ক্ষমতার দাপটে কলঙ্কিত ছাত্র রাজনীতি

ক্ষমতার প্রশ্রয়ে থেকে ছাত্রলীগের খুন, সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ছাত্র রাজনীতির অতীত ঐতিহ্যকে কলঙ্কিত করছে। বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর সারা দেশে নিন্দার ঝড় উঠলেও তারা শিক্ষা নেয়নি। ফলে একের পর এক কলঙ্কিত ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে শাসক দলের এই ছাত্র সংগঠন। সর্বশেষ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মানসিক নির্যাতনে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যু ঘটেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ ৯ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আর এ ঘটনার পর আবার সরকারের ক্ষমতাশ্রয়ী ছাত্র রাজনীতি বন্ধের ইস্যুটি সামনে চলে এসেছে।
ড. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনার পর কুয়েটের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সিসিটিভির ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্য পর্যালোচনা করে বিষয়টির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তাই অসদাচরণের আওতায় সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষার্থীদের সাময়িকভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ৩০ নভেম্বর বিকাল ৩টার দিকে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান কুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ও লালন শাহ হলের প্রভোস্ট ড. মো. সেলিম হোসেন। এরপর অভিযোগ ওঠে, ছাত্রলীগের নেতাদের মানসিক নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। তারা কুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানান। এমন পরিস্থিতিতে ৩ ডিসেম্বর কুয়েট বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে বাধ্য করা হয়।
কুয়েটের লালন শাহ হলে সম্প্রতি ডিসেম্বর মাসের খাদ্য ব্যবস্থাপক (ডাইনিং ম্যানেজার) নির্বাচন নিয়ে কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান প্যানেলের বিরুদ্ধে নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রভাবিত করার অভিযোগ ওঠে। ওই প্যানেলের সদস্যরা তাদের মনোনীত প্রার্থীকে নির্বাচিত করার জন্য হলের প্রভোস্ট ড. সেলিম হোসেনকে নিয়মিত হুমকি দিয়ে আসছিলেন। ৩০ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ ক্যাম্পাসের রাস্তা থেকে ড. সেলিম হোসেনকে জেরা করা শুরু করে। পরে তার ব্যক্তিগত কক্ষে (তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) প্রবেশ করে। একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তারা আনুমানিক আধাঘণ্টা ওই শিক্ষকের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে। এতে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন ও অসুস্থ হয়ে যান। ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর দুপুর আড়াইটার দিকে প্রফেসর ড. সেলিম হোসেন বাসভবনে গিয়ে টয়লেটে ঢোকেন। দীর্ঘসময় অপেক্ষার পর তার স্ত্রী লক্ষ করেন তিনি টয়লেট থেকে বের হচ্ছেন না। পরে দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গত এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের কারণে সামগ্রিক ছাত্র রাজনীতির ব্যাপারে একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। কুয়েটের এই ঘটনার আগে বুয়েটের আবরার হত্যার লোমহর্ষক ঘটনা দেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এরপরও ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে জাতীয় দৈনিকগুলোয় নিয়মিত শিরোনাম হতে দেখা যায়। কোনো রিপোর্টে থাকে রামদা-চাপাতি-কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত করার ঘটনা, কোনোদিন হয়তো হাতুড়ি-রড-লাঠি দিয়ে পেটানোর খবর বের হয় সংবাদপত্রে। আরেকদিন খবর পাওয়া যায় স্কুলছাত্রদের হেলমেট বাহিনীর পেটানোর বিষয়। ছয়তলার ছাদ থেকে প্রতিপক্ষকে ফেলে দেওয়া অথবা চলন্ত ট্রেন থেকে প্রতিপক্ষকে ফেলে দিয়ে হত্যার খবরও বের হয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। অধ্যক্ষকে লাথি দিয়ে কলেজ থেকে বের করে দেওয়ার, অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলে দেয়ার খবরও বের হয়েছে বিভিন্ন সময়। শিক্ষকের বুকে ধাক্কা দেয়ার, শার্টের পকেট ছিঁড়ে ফেলার, প্রতিবাদী শিক্ষকদের ওপর হামলা করার খবরও বের হয়েছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। ছাত্রী নিপীড়ন, ধর্ষণের শিরোনামও আছে। কমপক্ষে দুজন উপাচার্য শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ ঠেকানোর জন্য ছাত্রলীগকে ডেকে এনেছেন মর্মে সংবাদপত্রে খবর বের হয়েছে। ছাত্রলীগ এসে আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের পিটিয়ে আহত করেছে। ভিসিদ্বয় ছাত্রলীগকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
শিক্ষাঙ্গনে ধর্ষণের ঘটনা এখন অনেকটাই সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অনিবার্যভাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম চলে আসে। ১৯৯৮-৯৯ সালে ধর্ষণ ঘটনায় দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। তৎকালীন জাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন মানিক ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এই নেতা ধর্ষণের সেঞ্চুরি উৎসব পালন করেছিল। প্রথম দিকে ধর্ষণের অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্বীকারই করতে চায়নি। ‘তথ্য নেই’, ‘প্রমাণ নেই’, ‘গুজব’ আখ্যা দিয়ে ধর্ষণের ঘটনা চাপা দেওয়ার মতো কলঙ্কজনক নজির তৈরি করে জাবি প্রশাসন। সেই কলঙ্কের ইতিহাস চাপা দিয়ে গৌরবের সূচনাপর্ব রচনা করেন জাবি শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্দোলনের কারণে বাধ্য হয়ে মানিকদের শাস্তি দিলেও, রাষ্ট্রীয় আইনে তাদের বিচার হয়নি। মানিককে নিরাপদে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। মানিক বিদেশে চলে গেছে, রেখে গেছে তার অপকর্মের ধারাবাহিকতা। দশক দুয়েক ধরে তা ধারণ করে যাচ্ছে ছাত্রলীগ। সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে ছয়জনের সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের ঘটনায় ছাত্রলীগ আবার আলোচনায় আসে। ছাত্রলীগের সেই গৎবাঁধা বক্তব্য থাকে, অভিযুক্তরা আমাদের সংগঠনের কেউ না, তারা অনুপবেশকারী।
বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে ছাত্রলীগের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি উঠেছে সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের কাছ থেকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র রাজনীতি দরকার। তবে সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা ছাত্র রাজনীতির জন্য কোনোভাবেই কল্যাণকর হতে পারে না। তাদের মত, সরকারি দলের যে দলগত রাজনীতি, সেটা বন্ধ করা জরুরি। এটার চেয়েও বেশি জরুরি  শিক্ষকদের দলীয় রাজনীতি। এই শিক্ষক রাজনীতি টিকে থাকলে তা ছাত্র রাজনীতিকে নিজেদের টিকে থাকার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দলীয় রাজনীতির ছত্রছায়া বন্ধ করা গেলে গেস্টরুম কালচার, গণরুম ও র‌্যাগিংয়ের নামে ভয়ংকর নিপতৃণ বন্ধ করা সম্ভব বলে অনেকের অভিমত।
আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ব্যাপক ক্ষোভ ও ধিক্কার ওঠে বাংলাদেশে। তাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় যে কয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের বেশিরভাই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা। সেসময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছিলেন, ছাত্র রাজনীতিতে যদি উৎকর্ষতা না আসে, যে ছাত্ররা রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত, তারা যদি শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ ভালো বজায় রাখতে না পারে বা তারা যদি ছাত্রদের কল্যাণে কাজ করতে না পারে, তাদের সম্পর্কে মানুষের একটা নেতিবাচক ধারণা চলে আসবে।
বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার পর প্রকাশ্যে আসে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টর্চার সেল থাকার বিষয়টি। হত্যা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি হেন কোনো অপরাধ নেই, যে ধরনের অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে আসছে না। দেশের বিভিন্ন স্থানে মূল দলের নেতারাই ছাত্রলীগকে তাদের অপকর্মের লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহার করার খবর প্রকাশ হয়। বুয়েটের যে ছাত্ররা সহপাঠী আবরারকে পিটিয়ে মারে, তারা সবাই একসময় এলাকায় নম্র, ভদ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। সেই মেধাবী ছাত্রগুলো কীভাবে বুয়েটে এসে এমন খুনি হয়ে গেল, সে প্রশ্ন ওঠে। এজন্য দায়ী করা হয় ছাত্রলীগের কালচারকে।
ড. মোহাম্মদ হান্নান বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির একজন গবেষক। ধারাবাহিকভাবে ছাত্র রাজনীতির ওপর গবেষণা করছেন তিনি। ‘বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস’ নামে এ পর্যন্ত তার ১০ খণ্ডের বই বের হয়েছে। সরকারি চাকুরে এই গবেষক অবসরে গিয়েও তার গবেষণা অব্যাহত রেখেছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতা পর্যন্ত ছাত্র আন্দোলন ছিল সামাজিক, সাংস্কৃতিক গণতন্ত্র এবং রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের। আমরা যদি শুরুর দিকটা দেখি, তাহলে দেখবো তখন শিক্ষার হার তেমন ছিল না। সুশীল সমাজ গড়ে ওঠেনি। ছাত্ররাই ছিল সমাজের আলোকিত অংশ। তাই তারাই পথ দেখানোর চেষ্টা করেছে। তারা পরাধীনতার বিরুদ্ধে, স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, সামাজিক সংস্কারের আন্দোলন করেছে, শিক্ষার জন্য আন্দোলন করেছে। আন্দোলন করেছে সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে। তখন ছাত্র আন্দোলনে কোনো বৈষয়িক লাভের বিষয় ছিল না। আর এখন ট্রেন্ড হলো, যে দল ক্ষমতায় থাকে, তাদের ছাত্র সংগঠনই প্রভাব বিস্তার করে। ছাত্র সংগঠগুলো দলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকায় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন প্রভাব বিস্তার করতে সব সহযোগিতা পায় এবং তারা নানা ধরনের সুবিধা পায়।”
পিটিয়ে আবরার ফাহাদকে নৃশংসভাবে হত্যার পর সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) সাংগঠনিক রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ দৃষ্টান্ত দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়া হলে শিক্ষাঙ্গনে সুষ্ঠু পরিবেশ ধীরে ধীরে ফিরে আসবে বলে মনে করেন অনেক শিক্ষাবিদ। তারা বলছেন, বুয়েট কর্তৃপক্ষের নেওয়া সিদ্ধান্তটি পর্যালোচনা করে কিছুদিনের জন্য হলেও সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা উচিত।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্ররাজনীতি মোটেও ভালো কিছু দিচ্ছে না। নৃশংসতা, বর্বরতা, হানাহানি চলছে। অসুস্থ ছাত্র রাজনীতি শিক্ষাঙ্গনকে গ্রাস করে ফেলেছে। ছাত্র রাজনীতির নামে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্ম হচ্ছে। ভিন্নমতের ওপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে। দেশের মানুষ হানাহানির ছাত্র রাজনীতি আর দেখতে চায় না।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় মুক্তচিন্তার চর্চা হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে রাজনীতির নামে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। এই অবস্থা দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় ও বড় কলেজগুলোয়। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা পরিণত হয়েছে প্রতিপক্ষ দমনের পেটোয়া বাহিনীতে। শুধু প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাই নন, সাধারণ শিক্ষার্থীরাও তাদের প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন। রাজনৈতিক পরিচয় না থাকলে বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরারকে পিটিয়ে হত্যার সাহস কেউ পেত না।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, ছাত্রনেতৃত্বের বিকাশ এবং অন্যায়ের প্রতিবাদে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে ছাত্র সংসদ। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে এবং সেই নির্বাচনে দলীয় রাজনীতির প্রভাব না থাকলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে উঠবে।
আবরার হত্যার পরপর বুয়েটে শিক্ষক ও ছাত্র রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছিলেন জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। তখন তিনি বলেছিলেন, এটি একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ায় বুয়েটে শিক্ষার পরিবেশের উন্নতি হবে। এই সিদ্ধান্ত বুয়েটের সার্বিক উন্নয়নে সহায়তা করবে।
তিনি তখন বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গ সংগঠন হিসেবে ছাত্র রাজনীতি ভালো কিছু বয়ে আনেনি। ভিন্নমতের কেউ কিছু বললেই অত্যাচার চালানো হয়। তিনি বলেন, ছাত্রদের ওপর এমন অত্যাচারের ঘটনা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই ঘটছে। সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গ সংগঠন হিসেবে ছাত্র ও শিক্ষকদের রাজনীতি বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় একটা সার্বিক শিক্ষার পরিবেশের উন্নতি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বিভিন্ন শিক্ষাকার্যক্রম আরও মজবুতভাবে পরিচালনা করা যাবে। তবে এই সবকিছুই আসলে নির্ভর করে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলেই কেবল কার্যকর প্রতিফলনগুলো দেখা যাবে।
জামিলুর রেজা চৌধুরী এখন নেই। কিন্তু তার উপলব্ধি এখনো জাগ্রত রয়েছে।  ছাত্র রাজনীতির চেয়ে বড় সমস্যা হলো তাদের দলের স্বার্থে ব্যবহার করা। ছাত্র সংগঠনগুলোকে মূল দলের রাজনৈতিক নেতারা নিয়ন্ত্রণ করেন। ছাত্র রাজনীতির নামে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি চলে। এটি বন্ধ করতে রাষ্ট্রের যে ধরনের সক্রিয়তা প্রয়োজন, সেটি নেই।
বর্তমানে দেশের রাজনীতিতে যে ধারা চলছে, তাতে ছাত্র সংগঠনগুলোকে মূল দলের অনুগত হতে হয়। এই ধারার ছাত্র রাজনীতিতে অব্যবস্থাপনা, দুর্বৃত্তায়ন, টেন্ডারবাজি, ক্ষমতাকে উপভোগ করার সব বিষয় চলে আসে। ক্ষমতা প্রদর্শন ছাত্র রাজনীতিকে নষ্ট করে দিয়েছে। এই ছাত্র রাজনীতিতে জনসেবার আদর্শ নেই। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। শিক্ষাবিদরা এমনটাই মনে করেন।

Please follow and like us:

Check Also

২৮শে এপ্রিল খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শনিবারেও ক্লাসের পরিকল্পনা

আগামী ২৮শে এপ্রিল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য সব রকমের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।