সব্যসাচী বিশ্বাস (অভয়নগর) যশোর:
জন্মাষ্টমী হল ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মতিথি। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে রোহিণী লক্ষত্র যোগে কৃষ্ণ মধুরায় কংসের কারাগারে মাতা দেবকীর অষ্টম সন্তান রূপে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর এই জন্মদিনকে জন্মাষ্টমী বলা হয়।
এখন জেনে নেওয়া যাক বর্তমান বছরটি শ্রীশ্রীকৃষ্ণের কত তম জন্মাষ্টমী।
১৪২৮ বাংলার (২০২১সাল) জন্মাষ্টমী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ৫২৪৭তম জন্মাষ্টমী। কারণ, বিভিন্ন পুরাণ ও প্রাচীন গ্রন্থ মতে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ১২৫ বছর প্রকট লীলাবিলাস করেন। ১২৫ বছর ধরাধামে অবস্থান করে বৈকুন্ঠে গমন করেন। মাঘ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে তিনি ইহধাম ত্যাগ করে অন্তর্ধান করেন। সেই দিনই কলি প্রবেশ করে। সেই দিন ছিল শুক্রবার। খ্রিস্টপূর্ব ৩১০১ সালে কলিযুগ আরম্ভ হয়। বর্তমান ২০২১ খ্রিস্টাব্দ। তা হলে কলির বয়স ৩১০১+২০২১=৫১২২ বছর। শ্রীকৃষ্ণের অর্ন্তধানের দিন কলির আবির্ভাব। শ্রীকৃষ্ণ ১২৫ বছর প্রকট লীলা করেছেন। তা হলে শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ৫১২২+১২৫=৫২৪৭ বছর পূর্বে হয়েছিল।
জন্মাষ্টমী, হিন্দু ধর্মের কাছে, এটি একটি বিশেষ দিন। এদিন ভগবান কৃষ্ণকে বালক গোপাল রূপে পুজো করা হয়। হিন্দু ধর্মে এই দিনটির তাৎপর্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভগবান কৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল ভাদ্রমাসের কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টমী তিথিতে। রোহিনী নক্ষত্রে শ্রী কৃষ্ণের জন্ম হওয়ায় এই বিশেষ দিনটিতে তাঁর জন্মদিন হিসেবে পালিত হয়। চলতি বছর ৩০ অগাষ্ট এই তিথি, জেনে নিন এই বিশেষ দিনের শুভক্ষণ।
এই বিশেষ দিনে রোহিনী নক্ষত্র শুরু হচ্ছে ঠিক সকাল ৬টা বেজে ৩৯ মিনিটে। সোমবার ৩০ অগাস্ট ভোর থেকেই শুরু তিথি। যা শেষ হচ্ছে ৩১ অগাস্ট মঙ্গলবার সকাল ৯টা বেজে ৪৪ মিনিটে। অষ্টমী তিথি শেষ হচ্ছে সোমবার রাত ১ টা ৫৯ মিনিটে। রোহিনী নক্ষত্রের উপস্থিতিতেই এই পুজো শুভ। তার মাঝেও পঞ্জিকা অনুযায়ী সোমবার বেলা ১১টা ৫৯ মিনিট থেকে ১২টা ৪৪ মিনিট পর্যন্ত থাকছে শুভ যোগ। তবে মঙ্গলবার সকাল ৯টা বেজে ৪৪ মিনিট পর্যন্ত এই ব্রত পালন করা যাবে।
অভয়নগরে শ্রীকৃষ্ণের ৫২৪৭তম শুভজন্মষ্টমীর উৎসব পালিত হয়েছে। নওয়াপাড়া কালীবাড়ি মন্দির স্থাপনের পর হতে ৩০ আগষ্ট ২০২১ সোমবার সকালে নওয়াপাড়া কালিবাড়ী মন্দির প্রাঙ্গণে শ্রীকৃষ্ণের ১৪২৮তম শুভজন্মষ্টমী উৎসব পালিত হয়। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণা অষ্টমীতে মথুরার কারাগারে এই দিনে জন্ম নিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ।
সেই উপলক্ষে গোটা দেশে পালিত হচ্ছে জন্মাষ্টমী দিন প্রথা মেনে , নওয়াপাড়া কালীবাড়ি পূজা মন্দিরে কাঠামো পুজো দিয়ে শুরু হয়। এসময় শ্রীকৃষ্ণর জীবনি নিয়ে আলোচনা করেন ডঃ মিলন কুমার বস। পূজা অর্চণা শেষে, ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতারন করা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পারিষদের অভযনগর উপজেলা সভাপতি বিষ্ণুপদ দত্ত, সাধারণ সম্পাদক সুশান্ত কুমার দাস শান্ত(মেয়র) নওয়াপাড়া পৌরসভা ,নওয়াপাড়া পৌর শাখার সভাপতি শ্রী রবীন অধিকারী(ব্যাচা) ,সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিত দাস সঞ্জীত।
নওয়াপাড়া মহা শ্মশানের সাধারণ সম্পাদক তাপস কুন্ডু, নওয়াপাড়া কালিবাড়ী সাধারণ সম্পাদক শংকর সিংহ, জেলা হিন্দু ছাত্র মহাজোটের সভাপতি শিশির বিশ্বাস, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কৃষ্ণ রায় সকল ভক্তবৃন্দরা।
দেবকী ও বাসুদেবের সন্তান কৃষ্ণ। ভাদ্রমাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে মথুরায় জন্ম হয় তাঁর। সেই সময় মথুরার রাজা ছিলেন দেবকীর ভাই কংস। তাঁকে ভবিষ্যবাণী করা হয়েছিল, দেবকী ও বাসুদেবের অষ্টম পুত্র তাঁকে হত্যা করবে। কথিত আছে, কংস তাঁর বোন ও ভগ্নি-পতীকে ভালোবাসতেন। কিন্তু, তাঁদের অষ্টম পুত্র তাঁকে হত্যা করবে, এই ভবিষ্যবাণী শোনার পর তাঁদের সব সন্তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্তনেন কংস।প্রথম ছয় সন্তাকে হত্যা করতে সক্ষমও হন। সপ্তম সন্তানের হদিশ পাননি কংস। অষ্টম সন্তন, অর্থাৎ কৃষ্ণের জন্মের সময় গোটা রাজ্য ঘুমিয়ে পড়েছিল। বাসুদেব গোপনে সেই সন্তানকে বৃন্দাবনের নন্দ বাবা ও যশোধা মাতাকে হস্তান্তরিত করেন।
এদিকে বৃন্দাবনে বেড়ে ওঠে কৃষ্ণ। সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর কোনও ধারণা ছিল না। যখন আরও বড় হয়ে ওঠেন, গোটা বিষয়টি তিনি শোনেন। তার পর সোজা মথুরা চলে আসেন। এখানে এসে কংসকে হত্যা করেন। দেখা হয় মা-বাবা দেবকী ও বাসুদেবের সঙ্গে।
মন্দিরে কাঠামো পুজো দিয়ে শুরু হল দেবী দুর্গার আবাহন।