বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় রাজধানীতে অবস্থিত। কাজের ধীরগতি দেখে মনে হচ্ছে, সংশ্লিষ্টরা পাকিস্তানী মানসিকতার মাঝে এখানো আটকে আছে।

করোনার মাঝে বিশ্ব শিক্ষক দিবস যথাযথভাবে পালন না হলেও দিবসটিকে একবারে মুছে ফেলার সুযোগ নেই। শিক্ষার তথা শিক্ষকদের প্রতি সকলের ভালবাসা জাগ্রত হোক। এ প্রত্যাশা প্রতিবারের মতো এবারও করছি। মর্যাদাসহ শিক্ষকদের সকল দুঃখ কষ্ট দূর হোক। শিক্ষকরা নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা ও দেশকে নিয়ে তাদের ভাবনা আসুক এ প্রতীক্ষায়।

লেখক : মো. সিদ্দিকুর রহমান, সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।