ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ সাতক্ষীরাঃ অযত্ন,অবহেলা, দাম না পাওয়া ও সংরক্ষণের অভাবে সাতক্ষীরায় কয়েক লক্ষ টাকার পুষ্টিকর ও ওষধি হেলেঞ্চা শাক নষ্ট হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় হেলেঞ্চা শাক গরু ছাগলের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। শীতের শুরুতেই জেলার বিলে,খালে, ডোবাতে, আনাচে-কানাছে হেলেঞ্চা শাকের দেখা মিলছে। সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছা,কামালনগরসহ কয়েকটি বিল ও জলাবদ্ধতা ডোবাতে হেলেঞ্চের সবুজের সমাহর। যত দূর চোখ যায়, শুধু সবুজ আর সবুজ। চোখ জুডিয়ে যাবে দেখতে দেখতে। তাই বাণিজ্যিক ভাবে জেলাতে হেলেঞ্চা শাক চাষের দাবী জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
বৃহষ্পতিবার সকালে সাতক্ষীরা শহরের ৭ নং ওয়ার্ডের বনলতা ইাউজিং প্রকল্প সংলগ্ন ইটাগাছা বিলে অর্ধশত বয়সী এক মহিলাকে হেলেঞ্চা শাক কাটতে দেখা যায়। তার নাম আমিরণ। পাশেই তার বাড়ি। হাটু কাদাঁ-পানিতে নেমে আমিরণ হেলেঞ্চা শাক কাঁটছে। এর পর বস্তা ভরছে। জানতে চাইলে তিনি জানান, গরু ছাগলের খাদ্য হিসেবে ঘাসের পারিবর্তে হেলেঞ্চা শাক ব্যবহার করছি।
স্থানীয় ঘটক ইয়াছিন জানান, বাজারে হেলেঞ্চা শাকে দাম কম। এক জন লোকের দৈনিক মজুরি ৪শ থেকে ৫শ টাকা। সারাদিন হেলেঞ্চা শাক কেটে সেই টাকা পাওয়া যাবে না। তাই হেলেঞ্চা শাক কেটে মানুষ গরু-ছাগলের খাওয়াচ্ছে। স্থানীয়রা জানিয়েছে বাজারে সবজির দাম বেশি থাকার পারও হেলেঞ্চা শাক নষ্ট হচ্ছে।
পুষ্টি বিজ্ঞানিরা বলছে, হেলেঞ্চা এক প্রকার জলজ শাক। পানির ওপরে এরা লতিয়ে চলে। দেশের খালবিলে, নদনদী, পুকুরে সর্বত্র জন্মে।গাঁওগেরামের অনেকে পুকুরে হেলেঞ্চা ও কলমি লতা জন্মাতে দেয়। কারণ যে পুকুরে হেলেঞ্চা বা কলমি লতা থাকে, সে পুকুরের পানি সর্বদা পরিস্কার বা স্বচ্ছ থাকে। তারপরও হেলেঞ্চার লতায় এক প্রকার আঁশ জন্মে, এগুলো মাছের প্রিয় খাদ্য। এই হেলেঞ্চার পাতা শাক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শাক স্বাদে তিক্ত এবং কষায়। তবে হেলেঞ্চা শাক উপকারী। শীতের প্রথমেই ফুল ফোটে, ফুলের রং সাদা। পাতা ১ থেকে ৩ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়।
পুষিষ্ট বিশেজ্ঞারা বলছেন, খাস পাচড়া ও চুলকানী শীত এবং বর্ষাকালে মানুষের খুবই কষ্টদয়ে । এর থেকে মুক্ত হেলেঞ্চা শাকের ৩/৪ চামচ রস সকালে একবার করে খেলে উপকার পাওয়া যাবে। তবে কয়েক দিন নিয়মিত খাওয়া দরকার।
ঘামাচি ও ফুসকুড়ি : গায়ে কাঁটা বা ঘামাচি, প্রথমটি শীতে এবং দ্বিতীয়টি গরমকালে মানুষের জন্য খুবই কষ্টদায়ক হয়ে দাঁড়ায়। এ উভয়বিধ রোগের জন্য হেলেঞ্চা পাতা সামান্য পানি দিয়ে বেটে তার রস সারা শরীরে মাখলে খুব শিগ্রই উপকার পাওয়া যায়।
বসন্ত রোগের আক্রমণে : শরীরে দু’একটি গুটি দেখা দেয়া মাত্রই অর্থাৎ রোগের প্রথম অবস্থায় শ্বেতচন্দন গুঁড়ো দেড় থেকে দুই গ্রাম এবং হেলেঞ্চা শাকের রস আধা কাপ, এ দু’টি ভালভাবে মিশিয়ে খেলে শিগ্রই গুটি বের হয়ে যায়।
যকৃৎ দুর্বল হলে : যকৃৎ অর্থাৎ লিভার দুর্বল হলে শরীরে নানা ধরনের রোগ দেয়া দেয়। ১০০ গ্রাম হেলেঞ্চা শাক ছোট ছোট করে কেটে, ১৫০ মিলিলিটার পানিতে পরিমাণ মতো লবণ মিশিয়ে সিদ্ধ করতে হবে। পানি ফুটে এক কাপ পরিমাণ হলে পাত্রটি আচ থেকে নামিয়ে ফেলতে হবে। ঠান্ডা হলে ভাত খাবার আগে ৪/৬ ফোঁটা সরষে তেল মিশিয়ে খেলে যকৃৎ সবল হয়। অবস্থা বুঝে ২ থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত নিয়মিত খাওয়া দরকার।
পিত্ত বাড়লে : হেলেঞ্চার পাতা বেটে তার ৩০ মিলিলিটার রস এবং গরু কিংবা ছাগলের দুধ (অবশ্যই গরম করে এবং ঠান্ডা অবস্থায়) ৫০মিলিলিটার এ দু’টি একসঙ্গে মিশিয়ে রোজ খেলে শরীরে পিত্তের পরিমাণ স্বাভাবিক হবে। গনোরিয়া রোগের জন্য একই পদ্ধতি এবং পরিমাণে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
কোমরের যন্ত্রণা : কোমরের ঠিক নীচে ব্যথা বা যন্ত্রণা, পায়ের পেশীতে রাতের দিকে টান ধরে, এসব ক্ষেত্রে ৩ চামচ হেলেঞ্চার শাকের রস, হাল্কা গরম করে সকালের দিকে খালিপেটে খেলে ভাল হয়ে যায়। নিয়মিত বেশ কিছুদিন খেলে আরও ভাল।
রক্ত দূষিত হলে : ২০ মিলিলিটার হেলেঞ্চার শাকের পাতা ও ডাঁটা বাটা রস, এক চামচ চিনির সঙ্গে মিশিয়ে সকালে একবার করে খেলে দূষিত রক্ত পরিষ্কার হয়ে যায়। আবার অনেকের জিহবায় মোটা সাদা প্রলেপ পড়ে। ফলে অরুচি হয়। তারা কয়েক দিন হেলেঞ্চার রস গরম করে খান, অরুচি চলে যাবে। যারা নিম্ন রক্তচাপে ভূগছেন, তারা হেলেঞ্চার পাতার রস দুই চামচ, কলমি পাতার রস দুই চামচ, দুই চামচ মধুর সাথে মিশিয়ে এক মাস রোজ সকালে খান, নিম্ন রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
আবু সাইদ বিশ্বাস:সাতক্ষীরা: ২৭/২/২০২০–