মুজাহিদুল ইসলাম, ক্রাইমবাতা রির্পোট: সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় পতিত জমিতে শোভা পাচ্ছে পানিফল। যেসব জমি বছরের পর বছর জলাবদ্ধ থাকত সেই সব জলাশয়ে এখন সবুজের সমারোহ। অধিক লাভ হওয়ায় প্রতিবছর এর পরিধিও বাড়ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য নারী ও পুরুষের। তবে সময় মত বৃষ্টিপাত না হওয়াতে এবছর মটরের সাহায্যে পানি তুলে পানি ফল চাষ করতে হয়েছে। ফলে অন্য বারের তুলনায় এবার বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ন্যার্য মূল্য না পেলে পানি ফল চাষে এবার ক্ষতির আশঙ্কা করছে চাষীরা। তবে গত কয়েক বছর ধরে পানিফল চাষ করে সফলতা পেয়েছে এখানকার অনেক চাষি। ফলে চীনের খাদ্যতালিকার জনপ্রিয় এই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাদ্যপণ্যটি এখন সাতক্ষীরায় বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে। সুস্বাদু এ ফলটি এখন জেলার কালীগঞ্জ, দেবহাটা, সাতক্ষীরা সদর ও কলারোয়াসহ বিভিন্ন উপজেলায় চাষ হচ্ছে জোরে সরে। বিশেষ করে সাতক্ষীরা কলারোয়া সড়কের দুধারে উপজেলার খাল- বিল জলাশয় জুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে পানিফলের গাছ। সাতক্ষীরায় উৎপাদিত ফলটি এখন জেলার চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। চাষিরা অক্লান্তপরিশ্রম আর গবেষণা করে জলাবদ্ধ জায়গা সোনার ফসলে রূপ দিয়েছে। তাদের প্রেরণা দিয়ে যাচ্ছে জেলা কৃষিখামার বাড়ি। অতি পরিচিত পানিফলটি শুধু গ্রামেই নয় শহরের ফুটপাতের ফলের দোকানে স্থান করে নিয়েছে। সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ মহাসড়কের সখিপুর, ডেল্টা মোড়, কালিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন সড়ক, সাতক্ষীরা শহরের খুলনা রোড মোড়, পাকাপোল ব্রিজ, বড় বাজার সহ, সাতক্ষীরা কলারোয়া সড়কের দুধারে, সহ জেলার সব খানে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি হচ্ছে পানিফল। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পানিফল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা।প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২৫শত টাকায়।
তবে পানিফল চাষে সফলতা আসায় জলাবদ্ধ যুক্ত সাতক্ষীরা জেলায় বাণিজ্যিক ভাবে এর চাষ শুরু হয়েছে আরো কয়েক বছর আগে থেকেই। পানি ফল দেখতে অনেকটা সিঙ্গাড়ার মতো বলে সাতক্ষীরার লোকরা একে ডাকে সেঙ্গারা ফল নামে। কাঁচা অবস্থায় এ ফল খাওয়ার প্রবণতা বেশি। আবার সিদ্ধ করে, রান্না করে কিংবা প্রক্রিায়াজাত করেও অনেকে খেয়ে থাকে। দেবহাটা উপজেলার কামটা গ্রামের শাহিনুর রহমান। তিনি পানি ফলের পাইকারি ব্যবসায়ী। তিনি জানান, পানি ফল চাষের মৌসুম আসার আগেই অর্ধ শতাধিক চাষিকে আমি বিনিয়োগ করেছি। ফলন আসার পর সেই চাষিদের নিকট থেকেই আমি ফল সংগ্রহ করছি।
কলারোয়ার গোপিনাথপুর গ্রামের ইয়াকুব্বর আলী চলতি মৌসুমে সাত বিঘা জমিতে পানি ফলের চাষ করেছেন। তিনি জানান, কয়েক বছর ধরে এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্ট হত। কোন ফসল হতো না। যার কারণে গত কয়েক বছর ধরে জলাবদ্ধ জমিতে পানিফল চাষ শুরুকরেছি। এতে বাড়তি লাভ হচ্ছে। খরচ কম আবার উৎপাদন ও বিক্রি বেশি। এবছর তিনি আড়াই লাখ টাকারও বেশি পানিফল বিক্রি করতে পারবে বলে তারা আশা।
পুষ্টি বিশেজ্ঞরা জানান, পানিফল যেমন শরীরের জন্য বেশ উপকারি। খেতেও সুস্বাদু। এই ফল শরীরের পুষ্টির অভাব দূর করে, ব্লাডপ্রেসার নিয়ন্ত্রণে করতে সাহায্য করে। পানি সিঙ্গারা চাষীরা জানান,সরকারি-বেসরকারি খাত থেকে ঋণ সহায়তা পেলে আরো অনেক মানুষ পানিফল চাষ করবে। এতে একদিকে নিজেরা যেমন স্বাবলম্বী হতে পারে তেমনি গ্রামীণ অর্থনীতিতেও অবদান রাখা সম্ভব হবে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে ১২০ হেক্টর জমিতে পানিফলের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ২১ হেক্টর, কলারোয়া উপজেলায় ২১ হেক্টর, তালা উপজেলায় দুই হেক্টর, দেবহাটা উপজেলায় ২৩ হেক্টর, কালিগঞ্জ উপজেলায় ৫০ হেক্টর, আশাশুনি উপজেলায় দুই হেক্টর ও শ্যামনগর উপজেলায় এক হেক্টর জমিতে। জেলায় ১৬শত জন কৃষক পানিফলের চাষাবাদ করেছেন বলে সূত্র জানায়। পানিফলের শুধু খাদ্যগুণই নয় রয়েছে ঔষধি গুণও।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ির সদ্য বিদায়ী উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম বলেন,পানিফল একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় সাতক্ষীরায় ফলটির চাষাবাদ বেড়েছে। কোনো চাষি কৃষি অফিসে যোগাযোগ করলে তাদের পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে। এছাড়া পানিফল চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সাতক্ষীরা সার্বাক্ষণিক সহয়তা করে যাচ্ছে।